গল্পঃ প্রতিশোধ
লেখাঃ তানভীর আহমেদ
ধ্যাত ভাল্লাগেনা! ভার্সিটির গেইটে এই মেয়েগুলা প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকবেই আর ভদ্র কোনো ছেলে দেখলেই তাকে ধরে মজা করবে।
বরাবরের মতো আজ ওদের কবলে পড়ে গেছি আমি। প্রত্যেকটা দিন আমাকে পচায়, আসলে আমি বাকি দের মতো এতো ফ্যাশন মেরে ভার্সিটি আসিনা।
একটা মোটা ফ্রেমের গোল চশমা পরি আর ঢিলেঢালা একটা জিন্স আর শার্ট আর পেয়ে এক জোড়া কমদামী চপ্পল।
হ্যা আমিও বিত্তশালী পরিবারের ছেলে কিন্তু আমার মর্ডান ভাবে চলতে ভালো লাগেনা। আমি চাই বাকি দশটা মানুষের মতই সাধারণ ভাবেই চলতে।
- এই দেখ দেখ খ্যাত বাবু যাচ্ছে, হাহাহাহা
হুট করেই ওদের দলের সুন্দরী মেয়েটা এসেই আমার চশমাটা খুলে নিলো। আমি বললাম, দেখুন আমার ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ন ক্লাস আছে আমার।
সেই মেয়েটা বলল, বাবু বাবু একদিন ক্লাস মিস দিলে তেমন কিছু হবেনা। চলো আজ আমরা এখানে বসে আড্ডা দেই ।
- ঠাসসসসসসসস
- কি ভাবছেন আমার গালে পড়েছে! নাহ ওই মেয়েটাকে দিয়েছি। মেজাজটা এখন চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার।
আমার এমন ব্যবহারে সব কয়টা মেয়ে হা হয়ে গেছে। আমি তাদের উদ্দ্যেশ্যে বললাম,, কি পেয়েছেন কি আপনারা?
কোনো ছেলে এসে যদি আপনাদের পিছে ঘুরে অথবা ডিস্টার্ব করে তাহলে তো বলেন, ঘরে মা বোন নেই! সাথে তো গালাগালি আর থাপ্পড় ফ্রিতে দিয়ে চৌদ্দ গুষ্ঠী উদ্ধার করে দেন।
আবার সেই আপনারাই, কোনো বোকা সোকা ছেলে পেলেই ধরে ইনসাল্ট করেন। কেনো আপনাদের লজ্জা করেনা? আবার নামও দিয়েছেন খ্যাত।
এখন আমার কি বলা উচিত হ্যা? আপনাদের ঘরে বাপ ভাই আছেতো? থাকলেতো মনে হয় এমন ভাবে কারো সাথে ব্যবহার করতেন না।
আমার এভাবে সিনক্রিয়েট করাতে দেখলাম আশেপাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। আমি সেই সুন্দরী মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
আমি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে ক্লাসে চলে গেলাম। আজ খুব হাল্কা হাল্কা লাগছে নিজেকে, মনে হচ্ছে আজ উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে মেয়েগুলিকে।
ভালোভাবেই দিনকাল চলছিলো, এখন আর কেউ বিরক্ত করেনা।
সেদিন ক্যাম্পাসের বকুল তলায় বসে বসে ক্লাসের এসাইনমেন্ট গুলা দেখছিলাম। এরি মধ্যে সেই মেয়েটা এসে পাশে বসলো।
- সরি (মেয়েটা)
- ইটস ওকে।
- আসলে বান্ধবীদের সাথে মজা মজা করতে করতে এতোটা নিচে নেমে যাবো ভাবিনি। সত্যি আমি দুঃখিত প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।
- আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক।
মেয়েটি হুট করেই বলে উঠলো,, আমরা কি বন্ধু হতে পারিনা?
- হ্যা হতে পারি
- আমার নাম নিশী
- জ্বী আমি তানভীর
এভাবেই মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়৷ মেয়েটি ছিলো একাউন্টিং বিভাগের আর আমি ছিলাম ইংরেজি বিভাগের।
মাঝে মাঝে দেখা সাক্ষাত হতো আর ফেবুতে রেগুলার মেসেজের ছোড়াছুড়ি হতো।
তানভীর! এই তানভীর!
- জ্বী আম্মু
- তোর বাবা ডাকছে তোকে
- আচ্ছা যাচ্ছি
-বাবা ডেকে ছিলেন আমাকে?
- হ্যা, তুমি রেডি হয়ে নাও। তোমাকে নিয়ে আমরা আমার এক বন্ধুর বাসায় যাবো।
- আচ্ছা বাবা
বাবাকে বলার পরে জানতে পারলাম তার ছোট বেলার বন্ধু রহমান আংকেল সে নাকি দেশে এসেছে। তার সঙ্গেই দেখা করতে যাচ্ছেন বাবা আজ আমাদের নিয়ে।
রহমান আংকেলের বাসায় যাওয়ার পর সে কি আপ্যায়ণ । ভদ্রলোকটি আপ্যায়ণের কোনো ত্রুটি রাখেননি।
আর এতোদিন পর দু-বন্ধুর দেখা হওয়ার পর আর যা হয়, মজে গেলেন আড্ডায়।
এরমধ্যেই হঠাৎ,,
- তানভীর তুমি?
- জ্বী নিশী আপনি?
-রহমান আংকেল, মামুনী তুমি একে চিনো?
- হ্যা বাবা, আমরা একি ভার্সিটিতে পড়ি। আবার আমরা দুজন বন্ধুও বটে।(নিশী)
আমি বুঝতে পারলাম এটা ওদেরি বাসা আর ওই রহমান আংকেল ওর বাবা।
আস্তে আস্তে করে আমাদের দু-পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে লাগলো। নশী বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনি আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করতো।
আমি আবার ওর থেকে সব সময় দুরেই থাকতাম।কারন এসব মেয়েদের দিয়ে বিশ্বাস নেই,এদের ঘটে ঘটে বুদ্ধি। কখন না আবার ফাসিয়ে দেয়।
হ্যা আমাকে ঠিক সে ফাসিয়ে দিয়েছিলো, তবে শুনুন সেই কাহিনী।
মেয়েটা আমাদের বাসায় প্রতিদিন আসতো। আমার মা বাবা ও নিশীকে অনেক ভালোবাসতো।
ছোট বোন ছিলো তাই তার সাথে আড্ডা মারতে আসতো। তো একদিন আমাকে বলে,,
- তুমি আমার সাথে তেমন কথা বলনা কেনো?
- আসলে আমি মেয়েদের সাথে একটু কমি কথা বলি।
- আমাকে কি পর মনে হয়? হু
- নাতো সেটা মনে হবে কেনো
- তাহলে আজ থেকে আমার সাথে আড্ডা দিবে হ্যা। ভার্সিটিতে লাগবেনা তোমাদের বাসায় দিলেই হবে।
মেয়েটাকে বিশ্বাস করতে লাগলাম। এরপর থেকে রেগুলার আমাদের কথা হতে লাগলো। ফেবুতে মেসেঞ্জারে কথা হতে লাগলো।
এরপর এক সময় নিশী আমাকে প্রপোজ করে। আমি কিছুদিন ভেবে হ্যা বলে দেই।
এরপর থেকে আমাদের মধ্যে কথা বলা একটু বেশীই বেড়ে যায়।
সকালে ঘুমিয়ে ছিলাম,
হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দিলো। এরপর দেখি আমার বিছানা ভেজা,,,
আমিতো ভয় পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়াই আর ভাবতে থাকি, এই বয়সে বিছানায় ইয়ে করে দিলাম। ছি ছি ছি
ঠিক এমন সময় হিহিহিহি করে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। দেখলাম নিশী হাসছে, বুঝলাম নিশি পানি ঢেলেছে।
এভাবেই চলছিলো আমাদের প্রেম কাহিনী,, সেদিনের ঘটনা,,,
দুপুরে শুয়ে ছিলাম। এমন সময় নিশী রুমে আসলো এসেই দরজা আটকে দিলো।
- একি তুমি আমার রুমে এই সময়? বাবা মা কি মনে করবে এখন?
- নিশী বলল চুপ। আজ আমার সময় এসেছে প্রতিশোধ নেওয়ার। শোধ তুলবো আক হাহাহাহা
নিশী চিল্লানি দিয়ে উঠলো,, তানভীর ছাড়ো ছাড়ো আমাকে প্লিজ ছেড়ে দাও। প্লিজ আমার এমন সর্বনাস করো না৷ আমি তোমাকে বলছিতো ভালোবাসিনা তাই বলে এভাবে আমার সাথে এমন করোনা৷ প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে,,
দরজায় ততোক্ষণে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছি, আর ততক্ষনে নিশী হাত দিয়ে ওর ওড়নাটা ফেলে দিলো। জামা ছিড়ে নিলো, এরপর হুট করে এসেই আমার শার্ট ধরে টেনে খুলে নিলো।
এর এমন সময় দড়জা ভেঙে বাবা রুমে ঢুকলেন। তিনি ঢুকেই দেখতে পেলেন আমার গায়ে শার্ট নেই,নিশীর জামা ছেড়া।
আর কিছু বোঝায় প্রয়োজন হয় না? যে কি ঘটেছিলো এটা ওনাদের মতামত। কিন্তু ঘটেছে তো উলটা যেটা সবার অগোচরে।
ঠাসসসস,ঠাসস করে বাবা এসে আমাকে আমার দুগালে চারটা থাপ্পড় দিলেন। আর বললেন,, ছি তুই এমন হবি আর এমন করবি ভাবতেই পারিনি।
এতোদিন তোর এই ভালোমানুষের মুখের আড়ালে এমন পশুত্ব লুকিয়েছিলো? ছিহ তোকে নিয়ে কতো গর্ব করতাম আর তুই?
