2য় বর্ষে সেমিস্টার পরিক্ষা দিয়ে এখন বেকার অবস্থায় বসে আছি ।চিন্তা করছি একটা চাকরি করব ।কিন্তু খুজে পাচ্ছিনা ।পরিক্ষার আগে দুটি চাকরির অফার পেলেও না করে দিয়েছি তবে এখন খুজে পাচ্ছিনা। তাই বেকার দের যেরকম জীবন কাটানো ধরকার আমি তাই কাটাচ্ছি । একদিন নদীর পারে বসে আছি আর একটা গান শুনছি । Love me Love me গানটা চলছিল My friends say I am a fool to think that your theone for me . I guess im just a sucher for love.
গানটা খুব মন দিয়ে শুনছিলাম আর কিছু ভাবছিলাম । কখন যে পাশে একটা ছেলে
এসে বসেছে বুঝতে পারিনি ! ছেলেটাকে জিঙ্গেস করলাম তুমি কখন এসেছ?
এইতো ভাই কিছুক্ষণ হবে ।
তুমি আমার পাশে কেন বসলে ?
আপনি ইংলিশ গান শুনছেন তাই ।
মানে ?
ভাই আমি ইংলিশ গান শুনতে খুব ভালবাসি ।
ও! তা তুমি কি করো ?
আমি পড়ালেখা করি ।
কিসে ?
ইন্টার 2য় বর্ষে ।
তোমাকে একটা কথা জিঙ্গেস করবো ?
করেন ভাই।
তুমি কলেজে পড়ো তাহলে তুমি তোমার ভালটা ঠিক বুঝ?
ভাই আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি ।
তোমার বাসা কোথায় ?
এইতো পাশেই ।
তুমি আমার পাশে এসে বসেছ আমি ইংলিশ গান শুনছি বলে , তুমিওতো ইংলিশ গান শুনতে পারো ওয়েব থেকে নামিয়ে নিলেই তো হয়।
ভাইয়া আমার ফোন নেই ।
তবে আমার একটা এফএম রেডিও আছে । ঐখানে মাজে মাজে ইংলিশ গান শুনি ।তবে সব সময় পারিনা , কারন সব সময় ইংলিশ গান দেয়না ।
(আমি মনে মনে ভাবছি ছেলেটা হয়তো গরিব তাই বাসা থেকে ফোন কিনে দিতে পারেনি। তবে ওর একটা কথায় ধারনাটা সত্য বলে ধরে নিতে পারছিনা । আশেপাশে চার দেয়াল ছাড়া কোন বাসা নেই আর এখানকার বাসা ভাড়াও অনেক তাহলে ? কোন সাধারণ পরিবার এখানে থাকে না ।)
তোমার পরিবারে কে কে আছে ?
আমি ছাড়া আর দুই ভাই-ভাবি আর ভাগিনা আছে দুজন ।
তোমার বাবা-মা নেই ?
বাবা আছে মা নেই ।
কোথায় থাকেন তিনি ?
লন্ডনে । আচ্ছা ভাই আজ তাহলে উঠি ।
তুমি কি সব সময় এখানে আসো ?
না ভাই।
তবে সপ্তাহে তিন দিন বাহিরে আসার সুযোগ পাই । তবে কাল আসব আপনি থাকবেন ?
থাকতে পারি , সঠীক বলতে পারবনা ।
ও, ঠিক আছে ।
বাসায় এসে ছেলেটার কথা ভাবছি ।ছেলেটার কথা গুলো কেমন যেন, মনে হচ্ছিল, না বলা অনেক কথা জমে আছে ওর মনে , কাউকে বলতে পারছেনা । কাল আমাকে যেতে হবে , কারন ওর সম্পর্কে জানতে হবে । ছেলেটার বাবা লন্ডন থাকে তাহলে ছেলেটার এই অবস্থা কেন ? পোশাক দেখে মনে হচ্ছিল কোন বস্তি এলার ছেলে হবে । ওর কথা মনে করছি আর ভাবছি , ভেবে ভেবে রাতটা শেষ করে দিয়েছি ।
তাই আজ আবার আসছি , তবে কোথাও ছেলেটার কোন চিহ্ন খুজে পাচ্ছি না । তাই কালকের জায়গায় বসে আছি । ছেলেটা এসেছে তবে ছেলেটাকে দেখে খুশি মনে হচ্ছিল । কারন জিঙ্গেস না করে পারছিলাম না তাই জিঙ্গেস করেই ফেললাম। তোমাকে খুশি মনে হচ্ছে ?
