গল্পঃ মেয়েটা দেখি অনেক জ্বালাবে
লেখকঃ মেঘ
ছাদের সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে আছি। কয়েকদিন থেকে ঘ্যাঁটঘাঁট ধরনের বিচিত্র শব্দ করে ঘুরছে। বাসার ছাদের সিনিং থেকে রঙ খসে পরচে পলেস্তারা বেড়িয়ে পরছে। দেখলে কেমন হার জিরজিরে রুগি মনে হয়। তবুও আমার কাজ হচ্ছে নিয়মিত ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। সিলিং এর সাথে নিজেকে মেলাতে খুব ভালো লাগে। জীবনটা কেমন রংবিহীন হয়ে যাচ্ছে। চিন্তা করছি বাসাটায় রং করাতে হবে। কিন্তু এতো টাকা কই পাওয়া যাবে। মাত্র তো দুই তিনটা টিউশানি পড়াই তাতে কোনো মতো খাওয়ার টাকা টা পাওয়া যায় বলতে গেলে। চিন্তায় দাড়িতে হাত বুলাচ্ছি। কয়েকদিন এর না কাটানো দাড়ি বেশ বড় হয়ে গেছে। তাই একপ্রকার মায়া পরে গেছে এগুলোর উপড়ে। একটা লম্বা চুলের মাথা দরজা খুলে উকি দিলো, সেদিকে না তাকিয়ে বললাম,
- ভিতরে আয়।
- ভাইয়া তুই আমাকে না দেখেই কিভাবে বুঝতে পারলি যে আমি? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে নিহা।
নিহা আমার চাচাতো বোন। আমার মরহুম বড় চাচা জনাব আকবর আলীর বড় মেয়ে। উনি জীবিত অবস্থায় দুই মেয়ের জনক ছিলেন। বড় মেয়ে নিহা, ছোট মেয়ে রিহা। বড় ছোট দুই মেয়েই আমাকে বেশ ভয়ই পায় আবার ভালোও বাসে।
- তা বলতে পাড়িস আমার কিছু সুপার ন্যাচারাল ক্ষমতা আছে, আমি নিহার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম।
- দেখ ভাইয়া তুই আমার সাথে হিমু গিরি ফলাবি না। মুখ ঝাপটে বলে সে।
- আচ্ছা ঠিক আছে তোর সিরিয়াস কথা বলে, এখান থেকে বিদায় হয়ে যা।
- ভাইয়া বাসায় বাজার নেই, মা তোকে বাজারে যেতে বলল।
- ও আচ্ছা, তুই বাজারের ব্যাগ নিয়ে আয় আমি রেডি হয়ে নেই, সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললাম আমি।
- আচ্ছা, আর তুই কিন্তু মনে করে রিহার ছড়ার বইটা নিয়ে আসবি বেচারি কয়েকদিন থেকে কেঁদে চলছে। মুখ দিয়ে আহ শব্দ করলো নিহা।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আর হ্যা তোর বান্ধবী কি যেন নাম, আমি প্রশ্নবোধক দৃস্টিতে নিহার দিকে তাকালাম।
- নিতু, কিন্তু কি হয়েছে? নিহা আমার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকায়।
- ও হ্যা নিতু, ওকে বাধা করে দিবি যেন আমার ত্রিসীমানায় না আসে। সেদিন দেখলাম আমার ঘরে এসে ঘুরাঘুরি করছে।
- তো কি হয়েছে, হেসে উঠে নিহা।
- কি হয়েছে মানে! আমি এসব পছন্দ করি না কিন্তু। যদি বাধা করতে না পারিস, তাহলে তুইও আমার ঘরে ঢুকবি না, আর এখন ফেচফেচ বাদ দিয়ে পড়তে বস গিয়ে। কঠিন স্বরে বললাম।