আমার মান সম্মান এভাবে ধুলায় মিশিয়ে দিলি।
রহমানের সামনে আমি কোন মুখ নিয়ে দাড়াবো এখন! আমার দুচোখ দিয়ে বৃষ্টি ঝরছে। আমি ভাবতেই পারিনি নিশী আমার সাথে এমন করবে"!
বাবা লাঠি নিয়ে আসলেন, এরপর আমাকে অনেক পিটালেন। আমার সেদিকে খেয়াল নেই কারন আমি এখনো ভাবতেই পারছিনা আমার সাথে এমন হবে।
ওকে আর মারবেন না থামুন আপনি (মা বলছিলেন) ছেলেটা মরে যাবেতো। আপনার পায়ে পড়ি প্লিজ থেমে যান। আমার ছেলে এমন করতে পারেনা ওর চোখ দেখেছি আমি।আমার মন বলছে কোথাও ভুল হয়েছে মায়ের মন ভুল হতে পারেনা।
-এই চুপ করবে তুমি (ঝাড়ি দিয়ে বললেন বাবা)
আমি ভেবেছিলাম আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে কিন্তু না, হয়েছে তার উলটা।
নিশী এমন নেকামো করছিলো যে, মনে হচ্চিলো সব শেষ করে দিয়েছি ওর। এরপর ওর মা এসে লাগালেন আরেক ঝামেলা।
এখন আমার মেয়ের কি হবে? কে বিয়ে করবে আমার মেয়েকে? কেউ শুনলে কি হবে আমার মেয়েটার? আমি এর উচিত বিচার না পেলে এক পা ও নরছিনা এখান থেকে। (নিশির মা)
এরপর সবার সিদ্ধান্ত নিলেন নিশীর সাথে আমার বিয়ে দিবে আজকে এই মুহুর্তেই। আমি যেই বললাম না আমি মানিনা ওমনি বাবা এসে আরেকটা চড় দিয়ে বললেন আরেকটা কথা বলেছিস তো আমার মরা মুখ দেখবি।
কোনো বাবা যদি এমন বলে, তাহলে কোনো সন্তানি পারবেনা আর না করতে।
নিশী ফেসে গেলো, সে চেয়েছিলো কি আর হয়ে গেলো কি?
এরপর কাজি এনে ততক্ষনাৎ বিয়ে হয়ে গেলো। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আমাদের বাসর ঘড়ে পাঠানো হয়।
আমি রুমে গিয়ে সোফায় বসি ঠিক তার কিছুক্ষন পর আমি অনুভব করি আমার শরির ব্যাথা করছে জ্বলছে।
বাবার মাইর গুলার ব্যাথা এখন টের পাচ্ছি। ব্যাথা এমন পরিমাণ বেড়ে যায় যে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই সোফা থেকে।
আমি যখন বাসর ঘরে যাই দেখতে পাই সে আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
এরপর সকালে আমি অনুভব করি কে যেনো পা দিয়ে আমাকে ধাক্কাচ্ছে। কিন্তু তার দিকে ফিরেও তাকানোর আমার শক্তি নেই। আমি বুঝতে পারি নিশী পা দিয়ে আমাকে লাথি দিয়েছে। আমি হাল্কা হাল্কা শুনতে পাই নিশী বলছে,,,
তোর সাথে তো বিয়ে হলোই কি আর করার, যাক ভালো হইসে এখন থেকে তোকে ইচ্ছামত কষ্ট দিতেছি পারবো। আমার প্রতিশোধের আগুন এখনো নিভেনি।
আমি যে ওকে কিছু বলবো সেই কথা বলার শক্তি ও নেই আমার। আমি শীতের দিনেও ঘামছি, আমি টের পাচ্ছি আমার শরীর দিয়ে গরম ভাপ বের হচ্ছে। পিঠ আর মাথা দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বের হচ্ছে।
দরজায় টোকা পড়লো,,
- বৌমা দরজা খোলো?(আম্মু)
- জ্বী দাড়ান খুলছি (নিশী)
- একি আমার ছেলে মেঝেতে কেনো? কি হয়েছে ওর?
ওর গা তো জ্বরে পুরে যাচ্ছে, তানভীরের বাবা তাড়াতাড়ি এদিকে আসুন।
কি হয়েছে ডাকছো কেনো.? (বাবা)
আমার ছেলেতো মরে যাচ্ছে তারাতারি কিছু একটা করেন। (কেদে কেদে)
বাবা আমার গায়ে হাত দিয়ে তিনিও চমকে উঠলেন। এরপর এম্বুলেন্স আনা হলো নেওয়া হলো হসপিটালে।
আজ,,
টানা ১৩ দিন পর আজ আমাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে। এই ১৩ দিন মা আমার পাশে ছিলো। আসলে মায়ের মতো এমন দরদি আর কেউই হবেনা। আপনাদের বলছি কখনো মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। ভালোবাসুন মাকে ঠকবেন না।
একটু সুস্থ হতেই শুরু হলো নিশীর অত্যাচার,,
সকালে শুয়ে ছিলাম এমন সময় নিশী এসে পানি ঢেলে দিয়েছে গায়ে। মেজাজ টা চরম খারাপ হলেও দমে গেলাম আমি। আমি দেখতে পেলাম খুব হাসছে ও।
আমি শুধু বললাম খুশিতো? সে বলল আগে আগে দেখো হোতাহে কেয়া! এই বলে চলে গেলো।
সেদিন ভার্সিটিতে দেখতে পেলাম,, নিশীকে একটা ছেলে ফুল দিচ্ছে ও নিবেনা ছেলেটা জোর করছে। আমি এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে,,,
- এই যে ভাই উনাকে ডিস্টার্ব করছেন কেনো?
- এই সালা তাতে তোর কি হাহ, ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড হয় বুঝলি। যা ফোট এখান থেকে,,
- আমি নিশীর হাত ধরে টান দিয়ে বললাম চলো নিশী বাসায় যাই,,
ঠাসসসসসসস,,, ওমনি নিশী আমাকে চড় দিলো। এতোটা জোরে দিয়েছে যে আমার নরম গালে পুরো পাচ আঙুলের দাগ পড়েছে।
থাপ্পড়ের শব্দে ক্যাম্পাসের মানুষ গুলা আমাদের দিকে তাকালো।
- নিশী বলল, তোর সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরার? ফালতু ছেলে কোথাকার। মেয়ে দেখলেই হাত ধরতে ইচ্ছা করে হাহ, তোর বাসায় মা বোন নেই? মেয়েদের সম্মান করতে শিখ। যা এখান থেকে,,,
আমার খুব হাসি পাচ্ছে, সেদিন ওকে দিলাম ভালো উপদেশ আর ও সেটার প্রতিদান আমাকে এভাবে দিলো। ও বুঝবে একদিন সময় হোক তখন ও কাদবে।
রাতে দেখলাম নিশী অনেক খুশী মুখে হাসি হাসি ভাব। হুম হবেইতো কারন আজ তো চরম প্রতিশোধ নিয়েছে সে।
নিশী বলল,,
- যাহ তোকে মাফ করে দিলাম। আমার শখ মিটে গেছে।হাহাহাহা
- আমি বললাম শুকরিয়া। এই বলে মুচকি একটা হাসি দিলাম। এরপর বললাম এশার আজান দিচ্ছে নামাজ টা পড়ে নিন।
- ওই তোর পড়া তুই পড়৷ জ্ঞান দিতে আসবিনা একদম।
ঘুম ভাংলো সকালের পাখির কিচিরমিচির শব্দে। চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম নিশী মাত্র গোসল করে এসেছে। ভেজা চুলের মিষ্টি গন্ধে ঘরটা মৌ মৌ করছে।
এমন একটা মুহুর্তে কোনো পুরুষের পক্ষেই খুব কষ্টকর হবে নিজেকে ঠিক রাখা। আমিও পারছিলাম না এরপর হুট করেই নিজের হাতে জোরে চিমটি কাটলাম। এতো জোরের যে রক্ত বের হয়ে গেলো।
কারন কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করা সাজে না এটা অন্যায়। তাই আমিও আমার
ইচ্ছাটাকে দমন করলাম।
দুজনে এক ঘরে থাকি অথচ কারো সাথে কথা হয় না। পরিবারের সবাই জানে কিন্তু তাদের ধারণা আস্তে আস্তে সব মানিয়ে যাবে।
এভাবে চলতে চলতে একটা বছর পার হয়ে গেলো। নিশীকে বাবা মা একদম মেয়ের মতো দেখে অনেক আদর করে তাকে।
আমি শুধু ভাবি যখন তারা সত্যটা জানবে কি করবে তারা? ধ্যাত এতো ভেবে লাভ নেই তারা তখন জানবেন তাদের ভুল বুঝতে পারবেন এটাই।
ইদানিং দেখছি নিশী আমার সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু এখন লজ্জা পায়। নিশী এখন আমার আশেপাশে দিয়ে ঘুরঘুর করছে,,
- কিছু বলবেন?( আমি বললাম)
- তোমার পাশে ওই সুন্দরী মেয়েটা কে ছিলো?