হুম ।
কারন জানতে পারি ?
পরে বলবো ।
তোমার যা ইচ্ছা । তবে তোমার কাছ থেকে আমার কিছু জানার আছে তুমি বলবে ?
কি জানতে চান ভাই, আমি এর উত্তর জানলে বলব। তেমন কিছু না , তোমার জীবনের গল্পটা শুনতে চাই ।
আমি বলব তবে আপনার মোখে হাসি থাকতে হবে । কি রাখবেন ?
ঠিক আছে চেষ্টা করব । তুমি বলেছিলে তুমি আশেপাশে থাকো তাহলে তোমার বাসা কোনটা?
আনোয়ার ভিলা চিনেন?
হুম ।তোমারা ঐ বাসায় ভাড়া থাকো ?
না ।
তাহলে !
ওটা আমাদেরা বাড়ি ।
(মনে মনে ভাবছি এই ছেলে বলে কি 12 তালা একটা বাড়ি থাকা সত্যেও ওর কাপরের এই অবস্থা । না কি ছেলেটার মানসিক সমস্যা আছে )
জিঙ্গেস করেই ফেললাম তাহলে তোমার কাপরের এই অবস্থা কেন?
মনে হচ্ছে অনেক পুরনো , তাছাড়া তোমার কথায় মনে হচ্ছে তোমাদের টাকা পয়সার কোন অভাব নেই ।
আপনি ঠিক বলেছেন আমাদের টাকা পয়সার অভাব নেই । তবে খরচ করার মত আমার কাছে এক টাকাও নেই ।
(ছেলেটা তার কথা গুলো বলা শুরু করলো এখন ওকে পাগল ভাবার ধারনাটা পালটে গেছে)
আমি যখন সপ্তম শ্রেণীর তে ছিলাম তখন মা মারা যায় । মায়ের মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারেনি । মায়ের মৃত্যুতে সবাই অনেক কেঁদেছে কিন্তু আমি কাঁদতে পারিনি । ভুলেও এক ফোটা চোখের জ্বল ফেলতে পালিনি । সবাই তখন পাশান বলে সিকৃতি দেয়। সবাই বলে আমার কোন মায়া নেই । সেদিন থেকেই আমার প্রতি সবার মায়া উঠে যায় । আমার পরিবারের সবাই MBA করেছে তাই তাদের সম্মান রক্ষার্থে পড়ালেখা করাচ্ছে ।তবে কিছু নিয়ম নির্ধারণ করা আছে এর ভিতর । আমাদের বাড়িতে একটি মাত্র কাজের লোক । সে আমাদের বাড়িতে আনেক বছর ধরে আছে । আমাকে সব সময় আধর করে । মা মারা যাওয়ার পর বাবা লন্ডনে চলে যায় । তার পর আর কখনও আসেনি । আমার কাছে কোন ফোন না থাকায় বাবার সাথে কখনও কথা বলা হয়ে উঠতনা । আজ ছয় বছর বাবার কন্ঠ শুনি না । এক দিন স্কুল থেকে এসে দেখি বড়ভাই কার সাথে যেন কথা বলছে । কথার ধরন দেখে মনে হল বাবা ফোন দিছে । ভাইয়াকে যখন বলব আমিও বাবার সাথে কথা বলবো , তখন একটা কথায় আমার সব আশা ভেঙ্গে যায় । ভাইয়া বাবাকে বলেছে আমি নাকি বাসা থেকে 50হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছি । আমি তখন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আমার ভাই এই কথা বলবে । সেদিন দরজা বন্ধ করে খুব কেঁদেছি , তার পর চিন্তা করলাম মায়ের মৃত্যুর সময় এত চেষ্টা করেও কাঁদতে পারিনি তাহলে আজ কেন কাঁদছি । একবার সত্যি বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভাইয়ের কথা সত্যি হয়ে যেত তাই যাইনি ।
( ওর কথা শুনছি , খুব স্বাভাবিক ভাবে বলছে ও কিন্তু আমি স্বাভাবিক থাকতে পারছিনা ।)
তারপর?