নিহা ব্যাজার মুখে চলে গেলো। আমি আবার সিলিং এর দিকে মনযোগী হলাম। এই নিতু মেয়েটাকে আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না । নিতু হচ্ছে নিহার বান্ধবী। মাঝে মাঝে দেখি নিহার সাথে আসে। ভালো কথা কিন্তু দেখি আমার ঘরের দিকে উঁকিঝুঁকি দেয়। আমি মেয়েদের এই স্বভাব একদম পছন্দ করি না। তবে আগে করতাম। যেদিন থেকে রেহানা আমার সাথে মিস বিহেভ করছে সেদিন থেকে মেয়েদের একদম ভালো লাগছে না। রেহানাকে প্রপোজ করছিলাম। কিন্তু বড় লোক বাবার অহংকারী মেয়ে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি কি নাকি বলছি। হেসে হেসে আমাকে কয়েক প্রকার বাশ দিলো। আমি ও হেসে হেসে সব শুনে গেলাম। শুধু মাত্র কান গুলো একটু লাল হয়ে গেছিলো। বলে কি না, আমার কিছু নাই, ভার্সিটিতে নাকি আহাম্মক এর মতো ঘুরে বেড়াই, আরো অনেক কিছু। আমি নাকি গরিব, এক শার্ট দুই তিনদিন পড়ে থাকি! কিন্তু মেয়ে তো জানে না। তোমার মতো কয়েকজন মেয়েকে আমি কিনে রাখতে পারি। এমন ক্ষমতাও আমার আছে। না, আমার বলা যাবে না অবশ্য আমার বাবার আছে।
হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় হাটছি। বাসায় বড় মুখ করে বলে আসছি, পকেটে টাকা আছে। কিন্তু আসলে আমার পকেটে এক টাকাও নাই। চিন্তায় আছি কি করা যায়? বদরুল এর কাছে পাওয়া যেতে পারে। ও শালায় আবার একটু ধান্ধায় থাকে, তাই পকেট সব সময় গরম থাকে। কিন্তু আমি যে সময়ে বেড় হয়েছি ওকে এই সময় পাওয়া যাবে না মনে হয়। বাবার কাছে যাওয়া যায় কি? কিন্তু উনি কি এই সময় অফিসে আছেন? আকাশপাতাল চিন্তা করছি। কখন যে একটা পাজেরো আমার পিছনে দাঁড়িয়ে পিপ্পপিপ্প করে হর্ন দিচ্ছে বুঝতে পারি নাই। কষে মুখ খারাপ করে একটা গালি দিতে ইচ্ছে করছে। মুখে ঘুরিয়ে দেখি গাড়ির জানালা দিয়ে অতি ফর্শা এক মহিলা হাত ইশারা করে আমাকে ডাকছে। চেনা চেনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছি না। কাছে এগিয়ে গেলাম। উনি দরজা খুলে দিলেন। আমি ও কিছু চিন্তা না করে উঠে পরলাম। মাথার উপরে করা রোদ। এসির ভিতরে গা টা একটু ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে আপনা থেকে আহ শব্দ বেড়িয়ে এলো। এতোক্ষণ এ মহিলার দিকে চোখ পরল। উনি আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন। আমিও দাত বেড় করে হাসি দিলাম। আসলে খুব চেনা লাগছে। মহিলাটি বললেন,
- কেমন আছো?
- জ্বী ভালো, গাড়ির এসিটার দিকে তাকিয়ে বললাম।
- এতো রোদে কোথায় যাচ্ছিলে? আর তোমার গায়ে এতো গন্ধ কেন? এখনো আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।
- এইতো বাজারে যাচ্ছি আর কি, একটা শার্ট দুদিন এই গরমে পরে থাকলে এমনিতেই গন্ধ ধরে, ঠোট উল্টিয়ে জবাব দিলাম।
- আচ্ছা তুমি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছো কেন, ফারহান? আমাকে চিনতে পারছো না! আমি তোমার মা, উনি এবার সিরিয়াস হয়ে বললেন।
আমার এতক্ষণ এ মনে পরল, ইনি আমার মা। এইজন্য এতো চেনা চেনা লাগছে। আমি মাথা নেড়ে বললাম,
- হুম এবার চিনেছি।
- এবার চিনেছ মানে, তোমার নিজের মাকে তুমি চিনবে না মানে এ কেমন কথা। মায়ের কথায় রাগ ফুটে উঠলো।
আমিও উদাস কণ্ঠে বললাম,
- আসলে আপনাদের বিয়ের ছবিটা আমার কাছে ছিল, কিন্তু বেশ কয়েক মাস হয়ে গেলো খুজে পাচ্ছি না।
- কেন, জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