- বান্ধবী
- তুমি এতো লুচ্চা হলে কবে হাহ? ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলো। কই আগেতো কোনো মেয়ের দিকে তাকাতেও না কথা বলাতো দূরে থাক।
- হাহাহা, কে বলল আমি ভালো? আমিতো চরিত্রহীন একটা ছেলে তোমার ইজ্জত নিতে চেয়েছিলাম তাইনা!
- নিশী মাথা নিচু করে চলে গেলো।
আমার আগে খুব মন খারাপ হতো নিশীর কাজ গুলার জন্য। কারন ও আমার জীবনটা তেজপাতার মতো করে দিয়েছে। আমার মনে হতো ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো কিন্তু পারিনি মা বাবার জন্য। তারা ভাব্বেন আমি সত্যিই খারাপ তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলিনি।
আস্তে আস্তে সময় যতই বাড়তে লাগলো রাগ আর অভিমান গুলাও কমতে লাগলো। যতই কমুক না কেনো সেই আঘাতের দাগ সহজে মন থেকে মুছে না সেটা থেকেই যায়।
একটা মানুষের সাথে অনেকদিন থাকলে তার ওপর একটা মায়া জন্মায় সেটার আমার ক্ষেত্রেও হলো।
হবেই তো কারন সে হচ্ছে আমার বা পাজোরের হাড়। সে যদি সেটা নাই হতো তাহলে সে নয়তো আমি কবেই আলাদা হয়ে যেতাম। আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম কারন হয়তো বিধাতা এটাই চেয়েছিলেন।
নিশী আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে কিন্তু আমি কখনো করিনি।কারন, আমাদের ইসলাম ধর্মে বর্ণিত আছে পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়।
আমিও চাই ও ওর ভুল বুঝুক অনুতপ্ত হোক। এরপর না হয় নতুন করে ওর হাত ধরে আবার পথ চলা শুরু করবো।
এসব ভাবছিলাম এরি মধ্যে ফোনটা বেজে উঠলো,,
- তানভীর আহমেদ বলছেন?
- জ্বী
- কংগ্রাচুলেশনস, আপনাকে আমার কোম্পানীর এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে সিলেক্ট করা হয়েছে। আগামী মাসের এক তারিখ হতে আপনি অফিয়ে জয়েন করতে পারবেন।
আজ আমি এতোটাই খুশী যে বলার বাইরে। ভার্সিটি থেকে অনার্স কমপ্লিট হয়েছে ২ মাস আগে। এরপরে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে এপ্লাই করি। ভাইভাতে টিকে ও যাই। আর আজ আমাকে সিলেক্ট করা হলো।
বাবা মা কেউই যানেনা তাই ভাবছি আজ তাদের সারপ্রাইজ দিবো। আমি বাজারে গিয়ে মিষ্টি কিনে আনলাম।
এরপর বাসায় এসে দেখি সবাই ডিনারে বসেছে মাত্র। আমি সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালাম এরপর সবাই বলল কিসের মিষ্টি?
মা বলল, কিরে দাদী হচ্ছি নাকি আমি। আমি বললাম সেটা হবার নয়, দেখলাম নিশীর মুখ কালো হয়ে গেলো।
কিরে নিশীকে মিষ্টি দিলিনা কেনো? মা বলল
আমি বললাম, ওখানে আছে যার দরকার নিয়ে খেতে পারে। ও হ্যা আমার জব হয়েছে রাজশাহীর একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে।
আর ৩ দিন পরেই আমার জয়েন।
বাবা বলল,কিরে কখন কি করলি আমাদের তো বললি না? আমি বললাম বাবা তোমাদের ছেলেতো মিথ্যাবাদী চরিত্রহীন যদি বিশ্বাস না করো তাই বলিনি।
আর হ্যা আমি কাল ই চলে যাবো। আমার থাকার জন্য অফিস থেকেই ফ্লাট দিচ্ছে।
-মা বললেন বৌমাকে নিবি না?
- (নিশী আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে)
আমি আজ বললাম কে নিশী আমি চিনিনা ওকে বলে দিয়ো ওর বাবার বাসায় চলে যেতে। অকে অনেক সহ্য করেছি আর না, আমাকে ঠকিয়েছে ও। ওকে আমি কখনো ক্ষমা করবোনা কঠিন গলায় বললাম।
কারন সময় হয়েছে ওকে কাছে টেনে নেওয়ার। এভাবে জীবন চলেনা ওর শিক্ষা পাওয়া উচিত।
দেখলাম নিশি মাথা নিচু করে আছে। মুখ ভয়ের ছাপ চোখে পানি ভর্তি।
বাবা হা হয়ে দেখছেন আমাকে, আমার এমন কঠিন রুপ তিনি এই প্রথম দেখলেন। মা বলেন কে কাকে কিভাবে ঠকালো বল?
আমি নিশীর দিকে তাকিয়ে বললাম যার আমাকে দরকার নিজেই সত্যিটা বলে দিবে।
আজ চলে যাবো তাই ব্যাগ পত্র গোছাচ্ছিলাম । এমন সময় নিশী এসে বলল, আমিও যাবো।
- সরি আপনাকে নিবো কেনো? কে আপনি?
- আমি তোমার স্ত্রী
- হাহাহা, মনে পড়ে? সেই ক্যাম্পাসের কথা? ও হ্যা আপনার সেই বয়ফ্রেন্ডের খবর কি? কবে বিয়ে করছেন?
- শোধ নিচ্ছো?
- আপনি ও তো নিয়েছেন। যাই হোক সমস্যা নেই ওই ছেলেকে বিয়ে করে নিন আমি আপনার ডিভোর্স পেপার রেডী করছি ভয় নেই। আর আমি জানি আপনি এটাই চান?
- নিশী কান্না করে দিয়ে বলল, মেয়েদের একবারি বিয়ে হয় দুবার নয়।
- আমি ওকে বললাম, সম্মান মানুষের ধামা ভরা থাকেনা। ওটা একবার গেলে আর ফিরে আসেনা। যেটা আপনি আমার থেকে কেড়ে নিয়েছেন।
ভালো থাকবেন আসি হ্যা, যখন আসবো দেখা হবে। এই বলে নিচে চলে এলাম এরপর বাবা মাকে বলে তাদের বিদায় দিয়ে রওনা দিলাম রাজশাহীর উদ্দেশে।
নিশী মন খারাপ করে দু'পায়ের ভাজে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। তার ভেতরটা আজ কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগছে। তার মনে হচ্ছে কি জেনো একটা নেই ঘরটাও ফাকা ফাকা লাগছে।
নিশী ভাবছে ছেলেটার সাথে সে অনেক খারাপ কিছু করেছে।বাবার ভালোবাসা সে কেড়ে নিয়েছে, ছোট করেছে সে পরিবারের কাছে।
সে ভাবছে, ছেলেটাকে এতো কিছু করার পরেও কখনো প্রতিবাদ করেনি সে। এক ঘরে থেকেছে কিন্তু কখনো তার দিকে খারাপ নজরে তাকায়নি এ পর্যন্ত। কখনো তার ওপর কোনো অধিকার দেখায়নি যেখানে সে আমার স্বামী তার সম্পুর্ণ অধিকার ছিলো।
আচ্ছা আমার কেনো মাথায় আজ এগুলা আসছে নিশী নিজের মনকে জিজ্ঞাস করছে। তার মন বলছে, ছেলেটা সোনার টুকরা তুই সেটাকে পায়ে ফেলে সেটার অমর্যাদা করেছিস, তোর কর্ম ফলের জন্য তুই প্রস্তুত হ।
আজ অফিসে জয়েন করলাম। বস সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এভাবে চলতে লাগলো অফিসের সময়।
অফিসের কলিগদের সাথে একটা ভালো সখ্যতা গড়ে উঠলো আমার। আমার কাজের আগ্রহ আর কাজের ধরন দেখে বস ও খুশি।
রাতে শুয়ে ছিলাম এমন সময় অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলো। আমি ধরলাম না, আমি ভেবেছি কে না কে রং নম্বরে কল দিয়েছে তার আর ধরার প্রয়োজন বোধ করিনি।
এরপর আবার দিলো, এবার ধরলাম।
- (নিশ্চুপ কোনো শব্দ নেই)
- হেলো কে বলছেন?