আমি বাড়িতে রয়ে গেলাম, আমি যে এই কথা শুনছি কাউকে বুঝতে দেইনি ।
বাসায় তিনটি টিভি থাকা সত্যেও আমাকে টিভি দেখতে দেওয়া হতনা ।আমার ইংলিশ গান পছন্দ হওয়ায় টিভির শব্দে কান পেতে থাকতাম , কখন চেনেল পাল্টায় । কিন্তু সবাই সিরিয়াল আর মুভি নিয়ে ব্যস্ত থাকত । আমার আর গান শোনা হতনা ।। টিভির শব্দে কান পেতে শুনতাম আর কি হচ্ছে অনুভব করতাম । স্কুলে যাওয়া আসার জন্য আমাকে 20 টাকা দেওয়া হত , তবে ওটা বাস ভাড়া । রিক্সায় গেলে 40 টাকা লাগতো । আসতে যেতে 80 টাকা তাই 20 টাকায় বাস ভাড়া হয়ে যেত । যদিও মা পছন্দ করে আমাদের তিন ভাইয়ের জন্য তিনটা গাড়ি কিনে ছিল । কিন্তু বর্তমানে আমার কোন গাড়ি নেই। সেটা এখন আমার ভাইয়ের ছেলেদের স্কুলে যাওয়া আসার জন্য দেওয়া হয়েছে।
তাই আমি চিন্তা করলাম আমি যদি 7দিন স্কুলে হেটে যাই তাহলে আমার এফ এম কেনার টাকা হয়ে যাবে । তাই আমাকে বাসা থেকে একটু আগে বের হতে হবে । আগে বের হতে হলে বাসার কাজ গুলো আগে আগে শেষ করতে হবে । কারন কাজ গুলো করলে আমার খাবার মিলবে, আর স্কুলে যাওয়া হবে ।
সকালে কি কাজ করতে ?
তেমন কিছুনা , বাড়ির সামনের বাগানের গাছে পানি দেওয়া, বাজার করা আর থালা বাসন পরিস্কার করা এই আরকি বাকি কাজ বুয়া কর তো ।
আমি আর কিছু বললাম না , কি আর বলার আছে ।
ও আবার বলা শুরু করে দিয়েছে ।সকালে ভোরে উঠে সব কাজ সেরে 7দিন পায়ে হেটে স্কুলে যেতাম এতে করে টাকা জমাই । তবে সেটা আর ব্যবহার করতে পারিনি হারিয়ে ফেলি ।
বাবা-মা সখ করে আমার নাম রেখেছিল "বখতিয়ার" যার অর্থ সৌভাগ্যবান ।আমার এমন ভাগ্য যে , আমার জমানো টাকাও হারিয়ে ফেলি ।
( এতো কথার পর ছেলেটার নাম জানতে পারলাম "বখতিয়ার" খুব সুন্দর নাম ।)
টাকা হারিয়ে যাওয়ার পর আরো সাত দিন আমাকে পায়ে হেটে স্কুলে যেতে হয়। তার পর টাকা জমিয়ে এফ এম রেডিও কিনা যা আমার এখনও আছে ।
তবে এখন সপ্তাহে একদিন হলেও আমার কলেজে হেটে যেতে হয় , কারন আমার এফ এম এর ব্যাটারি কেনার টাকা এখান থেকেই আসে । আপনি আমার পোশাক নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন তাই না ?? আসলে আমাকে বছরে দুইবার পোশাক দেওয়া হয় । প্রথম প্রথম যখন তাদের সাথে শপিংয়ে যেতাম তখন সবার শপিং আমার হাতে থাকলেও আমার টা থাকতো না । খুব খারাপ লাগত এখন আর লাগেনা । অবস্থ হয়ে গেছি । মাঝে মাঝে যখন আমার শপিং ব্যাগটা হাতে পাই তখন আমি নিজেই অভাক হই ।তবে আমার জন্য কেনা শপিং ব্যাগটা দুই ঈদেই পেয়ে থাকি । তার কারন হল প্রতি ঈদে গরিবদের জন্য পোশাক কেনা হয় বিতরনের জন্য তার সাথে আমার টাও কেনা হয় । আপনাকে বললাম না, আমি এখানে সপ্তাহে তিন দিন আসি । এই তিন দিন দুপুর 2টা থেকে বিকাল 5টা প্রযত্ন যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি । আর বাকি দিন গুলো বাসার কাজ গুলো সামলাতে হয় । আর...........