- আসলে অনেক চিন্তা করে দেখলাম যে, আপনারা তো আলাদাভাবে থেকে ভালোই আছো। তাই ভাবলাম ছবিতেও কেন আলাদা থাকবে না। তাই ছবিটা কেটে তিনভাগ করেছি। আপনাদের দুজনের দুই ভাগ কই যে রাখছি মনে নাই, শুধু আমার ভাগটাই টেবিলে সাজিয়ে রেখেছি। হাজার হলেও তো আমার আমিকে তো ছেড়ে কোথাও যাব না। বলে মায়ের দিকে তাকালাম।
উনি আমামার দিকে তাকিয়ে আছেন অবাক দৃস্টিতে। মনে হয় যেন আমাকে পাড়লে কষে থাপ্পড় মারবেন। কিন্তু তা না করে আস্তে করে বললেন,
- তুমি নেমে যাবে এখন, আর ভবিষ্যৎ এ এইরকম কথা আমার সাথে বলার চেষ্টা করলে ঠাটিয়ে চড় মেড়ে গাল লাল করে দিবো। ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বললেন।
আমি দেতো হাসি দিয়ে আম্মুকে বললাম,
- আম্মা, আসলে আমার পকেট এ কোনো টাকা নাই। বাজার যেতে হবে, তাই বলছি যদি কিছু টাকা দিয়ে হেল্প করতেন।
আম্মা আমার দিকে তাকিয়ে পার্স থেকে কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট দিলেন। আমি লম্বা সালাম ঠুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
এতক্ষণ গাড়িতে বেশ আরামেই ছিলাম বেড় হতেই গরমা গরম হাওয়া আমায় গ্রাস করে নিলো। এসিতে থাকার এই এক ফালতু কারণ। পকেট এ হাত দিতে চেক করে নিলাম টাকাটা আছে কি না। খুশি মনে বাজার এর পথে হাটা দিলাম।
আমার মা বিরাট বড়লোক এর মেয়ে। আমার বাবাও কম যান না কিন্তু। বাবার দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে উনি বেশ লেখাপড়াই শিখে অনেক বড় বিসনেস ম্যান। আমার মায়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতে ই উনাদের মাঝে হঠাৎ ভুল বুঝাবুঝি, মাঝ খান থেকে আমি বলির পাঠা হিসেবে ঝুলে আছি। ভাগ্যিস বড় চাচা আমায় সেসময় নিয়ে এসেছিলো জোড় করে। না হলে আজকে আমি ঝুলেই থাকতাম। তবে মাঝে মাঝে বাবার সাথে গল্প করতে যাই উনার অফিসে। মায়ের কথা বললে চুপ করে থাকে, মাঝে মধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আমাকে কফি খেতে দিয়ে উদাস নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, ' বুঝলি ফারহান তোর মা খুব ভালোবাসে রে আমায়। ' আমি ও বাবার চেয়ে অনেক বড় শ্বাস ফেলে বলি, বাবা তুমি মাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসতে পারলে না কেন? ' তোর মা খুব জেদি রে, আমার কোনো কথাই শুনেনি সেইদিন।' আচ্ছা বাদ দে, তোর খবর কি বল? হঠাৎ আমাকে নিয়ে পরে বাবা। এইতো চলছে আর কি বাবা। ' দাদা তো মারা গেলো ওদের চলে কিভাবে, তোকে কতবার বললাম, আমার কোম্পানিতে জয়েন কর শুনলি না।' বাবা, আম্মুও কিন্তু এই কথা আমাকে বলেছেন, যদি শুনতে পান তুমি আমাকে অফার করেছো তাহলে আমি শেষ, বলে গলায় পোচ দেওয়ার ভঙ্গি করলাম। ' হুম, তা যা বলেছিস, বাবা হাসতে হাসতে বলে।
আমার অনেক ইচ্ছে করে বাবা মায়ের সাথে থাকতে। মায়ের সামনে বাবার কথা বলি না। উনি শুনলে রেগে ফেটে পরেন। আমার অনেক ইচ্ছে করে দুজনের সাথে থাকতে। আমার লাইফটা হয়ে গেছে লাইফবয় ময়। শুধু সিনেমা আর গল্পেই এসব মানায়। বাস্তবে আমাকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খুব কাছের কয়েকজন ছাড়া আমার এসব কথা কেউ জানে না। বদরুল জানে। সে আমার জানের দোস্ত। মাঝে মাঝে উদাস গলায় বলবে,
