অবশেষে আমরা ভাইরাল হলাম
মো. সাখাওয়াত হোসেন
|
একটা বছর এই চা খেতে খেতে চলে গেল। আফসোসের সুরে বলল আশিক। কত জনে কত কিছু করল। কত আউল-ফাউল ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল। সুন্দরী প্রতিযোগিতার ঐ২ঙ, হিরো আলমের নাচ, টিকটিকির ভিডিও...
ওইটা টিকটিকি না রে অশিক্ষিত, ওইটারে বলে টিকটক।
যা-ই হোক। আমরা একটা ভিডিও ভাইরাল করতে পারলাম না। রাজু চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে বলল।
পারবি ক্যামনে? সারা দিন তো আছস ফেসবুক আর মেসেঞ্জারে খালি মাইয়াদের পেছনে! ফোড়ন কাটলাম আমি। বললাম, চল, এখনো সময় আছে। আমরা কিছু একটা ভাইরাল করি।
কী ভাইরাল করবি? ব্যাঙের ছাতা? আশিক খেপে গেল।
এখন তো শীতকাল। মনে আছে, গতবার আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ খুব জনপ্রিয় হইছিল। চল, আমরা এ রকম কিছু একটা করি। ধর আশিক দাঁড়িয়ে থাকবি, আমরা তার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেব। রাজু প্রস্তাব দিল।
খালি আশিকের পেছনে কী? আশিক খেপে গেল।
আরে অন্য কারো কী দরকার, আশিক ভাই চমত্কার। আমরা আশিকের নামে স্লোগান শুরু করলাম।
তেলে কাজ হলো। আশিককে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে ওদের ছাদে নিয়ে গেলাম।
জাস্ট পানি ঢেলে দেব। ভিডিও হবে, এরপর তাড়াতাড়ি কম্বলচাপা দিয়ে দিবি। কোনো ভয় নাই।
ভয় নাই বললেই তো ভয় লাগে! আশিক চিন্তিত।
ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজু। আমি পেছনে বালতি হাতে। আশিক লুঙ্গি আর একটা গেঞ্জি পরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওয়ান, টু, থ্রি বলে দিলাম পানি ঢেলে। পানির তোড়ে স্বাভাবিকভাবেই আশিকের লুঙ্গি খুলে গেল। ভেতরে একটা কমলা রঙের হাফপ্যান্ট পরা ছিল বলে রক্ষা। নইলে এই ভিডিও ভাইরাল হইতে বেশিক্ষণ লাগত না। তবে এই ভিডিও আর দিতেই পারলাম না। আশিক সাফ মানা করে দিল। কমলা রঙের হাফপ্যান্ট দেখলে তার প্রেমটা ভেঙে
যেতে পারে।
পরদিন আবার সেই নুরুল হকের দোকানে।
অপরাধী গানটা করবি নাকি? এই গান করে তো অনেকেই ভাইরাল। তুই একটা চান্স নিবি? রাজুকে প্রস্তাব দিলাম। আমাদের মধ্যে রাজুর গানের গলা ভালো।
আরে না, সকাল থেকে গলাটা খুসখুস করছে দাদা। রাজু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।
হালার ভাব দেখ! লাথি বসিয়ে দিলাম একটা।
তোর কি একটা হনুলুলু না কী যেন গিটার আছে না? ওইটা নিয়ে আয়। রাজুকে বলল আশিক।
অশিক্ষিত বর্বর! ওইটা হনুলুলু না, ইউকেলেলে।
আচ্ছা, যা যা, নিয়ে আয়। লেলে ফেলে একই কথা।
রাজু গান চমত্কার গাইল। নুরুল হকের দোকানে যারা বসা ছিল, তাদের কয়েকজন হাততালি দিয়ে উঠল। ঝামেলা লেগে গেল অন্য জায়গায়। রাজুর সেই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার গার্লফ্রেন্ড তাকে ফোন দিয়ে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করল, কী ব্যাপার? এই গান গাওয়ার মানে কী? তুমি কি আমাকে অপরাধী বলা আরম্ভ করলা নাকি?
রাজু যতই বোঝাতে চেষ্টা করে, লাভ হয় না। ফলাফল আবার ভিডিও ডিলিট।
প্রেমিকারাই দেখি ভিডিও ভাইরাল না হওয়ার অন্তরায়। আমি চিন্তিত মুখে বললাম।
বাদ দে। ভাইরাল হওয়া আমাদের কপালে নাই। তার চেয়ে থার্টিফার্স্ট নাইটে পাড়ায় কী প্রগ্রাম করা যায়, সেটা বল।
এইবার নির্বাচনের জন্য নাকি থার্টিফার্স্ট নাইটে প্রগ্রাম বন্ধ?
কে যে বলে তোরে এসব কথা। আমাদের এলাকার লে পাগলা ব্যান্ডকে দিয়ে একটা কনসার্ট করে ফেলি, চল।
৩১ ডিসেম্বর রাতে আমাদের পাড়ায় লাইটিং-ফাইটিং করে আমরা প্রগ্রাম শুরু করে দিলাম। জমজমাট আয়োজন। আমাদের এলাকার কুখ্যাত ব্যান্ড লে পাগলা তাদের মৌলিক গান, যাবি যদি একা একা, দে দৌড় দে দৌড় শুরু করল।
গান শুরু করতেই কোথা থেকে পুলিশ এসে হেভি লাঠিচার্জ শুরু করল। স্টেজে তখনো গান চলছে, দে দৌড় দে দৌড়...। আর এদিকে পাবলিক হেভি প্যাঁদানি খাচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল রাজুর ফোনে।
কী হইছে? ঘুম জড়ানো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম।
তাড়াতাড়ি অনলাইনে যা। দেখ কী হইছে!
প্রথমেই ফেসবুকে লগইন করে দেখলাম, কাল রাতে আমাদের প্রগ্রামের একটা ২ মিনিটের ভিডিও।
লে পাগলা ব্যান্ডের দে দৌড় দে দৌড় গানের সঙ্গে সঙ্গে সবাই দৌড়াচ্ছে। পুলিশের লাঠিচার্জ, এদিকে ব্যাকগ্রাউন্ডে তুমুল গানএক অন্য আমেজ। আমাদেরও দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে। পুলিশের লাঠি পড়ছে পশ্চাদেদশ বরাবর আর আমরা তিড়িংবিড়িং গঙ্গা ফড়িংয়ের মতো লাফাচ্ছি। সেই ভিডিওর মধ্যেই শেয়ার হয়েছে লাখের ওপর।
অবশেষে আমরা ভাইরাল হলাম। তবে এভাবে হোক কেউ চাইনি।
কালের কন্ঠ থেকে সংগৃহিত গল্প...
Tags:
Bangla Jokes
Bengali Stories
Funny Jokes
Hasir Golpo
Kishor Golpo
Love Story
Valobasar Golpo
কিশোর গল্প
ভালোবাসার গল্প