- (নিরবতা)
- এই যে হেলো কে আপনি কথা বলেন নয়তো রেখে দিলাম যত্তসব।
- এই এই প্লিজ কেটো না
- কে আপনি আবার আমাকে তুমি করে বলছেন? ( আমি চিনেছি তবুও না চেনার ভান করছি কারন ওকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার)
- নিজের স্ত্রীকে চিনতে পারছোনা? আমি নিশী
- সরি আমি অবিবাহিত, আর এ নামে কাউকে চিনিনা।
- তানভীর আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?
- আমি ক্ষমা করার কে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। তো ফোন করেছেন কেনো?
- আমি এখানে থাকতে পারছি না আমি তোমার কাছে আসবো (আবদারের সুরে)
- ও হ্যা হ্যা বুঝতে পেরেছি আরে ভয় নেই, ১ মাসের মধ্যে ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবেন।
- ছি কি বলো প্লিজ এগুলা বলোনা ( কান্নার সুরে) আমি তোমাকে ছাড়া এখন এক মুহুর্তের জন্যেও নিজেকে ভাবতে পারছিনা। জানো আমার কপাল ভালো তোমার মতো একটা ছেলেকে লাইফে পেয়েছি।
দেখো আমি এখন রাতে ঘুমাতে পারিনা ভয় করে। রুমে থাকতে ভালোলাগেনা ফাকা ফাকা লাগে। খেতে গেলে শুতে গেলে সব সময় তোমায় মনে পরছে।
আমি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে প্লিজ তানভীর আমাকে নিয়ে যাও আমি এখানে থাকবোনা।
- ( মেয়েটা যেভাবে বলছে আমি আর কিছুক্ষণ কথা বললে নিশ্চিত মেয়েটাকে মেনে নিবো কিন্তু না সেটা পরে) আমি বললাম দেখুন অনেক কষ্ট দিসেন আবারো দেওয়ার নতুন প্লান তাইনা। আমার এখানে এসে এখন আমার অফিসের মানুষদের সামনে অপমান করবেন তাইনা। বুঝেছি আমি, দেখুন ভালো হয়ে যান সময় আছে আর হ্যা আমাকে আর ফোন দিবেন না। এই বলে কেটে দিয়েছি ফোন।
-হেলো হেলো ( ফোন কেটে গেছে)
নশী কাদছে এখন, সে ভাবছে সত্যিই তো ছেলেটাকে এত্ত অপমান করেছি সেতো এটা ভাব্যেই। সে সারারাত কাদলো সকালে চোখ মুখ ফোলা নিয়ে নিজে গেলো।
ওমনি মা ওকে জিজ্ঞাস করলো, নিশী এদিকে আসোতো মা। তোমার চোখ মুখ ফোলা কেনো?
নিশী মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো আর বলল মা আমি আর পারছিনা। প্লিজ আপনার ছেলেকে এনে দিন।
মা বললেন, পাগলী মেয়ে দু'দিনেই চোখে হারাচ্ছো আমার ছেলেকে। আচ্ছা তানভীর কে বলে ওর কাছে পাঠিয়ে দিবো খুশি তো?
হ্যা মা আমি খুব খুশি, সত্যি বলবেন তো? হ্যা সত্যি।
অফিজে কাজ করছিলাম এরি মধ্যে আবার নিশির ফোন। ভাবলাম ফ্রি আছি যখন একটু মজা করি ওর সাথে।
আমি মিথিলা কে আমার কেবিনে ডেকে পাঠালাম। ( কলিগ)
কারন ও জানে আমার জীবনের কাহিনী। ওই বুদ্ধি দেয় নিশীকে শায়েস্তা করার। এরপর মিথিলাকে ফোন দিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই বলল তুমি চুপ করো দেখো কি বলি আমি। ফোন রিসিভ করতেই,,
- কি হলো এতো সময় লাগছে কেনো ফোন উঠাতে?
- কাকে চাই?( মিথিলা)
- নিশী চমকে উঠলো মেয়ের কন্ঠ শুনে। সে নাম্বার চেক করে দেখলো ঠিক আছে কিনা, নাহ ঠিকি আছে তাহলে ওই মেয়েটাকে? এই আপনি কে?
- আমি যে হই আপনি কে হাহ,দেখুন এখন খুব ব্যস্ত আছি আমরা পরে ফোন দিন। এই তানভীর এদিকে আসোতো দূরে কেনো। এই বলে ফোন কেটে দিলো। এরপর হাসতে লাগলো,,
আমি বললাম কি হলো হাসছো কেনো? আর কি বললা এগুলা হাহ আমি ভাবলাম আচ্ছা করে বকে দিবা আর এগুলা কি বললা। ধুর আমার কথা কি ভাব্বে এখন মেয়েটা।
মিথিলা বলল, আরে বোকা নিশীর মনে জেলাস ঢুকিয়ে দিয়েছি এখন বুঝবে ঠেলা কারে কয় আর হ্যা ফোন কেটে দিবা যতবার কল দিবে এরপর অফ করে দিবা। আর রাতে ফোন অন করে নিশীকে কল দিবে। হাসতে হাসতে চলে গেলো।
আমি নিশীর কথাটা বুঝলাম, কারন কোনো বাঙালী মেয়ে নিজের মানুষটির পাশে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্যই করতে পারেনা। যাক ভালোই হয়েছে, এখন বুঝা যাবে মেয়েটা আমাকে কতোটা ভালোবাসতে পেরেছে।
ঠিক রাতে আমি ফোনটা অন করাম অন করতেই ১৫০০ টা মিসড কল পেলাম। আমি অবাক হয়ে গেলাম এতোবার কল দিয়েছে সেটা আবার নিশী।
৪০ সেকেন্ড এর মধ্যেই নিশীর কল। কল ধরতেই..
- এই এই কোথায় তুমি? তুমি ঠিক আছোতো? তোমার মোবাইল অফ ছিলো কেনো? আর ওই মেয়েটা কে যে ফোন ধরেছিলো বলো বলো?
- উফফ এতো প্রশ্নের উত্তর একসাথে কিভাবে দিবো আর কেনই বা আপনাকে দিবো হাহ? কে আপনি? আপনি আমার হন কি?
- আমি কি তোমার কিছুই হই না ( কান্না জরিত কন্ঠে)
- নাহ কিছুই না। আর হ্যা তখন ওই মেয়েটা ছিলো একজন। জানেন মেয়েটা আমার অনেক কেয়ার করে। আমার জন্য প্রতিদিন দুপুরে রেধে নিয়ে আসে৷ কি যে সুন্দর বিরিয়ানি রান্না করে উফফ। ভাবছি মেয়েটাকে বিয়ে করে এখানেই সেটেল হয়ে যাবো। আর হ্যা আপনাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে দিবো আপনি আপনার ওইইইই ছেলেকে বিয়ে করে নিবেন হ্যা রাখি।
- কুত্তা ছেড়া তোর বিয়ে করা বের করছি দাড়া ( কেদে কেদে) আমাকে রেখে আরেক জনকে আনার ধান্দা৷ আবার ডিভোর্স বের করছি আমি। এই বলে নিশী ফোন কেটে দিলো,,,
আর জোরে জোরে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো মা মা মা মা এদিকে আসুন তাড়াতাড়ি।
- কি হয়েছে বৌমা? (আম্মু)
- মা মা আপনার ছেলে, আপনার ছেলে হু হু হু (কান্নার জন্য ঠিকমতো বলতে ও পারছেনা)
- আহা কান্না থামাও, বলবেতো কি হয়েছে?
- আপনার ছেলে আরেকটা মেয়ের সাথে ওখানে হু হু হু আমাকে বলেছে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। আপনি কিছু করেন মা আমি ওখানে যাবো হু হু হু.
- বৌমা আজ সত্য একটা কথা বলবে?
- জ্বী মা বলুন!
- সেদিন আসলে কি হয়েছিলো বলো?