- তোর তো অনেক সুবিধা, মা বাবা দুজনেই বড়লোক। হালায় তুই যেখানেইই যাবি কপাল খুলে যাবে।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলবে,
- আচ্ছা ফারহান এক কাজ কর তুই তোর মায়ের কাছে চাকরি নে আমাকে তোর বাপের কোম্পানিতে একটা কাজ দে। বেয়াড়ার কাজ হলেও সমস্যা নাই, শালায় এই জীবন আর ভালো লাগে না।
আমি আস্তে করে হুম বলি। আর বদরুল এর সাথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। ও সিগারেট ফুকায় আর আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া, উঠতি বয়সের মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখি। এদের সাথে আবার একজন করে বয়ফ্রেন্ড নামের বডিগার্ড থাকবে। কিন্তু পিছন থেকে কোনো ভালো পোলা দেখলে উকি দিয়ে চোখ মেড়ে চলে যাবে। আর ততক্ষণ এ পোলার বুকে আগুন জ্বলবে। এই আগুনে আপনি ইট ও পোড়াতে পারেন। নির্ঘাত তা উন্নত মানের ইট হবে। ব্রিক টেস্ট মেশিন দিয়ে নাও ভাঙ্গতে পারে!
অস্থির হয়ে হাটাহাটি করছি কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ এর সামনে। মেইন রাস্তা দিয়ে হুস হুস করে কার, মাইক্রো, বাস বেড়িয়ে যাচ্ছে। আগে হলে চার, ছ চাকায় চালিত যান বাহন গুলো বেশ আয়েশ করেই দেখতাম। কিন্তু এখন আমার মাথায় আলাদা কিছু ঘুরছে। কিছুতেই অন্যসব কাজে মন বসাতে পারছি না। বারবার কলেজ এর গেটটার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার তাকানো দেখে গেটের দারোয়ান মামাও সন্দেহ টাইপ লুক নিয়ে তাকাচ্ছে চোখ পিটপিট করে। আমি এখন নিতুদের কলেজ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঝামেলাপূর্ণ আমার এ জীবন। তাই ঝামেলা ছাড়া কিচ্ছু হয়ও না। আজব বেপার হলেও সত্ত্যি যে, নিতু নামের মেয়েটি আমাকে, প্রেম পত্র পাঠিয়েছে! এই মেয়ে এমন কাজ করতে পারে আমার ধারণার বাইরে ছিল! তবে এমন কিছু যে ঘটবে আমি আগে কিছুটা ভেবে রেখেছি। আমার রুমের দিকে উকি মারা, আমার বই উলটপালট করে রাখা এগুলো তাহলে প্রেমের প্রথম ধাপ। এর পরেই মেয়ে লাভ লেটার পাঠিয়েছে আমাকে। তার সারমর্ম কিছুটা এরকম, ওগো আমার প্রিয়তম, তোমার তরে আমার প্রণয়কৃত ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। আশা করি তোমার ভালোবাসায় আমি ভালোই আছি। তোমার ঘামে ভেজানো চশমা পরা মুখখানি দেখলে আমার বড় ভালোবাসতে ইচ্ছে করে..... এইরকম আরো কিছু কথা। আমি ভাবতেও পারি না। আধুনিক যুগ এর মেয়ে হয়ে এরকমভাবে জগাখিচুড়ি চিঠির কোনো মানে হয়। পিলপিল করে মেয়েরা বেড়িয়ে আসছে। আমি আহম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কখন এসে পাবলিক মাড় লাগায় বলা যায় না। গলা টা একটু লম্বা করে দেখি নিতু এগিয়ে আসছে। সেই আগের মতো করে মাথার চু ল গুলোকে মাথার দুই দিকে বেণি করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। হাটতে হাটতে আসছে। আমি দেখে ডাক দিলাম। মেয়ে আমাকে দেখে হেসে উঠলো। কাছে আসলে দেখলাম, ফর্শা লাল মুখের ঠোট এর উপর ঘামের ফোটা মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করছে, প্রখর রোদে। মেয়ের মুখখানা দেখলে বুকের মাঝে কেমন কেমন করে জানি। মিথ্যা কথা হলেও সত্য যে এই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি। শুধু ভালোবাসি না হুব ভালোবাসি। ভালো বাসার কোনো যন্ত্র থাকলে মাপা যেত। অবশ্য একটা লাভ মিটার এপস আছে। মাগার ওই হালার এপসে সবার ভালোবাসা একি দেখায়! আমি নিতুর কাছাকাছি গেলাম। আমাকে দেখে সেও এগিয়ে এলো।