ওকে আর কথা বলার সুযোগ দিলাম না । ও যদি আর কিছুক্ষণ কথা বলে আমি নিজেকে কন্টল করতে পারবোনা আমার চোখের পানি বের হয়ে আসবে ।
কিন্তু ওর চোখে এক ফোটা পানি বের হবে বলে মনে হলনা । খুব সহজ ভাবে যে ওর এত দিনের জমে থাকা কষ্টের কথা গুলো বলবে আমি ভাবতেও পারিনি ।
এতো কষ্টের ভিতর ও আজ অনেক খুশি ওর খুশির কারনটা জানা ধরকার ।
হয়তো আজ সত্যি কোন ভাল কিছু ওর জীবনে পেয়েছে । তাই ওকে জিঙ্গেস করলাম আজ তাহলে এতো খুশি কারন বলবে ?
আজ বাবা লন্ডন থেকে এসেছিল । আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেছে । যাওয়ার আগে তার সব সম্পত্তি আমার ভাইদের নামে লিখে দিয়ে গেছে। কোন চোর তার সন্তান হতে পারেনা, তাই সে তার সব থেকে বঞ্চিত করে আমাকে তেজ্য পুত্র করে গেছে । তাই আমি খুশি , আমি আজ মুক্ত । এখন আর আমাকে কোন কষ্ট করতে হবেনা । তার কারন আমার কোন পিছুটান নেই ।
ছেলেটা হাসছে আমি হাসতে পারছিনা । এই হাসির ভেতর কতটুকু কান্না লুকানো আছে এটা ছেলেটাই ভাল জানে ।আমার ধারনা ছিল ওর খুশির কারন হল ওকে হয়তো কেউ ফোন উপহার দিয়েছে । যা দিয়ে ও ইংলিশ গান শোনতে পারবে । কিন্তু আমার ধারনা মিথ্যা প্রমাণিত হল । ও আজ যে উপহার পেয়েছে তা কোন দিনও ভুলবেনা । ছেলেটাকে কিছু বলতে পারিনি , উঠে চলে গেছে ।
আজ ছেলেটার পাশে কেউ নেই , কোথায় থাকবে ? কি করবে এটা ছেলেটা নিজেও জানে না । তবে আজ থেকে ওর পরিচয় লিখতে গেলে কার নামটা লিখবে ?
ঠিকানা লিখতে গেলে আনোয়ার ভিলার নাম আসবে ?
কারো কষ্ট বুকে চাপা পরে থাকে , কেউ দেখেনা । বাহিরে ফুটে উঠা হাসিটা তখন কাল হয়ে দাঁড়ায় ।
লেখক:- রাখিল
Tags:
Bengali Stories
Hate Story
Love Story
Ramanic Love Story
Valobasar Golpo
কষ্টের ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসার গল্প