নিশী পা জড়িয়ে ধরলো হুট করেই মার। এরপর বলল মা সেদিন সব কিছু আমি করেছিলাম ইচ্ছা করেই। আসলে মা আমার অনেক রাগ ছিলো ওর ওপর। ও আমাকে একদিন সবার সামনে চড় দিয়েছিলো দোষ অবশ্য আমারি ছিলো কিন্তু মা আমি বুঝতে পারিনি।
আমি তানভীর কে এরপর একদিন কলেজেও সবার সামনে অপমান করেছি মা। এবাড়িতেও অনেক কষ্ট দিয়েছি ওকে। বাসর রাতে ওকে নিচে আমি শুতে দিয়েছিলাম মা হু হু হু ( কেদে কেদে)।
মা এরপর আমি আমার ভুল বুঝতে পারি কিন্তু মা সে চলে গেলো ঠিক দূরেই।
ছিহহহ তুই আমাদের মেয়ে হয়ে এমন একটা জঘন্য কাজ করেছিস ছেলেটার সাথে। ( নিশীর বাবা মা) দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে এতক্ষন শুনছিলেন সব কিছু।ভাগ্যিস আজ তোকে দেখতে এসেছিলাম যার কারনে সব জানতে পারলাম।
বাবা ও সব শুনে তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। যে মানুষটা কখনো কাদেনি আজ তার চোখের জল বাধ মানছেনা। তিনি বললেন এই হাত দিয়ে পিটিয়েছি ওকে ওর কোনো কথাই শুনিনি ছি। কতটা খারাপ বাবা আমি কতো খারাপ ভেবেছি আমার নিষ্পাপ ছেলেটাকে ছিঃ। নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছে এই মুখ নিয়ে ছেলেটার সামনে দাড়াবো কিভাবে আমি।
- আমি আগেই বলেছিলাম আমার ছেলেটা এমন করতে পারেনা। ( আম্মু কেদে কেদে)
- (নিশি মাথা চুপ করে আছে)
এরপর সবাই একসাথে বসলেন বিষয়টির একটা সমাধান করার জন্য৷ তারা বিষয়টি বুঝে বললেন এটা নিশীর ছেলে মানুষী হয়ে গেছে। সে জেদের বসে অনেক খারাপ করে ফেলেছে৷
আর তানভীরের মনে জমে আছে অভিমান। নিশী শুনো অপরাধ তুমিই করেছো এর মাসুল তোমাকেই দিতে হবে। এখন ওর কাছে ক্ষমা চাও ছেলেটা অনেক ভালো তোমার ফিরাবে না। ( সবাই সহমত দিলেন বাবার কথায়)
অফিস শেষ খুব ক্লান্ত গা টা সবে মাত্র এলিয়েছি বিছানায় এমন সময় মায়ের ফোন..
- আসসালামু আলাইকুম আম্মু, কেমন আছেন আপনি?
- হ্যা বাবা ভালো, তুমি কেমন আছো?
- জ্বী আম্মু ভালো।
- রাতে কি খেয়েছো?
- এইতো আম্মু পাশের হোটেল থেকে বিরিয়ানী খেয়েছি।
- কিহহহ তুই বাইরে থেকে খেয়েছিস। তুই না রান্না পারিস,? তাহলে বাইরে কেনো
- হ্যা মা রান্না পারি কিন্তু অফিস শেষে আর ইচ্ছা করেনা।
- কালি নিশীকে পাঠিয়ে দিচ্ছি দাড়া (কড়া ভাবে বললেন)
- না আম্মু ওক দরকার নেই, আমি রান্না করে নিবো।
- আমার মুখের ওপর কথা বলিস চুপ, কাল ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি এটাই আমার শেষ কথা মনে থাকে জেনো। বলেই কেটে দিলো মা....
আমি তো হাসছি কারন, আমিতো এটাই চেয়েছিলাম। এটা আমার প্লান ছিলো আমি জানতাম নিশীকে এমন বললে ঠিক সে এমন কিছু করবে যাতে করে তাকে এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
দুপুরে নিশী ফোন দিলো..
- আমি বাস স্টান্ডে নেমেছি তুমি আসো তাড়াতাড়ি
- জ্বী ওখানেই দাড়ান আমি আসছি
বাস স্টান্ডে গিয়ে দেখি নিশী লাগেস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে লাগেস নিলাম কিন্তু কথা বললাম না।
এরপর রিক্সা ডাকলাম ওকে উঠিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম শাহজাহান ভিলায় নামিয়ে দিবেন। আর নিশী আপনি যান আমি অন্য রিকশায় আসছি..
- তুমি ওঠোনা প্লিজ, আমি তোমার সাথে বসবো
- (রাস্তার মধ্যে তাই সিন ক্রিয়েট করলাম না) উঠে বসলাম নিশীর পাশে।
- আমি যতই সরে বসছি নিশী ততই গেষে বসছে আবার আমার এক হাত ধরে রেখেছে।
আসলে আমি সরে আসছি এজন্য যে, আমার খুব সুড়সুড়ি লাগছিলো :/
বাসায় চলে এলাম৷ এরপর দেখি নিশী ঘরের আনাচে কানাচে কি জেনো খুজছে! আমি বললাম..
- কি খুজেন ওখানে?
- মেয়েটা কোথায়?
- মেয়েটা মানে?.
-যে কথা বলেছিলো?
- ওহ ওইটা আমার কলিগ মজা করেছিলো তখন। আর আপনি আমাকে কি চরিত্রহীন ভাবেন?
- নাহ কিন্তু ভয় লাগে
- কিসের ভয়?
- তোমাকে হারানোর
- হাহাহাহা
- হাসছো কেনো?
- এমনিই
- আর তুমি আমাকে আপনি আপনি বলো কেনো?
- তুমি বলার অধিকার যখন হবে তখন না হয় বলবো।
এমন সময় সিম কাস্টমার কেয়ার থেকে কল আসলো আমি কল কেটে দিয়ে কানে ধরে বললাম, হেলো কে মিথিলা?
বাবু কি করো? আরে রাগো কেনো? আরে আমার পাশে ওইটা একটা মেয়ে ছিলো লিফট চেয়েছিলো এজন্য দিয়েছিলাম সত্যি।
আচ্ছা ঠিকাসে তুমি রাত ৮ টায় রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা কইরো আমি আসবো।
(নিশীকে দেখিয়ে দেখিয়ে হুদাই এক্টিং করছিলাম) ফোন কাটার ভাব করে ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম। মেয়েটার দু'চোখ বন্যার পানি ভর করেছে৷
হুট করে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়েছে৷ আর কে ওই পেত্নী হ্যা তুমি যাবেনা একদম হু হু হু (কেদে কেদে)
আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো আমি হাসি গুলা গিলে ফেললাম, এরপর বললাম ছাড়ুন ছাড়ুন আমাকে। যান গিয়ে ফ্রেশ হন, খেয়েছেন কিছু? বাসায় কিছু নেই আপনি অপেক্ষা করুন আমি রান্না করছি এই বলে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াতেই নিশী বলল,,
- দাড়াও ওখানে, আমি আসছি কি জন্য হ্যা? যাও ফ্রেস হয়ে বসো আমি নাস্তা করে আনি।
- আমি বললাম আচ্ছা
আমি রান্না ঘরে উকি দিতেই দেখলাম নিশী খাবারে কি যেনো একটা দিলো।
আমি বুঝতে পেরেছি কিছু একটা দিয়েছে ও যাতে করে আমি যেতে না পারি।
আমিতো ওকে জ্বালানোর জন্য জাস্ট মজা করেছি, উহু একদম ওগুলো খাওয়া যাবেনা বাবা। হুদাই বিপদে পরবো আমি এক কাজ করি খাবার গুলা সরিয়ে রাখি। সরিয়ে কোথায় রাখবো? এক্সচেঞ্জ করে দেই হাহাহাহা। এতে হলো কি আমার গুলা ও খাবে ওর গুলা আমি।
নিশীর ডাক,,
এই যে এদিকে আসো নাস্তা করে যাও।
- হ্যা খুব একটা নয় তবে ভালো হয়েছে। তো আপনি বসে আছেন কেনো? খান
- নাহ আমার খিদে নেই তুমিই খাও
- ( মেয়েটা চালাক ও বটে বাহ মনে মনে বলছি) আমি বললাম না খেলে নাই। মুখে হাই তুলে বললাম আমার ঘুম পাচ্ছে আয়ায়ায়া,,,, ( হুদাই এক্টিং)
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি দেখেছি নিশীও পিছু পিছু এসেছে। আমি শুয়ে পরতেই নিশী বলছে,,,
ইসসসস শখ কতো হু! আমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে দেখা করতে যাবে। দিয়েছি খাবারের সাথে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে হাহ,এখন ঘুমাও বাছাধন ।
নিশীর এমন কথা শুনে আমার যে কি হাসি পাচ্ছিলো হাহাহাহা বলার বাহিরে। আমি চুপচাপ শুয়ে আছি, দেখি নিশী কি করে!