- ফারহান ভাইয়া, আপনি? যেন মনে হয় আমাকে এই প্রথম দেখছে ও। বিরক্তিতে মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।
- হুম আমি, এতক্ষণ লাগে কলেজ থেকে বেড় হতে। গম্ভীর মুখে বললাম, আমি।
- আরে কলেজ ছুটি হতে সময় লাগবে না। আর আপনি আমাদের কলেজ এর সামনে কেন? ভুরু নাচিয়ে বলল।
আমি কিভাবে বলি যে তোমার চিঠি পেয়ে আমি ছুটে এসেছি হে বালিকা। আমায় আপন করে নাও তোমার মনের মাঝে। আমতাআমতা করে বললাম,
- এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তো তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু দেখা করে যাই।
- হুম বুঝলাম, কিন্তু আপনার গা থেকে এতো গন্ধ আসছে কেন? একটু সরে গিয়ে বলল।
- আরে গন্ধ কোথায় পেলে, এটা আমার পারফিউম এর সুগন্ধ। আমি হাসি দিয়ে বললাম।
কিন্তু আমি ভালো করেই জানি। আমার দুইশত পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কেনা পারফিউম আর আমার রোদে ঘেমে যাওয়া শরির এর ঘামের গন্ধ মিলে এ সুগন্ধ।
- আচ্ছা বাদ দিন দেখা হলো তো ভালোই হলো। আমার সাথে চলুন তো।
- কোথায় যাব, আমি অবাক হয়ে বললাম।
- কোথাও না, আপনাকে বিক্রি করবো না আমি।
- আমাকে বিক্রি করেও কোনো লাভ হবে না। আমার সব জিনিশ অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে আগেই নষ্ট হয়ে গেছে।
- দেখুন কথা না বাড়িয়ে চলুন তো, আমি বসুন্ধরায় যাব, কিছু কেনাকাটা আছে।
- দেখো আমাকে ভাঙ্গাতে পারবে না। আমার ছেড়া পকেটে মাত্র একটা পাঁচ টাকার নোট আর দুইটা কয়েন আছে।
- আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না। শুধু একটা রিক্সা এনে দিন।
আমি হাসি মুখে কাজে লেগে গেলাম।
প্রায় আধঘণ্টা হলো নিতুর সাথে শপিং মলে ঘুরছি। অনেক মানুষ এর ভিরে আমাকে কেমন জানি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাগছে। এই মেয়েটি কেনার থেকে ঘুরাঘুরি করছে বেশি। কিছুক্ষণ আগে আমাকে দুইটা প্যাকেট দিয়ে বলল, এগুলো আপনার। ওমা খুলে দেখি একটা শার্ট আর একটা টি- শার্ট। তাকিয়ে দেখি নিতু লজ্জায় অন্যদিক এ মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। আমিও কিছু না জানার ভান করে শপিং ব্যাগ দুটি হাতে ঝুলিয়ে নিয়েছি। শুধু আস্তে করে পকেট এ হাত রেখে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছি আমার জিনিশ ঠিক আছে কি না। একশো টাকা দামের আমার বহুল সাধের নুপুর। তবে ঝোপ বুঝে কোপ মারার অপেক্ষায় আছি। কিন্তু আপাতত মেয়ের পিছনে তেলের ঘানির মতো ঘুরছি। সুন্দরি মেয়েদের পিছনে ঘুরেও লাভ আছে। মনে এক ধরণের অনাবিল হাওয়া বইতে থাকে। তবে এই মেয়ে আমাকে ভবিষ্যৎ এ অনেক জ্বালাবে দেখছি!