একটু পর নিশী আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষন পর নিশী আমার বুকে এসে মাথা রাখলো। চুল থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে আসছে। আচ্ছা মেয়েদের চুলে এতো মিষ্টি গন্ধ কেনো? ছেলেদের কাবু করার জন্য মেয়েদের চুলের মিষ্টি গন্ধই যথেষ্ট। এমন উলটাপাল্টা ভাবছিলাম আমি আমার মনে হচ্ছিলো ডুবে থাকি এই চুলের মিষ্টি গন্ধের মাঝে।
আমার মাথায় তখন আবার দুষ্টুমি বুদ্ধি এসে ভর করলো। আমি দু'হাত দিয়ে নিশীকে জড়িয়ে ধরলাম দেখি নিশী কেপে উঠলো। সে ভাবছে হয়তো আমি ঘুমের মাঝে ধরেছি, আমি হাল্কা চোখ খুলে দেখি সে লজ্জায় কালা হয়ে গেছে 😷 আসলে তখন লাইটস অফ ছিলোতো এজন্য। 😂
আমি নিশীর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু একে দিয়ে বলতে শুরু করলাম। মিথি তোমার কপালটা এতো চিকন ক্যান হ্যা? যাই হোক সমস্যা নাই তুমি আসছো সোনা এটাই অনেক। এই তুমি এতো চিকন চিকন ক্যান হ্যা ইয়োগো করো নাকি? বাহ ভালো হলো কেউ আর বলবেনা তানভীরের বউ মুটকি।
এই মিথি এসো তোমায় একটু আদর করি,,, মি,,, এরি মধ্যে নিশী মুখ চেপে ধরেছে। আর পাশে গ্লাসে রাখা পানি আমার মুখে মেরে দিলো।
- এই এই এটা কি হলো?
- ভালো হইসে 😠 অন্য মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে? হাহ বেড় করছি দাড়াও
- আজিব তো? আর আপনি আমার বেডে কেনো নামুন নামুন। আর আমি এখানে কেনো? আমার তো মিথিলার সাথে দেখা করার কথা। ওহ শিট এখন ১১ টা বাজে,,,
- কিহহহ আবার ওই মেয়েটাকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে ( কলার্ট ধরে)
- এই ছাড়ুন ছাড়ুন কি করছেন হ্যা। মরে যাবোতো
- কলার্ট ধরলে কেউ মরে নাকি?
- হ্যা আমি মরি ভয়ে
- হিহিহিহি
- নামুন নামুন এখান থেকে। সোফায় গিয়ে ঘুমান অনেক হইসে
মুহুর্তেই নিশীর মুখ কালো হয়ে গেলো, চোখ গুলায় পানি ভর্তি হয়ে গেলো। দেখলাম মেয়েটা সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো।
ঠিক এক ঘন্টা পর নিশীকে বেডে শুইয়ে দিলাম আর আমি চলে গেলাম সোফায়।
ভোরে উঠে নামাজ পরেই চলে গেলাম অফিসে।
নিশী ঘুম থেকে উঠে দেখে সে বিছানায় সে খুব অবাক হয়। আবার পরক্ষণেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে ভাবে তানভীর হয়তো তাকে মাফ করে দিয়েছে।
দুপুরের দিকে নিশীর কল,,
- জ্বী বলুন? (আমি)
- লান্স করেছো.?
- জ্বী এইতো করবো মিথিলার সাথে, মেয়েটা বিরিয়ানি রান্না করে এনেছে । উফফফ কি যে রান্না করে, মেয়েটাকে খুব শিঘ্রই ঘরে তুলতে হবে
- ( কান্নার শব্দ)
- হেলো
- ( কান্নার শব্দ একটু বেড়ে গেলো)
- আমি যত্তসব বলে ফোন টা কেটে দিলাম।
নিশী দুপুরে না খেয়ে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়লো। সে স্বপ্নে দেখতে পেলো,, তানভীর আবার বিয়ে করেছে। এমন দেখেই সে ঘুম থেকে জেগে উঠলো।
সে নিজে নিজে বলছে যা করার তারাতারি করতে হবে নইলে আমা স্বামীকে কেউ নিয়ে যাবে নাহ আমি এটা হতে দিবো না। আমি আজি ক্ষমা চাবো,,
রাতে বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি নিশী আমার চারপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করছের। আমি বললাম কিছু বলবেন?
- নাহ কিছুনা। মানে বলছিলাম কি ডিনার করবে চলো আমি নিজে হাতে রান্না করেছি।
- সরি আসলে ডিনার ও মিথিলার সাথে করে নিয়েছি।
- ওহ ( মাথা নিচু করে ফেলল)
আমি দেখলাম নিশী পাশের রুমে চলে গেলো। আমি উকি দিয়ে দেখললাম মেয়েটা বালিশে মুখ গুজে কাদছে।
ওর কষ্ট দেখে যে আমার কষ্ট হয় কারন আমিতো ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু এতো সহজে তো ওকে মেনে নেওয়া যাবেনা এর শাস্তি ও পেতেই হবে।
ইদানীং আমি নিশীর সাথে প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলিনা৷ ও কিছু বলতে গেলেও এড়িয়ে চলে যাই৷ অফিস টাইমে ফোন দিলেও ধরিনা। মেয়েটা আমার জন্য রান্না করে কিন্তু আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসি।
ওর সামনে হুদাই ফোন নিয়ে কথা বলি ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে। আর ও তখন মাথা নিচু করে শুধু কাদে।
এই ৭ দিন যাবত নিশীকে বড্ড অবহেলা করছি। মেয়েটা এই কদিনে বড্ড শুকিয়ে গেছে খেয়াল করলাম। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে, ঠোট গুলা শুকিয়ে গেছে। আবার চোখ গুলা ফোলা ফোলা আর লাল হয়ে আছে।
রাতে শুয়ে ছিলাম আনুমানিক তখন মাঝরাত ৩টা বাজে। আমি গুনগুন কান্নার আওয়াজ পাই। আমি নিচে তাকিয়ে দেখি নিশী মোনাজাত ধরে কাদছে আর বলছে,,,
হে আল্লাহ আমি না বুঝেই এই মানুষটার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তাকে অনেক অপমান আর অবহেলা করেছি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ এই মানুষটাকে আমি হাসরের ময়দানে ও চাই।
হে আল্লাহ আমি অনেক পাপ করেছি আমাকে কি ক্ষমা করবেন ওই মানুষটা। তাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি তাকে ছাড়া এক মুহুর্ত ও ভাবতে পারছিনা আমি। স্বামীর পায়ের নিচে যে আমার বেহেস্ত। আমি আমার স্বামীর অধিকার চাই।
নিশীর এমন মোনাজাত শুনে আমার চোখ দিয়ে অজান্তেই দু'ফোটা পানি ঝরে পড়লো।
আমি গিয়ে আবার শুয়ে পরলাম। আর ভাবছি মেয়েটা যেহেতু তার ভুল বুঝতে পেরেছে আর কি চাই। সময় এসেছে আপন করে নেওয়ার।
কিছুক্ষন পর অনুভব করলাম কেউ আমার পা ধরেছে। আমার পা গুলা দেখলাম ভিজে যাচ্ছে। মেয়েটা কাদছে তবুও আমাকে জাগাচ্ছেনা নিরবে পা ধরে কাদছে।
আমি আর পারলাম না আমি হুরমুড়িয়ে উঠে পড়লাম৷
- সরি সরি আমি আসলে চাইনি তোমাকে জাগাতে। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ.. (নিশী)
- আমি চুপ করে আছি ( ততক্ষনে আমার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু গুলা ঝরে পরছে)
- একি তুমি কাদছো কেনো? কি হয়েছে তোমার? এই তুমি ঠিক আছোতো?
-আমি দু'হাত প্রসারিত করে বললাম আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?
বলতে দেরী মেয়েটা এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো আরেকটু হলে পড়েই যেতাম। ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছি, নিশীর কানে কানে বললাম তোমার স্থান আজ থেকে এই বুকে বুঝলা।
- তুমি আবার একটু পর বলবে নাতো যে,সব ছিলো প্রতিশোধ?
- ছি কি বলো? একদম নয় নিশী। তোমাকে তো আমি মেনে নিয়েছি যখনি কবুল পড়ে বিয়ে করেছি তোমাকে।
- তানভীর প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আর এমন করবোনা। কথা দিচ্ছি অনেক অনেক ভালোবাসবো তোমাকে। আমি অনেক খারাপ তাইনা? তোমায় কতো কষ্ট দিয়েছি। তুমি সব মুখ বুজে সহ্য করেছো।
ছি আর আমি তোমার সাথে না জেনে বুঝে কতো খারাপ ব্যবহার করেছি। এখন নিজের প্রতি নিজেরি খারাপ লাগছে ছিহ।
আমি বললাম, ক্ষমা তো তখনি করে দিয়েছি যখন দেখেছি আমাকে অপমান করার পর তোমার মুখের মিষ্টি হাসিটা।
- তুমি এতো ভালো কেনো হ্যা? (নিশী)
- তোমার বর তো এজন্য
- সত্যি আমাকে ক্ষমা করেছোতো?
- হ্যা গো হ্যা সত্যি। কেনো তুমি দেখছোনা আমি তোমাকে তুমি করে বলছি।
নিশী তখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,আর কেদে কেদে আমার টি-শার্ট প্রায় ভিজিয়ে ফেলেছে।
আমি বললাম এতো জোরে জড়িয়ে ধরেছো কেনো বেথা পাচ্ছিতো ছাড়ো।
- ওহহ তা লাগবে কেনো? নতুন কাউকে আনবে তুমি আমি জানি। আমি ছাড়বো না হু
- উহু কে আসবে?
- কেনো আপনার মিথিলা না ফিথিলা!
- হাহাহাহাহাহা,, ওওও ( মনে মনে আবার একটু শয়তানি বুদ্ধি আসলো)
আর বলোনা মেয়েটা এত্তো কিউট উফফ দেখলে আর চোখ সরাতেই ইচ্ছা করেনা । কি তার মায়াবী চোখ মনে হয় ডুবে থাকি সবময়। আর তার গোলাপী ঠোট জোড়া আহা দেখলেই আর বলতে পারলাম না,,,
হুট করেই এক জোড়া ঠোট এসে চার ঠোঁট এক করে দিলো। গায়ের রক্ত গুলার মধ্য দিয়ে মনে হয় বিদ্যুতের মতো শকড চলে গেলো।
সেযে কি এক অনুভুতি সেটা বোঝানো অসম্ভব। কয়েক মিনিটের মধ্যে নিজেকে মনে হয়েছিলো কোনো এক সুখের সাগরে ভেসে আছি আহা।
- বাহ খুব মিষ্টি তো? কি দিয়েছিলা ঠোঁটে?
- লিপিস্টক দিয়েছিলাম (লজ্জায় মাথা নিচু করে)
- কিহহহ ছিহহহ এগুলা মাইনষে দেয় ভ্যা ভ্যা ভ্যা, এখন তো মনে হয় আমার পেট খারাপ হবে। ( ওকে রাগানোর জন্য)
- কি বললা তুমি আবার বলোতো?
- এই পচা লিপিস্টিক দিয়েছো তুমি এখন তিতা তিতা লাগছে ভ্যা ভ্যা ( বমির ভাব করতে লাগলাম)
- এহহহ এতোক্ষন পর ঢং দেখানো হচ্ছে? মিথ্যা বলছো আমি জানি হু
- একদম নয়, সত্যি এই দেখো বমি করতে চাচ্ছি কিন্তু হচ্ছেনা :/
- কিহহহ ইচ্ছা করে করতে চাচ্ছো? দাড়াও ওখানে আজ হচ্ছে তোমার....
- একি কোমরে শাড়ি গুজছো কেনো?
- দাড়াও ওখানে দেখাচ্ছি আমি।
আমি ওর কথা বলার আগেই কোলে তুলে নিলাম। এরপর গুটিগুটি পায়ে ছাদে নিয়ে গেলাম। শীতের রাত যেহেতু চাদর ছিলো তাই এখন দুজন এক চাদরের নিচে বসে আছি।
নিশী আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মেয়েটা এক মুহুর্তের জন্যও আমার কাছ থেকে সরছেনা যদি চলে যাই আমি।
-নিশী বলল, এই তুমি সত্যি কি ওই মেয়েকে বিয়ে করবে?
- কোন মেয়ে?
- দেখো ঢং করবানা। ওইযে মিথিলা
- অহহহহ হাহাহাহা, আরে ওইটা আমার কলিগ ও জানে আমার আর তোমার সব কথা। আর ওই আমাকে এগুলা করতে বলে আসলে সব ছিলো আমাদের প্লান।
- কিহহহ,,, ইচ্ছা করে আমাকে ভয় দেখিয়েছো তুমি৷ তুমি আমাকে ইচ্ছা করেই কাদিয়েছো তুমি একটা পচা বর
- এমন না করলে কি তুমি আমার কাছে আসতে বলো?.
- জানিনা হু
- এমন না করলে তুমি কখনো আমাকে ভালোবাসতে এমনকি আমাকে বুঝতেও পারতে না।
- হইসে হইসে হু, আজ থেকে মেয়ে কলিগ থেকে দূরে দূরে থাকবা। আর কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেনা বুঝলা?
- এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমি এগুলা করে বেড়াই? 😱
- একদম নয় কিন্তু তবুও দেখবেনা ঠিকাসে।
- আচ্ছা ম্যাম ঠিকাসে খুশিতো এবার?.
- হুম খুব খুশী
- নিশী একটা জিনিস লক্ষ করেছো আজকের রাতটা জেনো শেষ হচ্ছেনা।
- কেনো তুমি কি চাও ফুরিয়ে যাক?
- একদম নয় এমন মধুময় একটা রাত প্রিয়তামার সাথে তার পাশে কেউই কি চাইবে এটা শেষ হয়ে যাক বলো?
- বাহ কবি গিরি শুরু হয়ে গেছে।
- হুম কেনো ভালো লাগছেনা?
- হুম লাগবে যদি আমাকে এখন একটা শুনাও...।
- আচ্ছা তবে শুনো,,
দিনশেষে আমি তোমারি হবো
থাকিনা যতই দূরে,
সন্ধাকালে গান শুনাবো
সন্ধ্যা পাখির সুরে।
প্রতিটি ভোরের আলোর মিছিলে তোমায় রাঙিয়ে দিতে
হবো তোমার প্রভাত বেলার রবি।
তুমিই আমার প্রথম ওগো
তুমিই আমার শেষ
থাকবো দুজন পাশাপাশি
জীবনে আর চাই কি বিশেষ।
- বাহ মুগ্ধ আমি, আমাকে কিন্তু রোজ এমন করে কবিতা শুনাতে হবে কিন্তু?
- আচ্ছা শুনাবো
- এই সত্যি তোমার ওই মিথিলার সাথে কিছু নেইতো?
- তুমি আমাকে সন্দেহ করছো নিশী আমাকে :/
- হুম তো
- হ্যা আছে তো সম্পর্ক 😌 ও হ্যা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। একটা খাম ওকে দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য। আর হ্যা মিথির সাথে বিয়েটা সেরে নিবো ভাবছি,,
- খামটা নিয়ে খুলে নিশী দেখলো এতো কক্সবাজারের টিকিট দুইটা?
- কেনো তুমি কি ভাবছিলা?
- আমিতো ভেবেছিলাম ডিভোর্স পেপার
- হেহেহে কেমন তোমাকে ভড়কে দিলাম বলো?
নিশী হুট করেই আমার কলার্ট ধরে বলল'আর কখনও কষ্ট দেবে'? এমন করে মজা করবে আর'?
'উঁহু, আর কখনও না'।
'মনে থাকবে তো'?
'থাকবে গো, থাকবে'।
'যদি কখনও কষ্ট দাও না তো সেদিনই তোমাকে ডিভোর্স দেবো হু'।
মিলির কপালে চুমু দিয়ে বললাম,
হানিমুন টা কিভাবে করবো সেটা নিয়ে ভাবো আগামীকাল আমরা জাচ্ছি।
মা সেদিন বলল তার নাকি দাদী হতে ইচ্ছা করছে। এ কথা বলতেই নিশী লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো।
আমি তখন নিশীর কানে কানে বললাম,,
হানিমুনের রাত গুলো যদি শেষ না হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?
নিশী বলল, যাহ তুমিই বলো দুষ্টু।
মান অভিমানের পর্ব শেষ করে এভাবেই একটি ভালোবাসার পূর্নতা পেলো।
লেখাঃ তানভীর আহমেদ
ধ্যাত ভাল্লাগেনা! ভার্সিটির গেইটে এই মেয়েগুলা প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকবেই আর ভদ্র কোনো ছেলে দেখলেই তাকে ধরে মজা করবে।
বরাবরের মতো আজ ওদের কবলে পড়ে গেছি আমি। প্রত্যেকটা দিন আমাকে পচায়, আসলে আমি বাকি দের মতো এতো ফ্যাশন মেরে ভার্সিটি আসিনা।
একটা মোটা ফ্রেমের গোল চশমা পরি আর ঢিলেঢালা একটা জিন্স আর শার্ট আর পেয়ে এক জোড়া কমদামী চপ্পল।
হ্যা আমিও বিত্তশালী পরিবারের ছেলে কিন্তু আমার মর্ডান ভাবে চলতে ভালো লাগেনা। আমি চাই বাকি দশটা মানুষের মতই সাধারণ ভাবেই চলতে।
- এই দেখ দেখ খ্যাত বাবু যাচ্ছে, হাহাহাহা
হুট করেই ওদের দলের সুন্দরী মেয়েটা এসেই আমার চশমাটা খুলে নিলো। আমি বললাম, দেখুন আমার ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ন ক্লাস আছে আমার।
সেই মেয়েটা বলল, বাবু বাবু একদিন ক্লাস মিস দিলে তেমন কিছু হবেনা। চলো আজ আমরা এখানে বসে আড্ডা দেই ।
- ঠাসসসসসসসস
- কি ভাবছেন আমার গালে পড়েছে! নাহ ওই মেয়েটাকে দিয়েছি। মেজাজটা এখন চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার।
আমার এমন ব্যবহারে সব কয়টা মেয়ে হা হয়ে গেছে। আমি তাদের উদ্দ্যেশ্যে বললাম,, কি পেয়েছেন কি আপনারা?
কোনো ছেলে এসে যদি আপনাদের পিছে ঘুরে অথবা ডিস্টার্ব করে তাহলে তো বলেন, ঘরে মা বোন নেই! সাথে তো গালাগালি আর থাপ্পড় ফ্রিতে দিয়ে চৌদ্দ গুষ্ঠী উদ্ধার করে দেন।
আবার সেই আপনারাই, কোনো বোকা সোকা ছেলে পেলেই ধরে ইনসাল্ট করেন। কেনো আপনাদের লজ্জা করেনা? আবার নামও দিয়েছেন খ্যাত।
এখন আমার কি বলা উচিত হ্যা? আপনাদের ঘরে বাপ ভাই আছেতো? থাকলেতো মনে হয় এমন ভাবে কারো সাথে ব্যবহার করতেন না।
আমার এভাবে সিনক্রিয়েট করাতে দেখলাম আশেপাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। আমি সেই সুন্দরী মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
আমি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে ক্লাসে চলে গেলাম। আজ খুব হাল্কা হাল্কা লাগছে নিজেকে, মনে হচ্ছে আজ উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে মেয়েগুলিকে।
ভালোভাবেই দিনকাল চলছিলো, এখন আর কেউ বিরক্ত করেনা।
সেদিন ক্যাম্পাসের বকুল তলায় বসে বসে ক্লাসের এসাইনমেন্ট গুলা দেখছিলাম। এরি মধ্যে সেই মেয়েটা এসে পাশে বসলো।
- সরি (মেয়েটা)
- ইটস ওকে।
- আসলে বান্ধবীদের সাথে মজা মজা করতে করতে এতোটা নিচে নেমে যাবো ভাবিনি। সত্যি আমি দুঃখিত প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।
- আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক।
মেয়েটি হুট করেই বলে উঠলো,, আমরা কি বন্ধু হতে পারিনা?
- হ্যা হতে পারি
- আমার নাম নিশী
- জ্বী আমি তানভীর
এভাবেই মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়৷ মেয়েটি ছিলো একাউন্টিং বিভাগের আর আমি ছিলাম ইংরেজি বিভাগের।
মাঝে মাঝে দেখা সাক্ষাত হতো আর ফেবুতে রেগুলার মেসেজের ছোড়াছুড়ি হতো।
তানভীর! এই তানভীর!
- জ্বী আম্মু
- তোর বাবা ডাকছে তোকে
- আচ্ছা যাচ্ছি
-বাবা ডেকে ছিলেন আমাকে?
- হ্যা, তুমি রেডি হয়ে নাও। তোমাকে নিয়ে আমরা আমার এক বন্ধুর বাসায় যাবো।
- আচ্ছা বাবা
বাবাকে বলার পরে জানতে পারলাম তার ছোট বেলার বন্ধু রহমান আংকেল সে নাকি দেশে এসেছে। তার সঙ্গেই দেখা করতে যাচ্ছেন বাবা আজ আমাদের নিয়ে।
রহমান আংকেলের বাসায় যাওয়ার পর সে কি আপ্যায়ণ । ভদ্রলোকটি আপ্যায়ণের কোনো ত্রুটি রাখেননি।
আর এতোদিন পর দু-বন্ধুর দেখা হওয়ার পর আর যা হয়, মজে গেলেন আড্ডায়।
এরমধ্যেই হঠাৎ,,
- তানভীর তুমি?
- জ্বী নিশী আপনি?
-রহমান আংকেল, মামুনী তুমি একে চিনো?
- হ্যা বাবা, আমরা একি ভার্সিটিতে পড়ি। আবার আমরা দুজন বন্ধুও বটে।(নিশী)
আমি বুঝতে পারলাম এটা ওদেরি বাসা আর ওই রহমান আংকেল ওর বাবা।
আস্তে আস্তে করে আমাদের দু-পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে লাগলো। নশী বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনি আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করতো।
আমি আবার ওর থেকে সব সময় দুরেই থাকতাম।কারন এসব মেয়েদের দিয়ে বিশ্বাস নেই,এদের ঘটে ঘটে বুদ্ধি। কখন না আবার ফাসিয়ে দেয়।
হ্যা আমাকে ঠিক সে ফাসিয়ে দিয়েছিলো, তবে শুনুন সেই কাহিনী।
মেয়েটা আমাদের বাসায় প্রতিদিন আসতো। আমার মা বাবা ও নিশীকে অনেক ভালোবাসতো।
ছোট বোন ছিলো তাই তার সাথে আড্ডা মারতে আসতো। তো একদিন আমাকে বলে,,
- তুমি আমার সাথে তেমন কথা বলনা কেনো?
- আসলে আমি মেয়েদের সাথে একটু কমি কথা বলি।
- আমাকে কি পর মনে হয়? হু
- নাতো সেটা মনে হবে কেনো
- তাহলে আজ থেকে আমার সাথে আড্ডা দিবে হ্যা। ভার্সিটিতে লাগবেনা তোমাদের বাসায় দিলেই হবে।
মেয়েটাকে বিশ্বাস করতে লাগলাম। এরপর থেকে রেগুলার আমাদের কথা হতে লাগলো। ফেবুতে মেসেঞ্জারে কথা হতে লাগলো।
এরপর এক সময় নিশী আমাকে প্রপোজ করে। আমি কিছুদিন ভেবে হ্যা বলে দেই।
এরপর থেকে আমাদের মধ্যে কথা বলা একটু বেশীই বেড়ে যায়।
সকালে ঘুমিয়ে ছিলাম,
হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দিলো। এরপর দেখি আমার বিছানা ভেজা,,,
আমিতো ভয় পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়াই আর ভাবতে থাকি, এই বয়সে বিছানায় ইয়ে করে দিলাম। ছি ছি ছি
ঠিক এমন সময় হিহিহিহি করে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। দেখলাম নিশী হাসছে, বুঝলাম নিশি পানি ঢেলেছে।
এভাবেই চলছিলো আমাদের প্রেম কাহিনী,, সেদিনের ঘটনা,,,
দুপুরে শুয়ে ছিলাম। এমন সময় নিশী রুমে আসলো এসেই দরজা আটকে দিলো।
- একি তুমি আমার রুমে এই সময়? বাবা মা কি মনে করবে এখন?
- নিশী বলল চুপ। আজ আমার সময় এসেছে প্রতিশোধ নেওয়ার। শোধ তুলবো আক হাহাহাহা
নিশী চিল্লানি দিয়ে উঠলো,, তানভীর ছাড়ো ছাড়ো আমাকে প্লিজ ছেড়ে দাও। প্লিজ আমার এমন সর্বনাস করো না৷ আমি তোমাকে বলছিতো ভালোবাসিনা তাই বলে এভাবে আমার সাথে এমন করোনা৷ প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে,,
দরজায় ততোক্ষণে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছি, আর ততক্ষনে নিশী হাত দিয়ে ওর ওড়নাটা ফেলে দিলো। জামা ছিড়ে নিলো, এরপর হুট করে এসেই আমার শার্ট ধরে টেনে খুলে নিলো।
এর এমন সময় দড়জা ভেঙে বাবা রুমে ঢুকলেন। তিনি ঢুকেই দেখতে পেলেন আমার গায়ে শার্ট নেই,নিশীর জামা ছেড়া।
আর কিছু বোঝায় প্রয়োজন হয় না? যে কি ঘটেছিলো এটা ওনাদের মতামত। কিন্তু ঘটেছে তো উলটা যেটা সবার অগোচরে।
ঠাসসসস,ঠাসস করে বাবা এসে আমাকে আমার দুগালে চারটা থাপ্পড় দিলেন। আর বললেন,, ছি তুই এমন হবি আর এমন করবি ভাবতেই পারিনি।
এতোদিন তোর এই ভালোমানুষের মুখের আড়ালে এমন পশুত্ব লুকিয়েছিলো? ছিহ তোকে নিয়ে কতো গর্ব করতাম আর তুই?
আমার মান সম্মান এভাবে ধুলায় মিশিয়ে দিলি।
রহমানের সামনে আমি কোন মুখ নিয়ে দাড়াবো এখন! আমার দুচোখ দিয়ে বৃষ্টি ঝরছে। আমি ভাবতেই পারিনি নিশী আমার সাথে এমন করবে"!
বাবা লাঠি নিয়ে আসলেন, এরপর আমাকে অনেক পিটালেন। আমার সেদিকে খেয়াল নেই কারন আমি এখনো ভাবতেই পারছিনা আমার সাথে এমন হবে।
ওকে আর মারবেন না থামুন আপনি (মা বলছিলেন) ছেলেটা মরে যাবেতো। আপনার পায়ে পড়ি প্লিজ থেমে যান। আমার ছেলে এমন করতে পারেনা ওর চোখ দেখেছি আমি।আমার মন বলছে কোথাও ভুল হয়েছে মায়ের মন ভুল হতে পারেনা।
-এই চুপ করবে তুমি (ঝাড়ি দিয়ে বললেন বাবা)
আমি ভেবেছিলাম আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে কিন্তু না, হয়েছে তার উলটা।
নিশী এমন নেকামো করছিলো যে, মনে হচ্চিলো সব শেষ করে দিয়েছি ওর। এরপর ওর মা এসে লাগালেন আরেক ঝামেলা।
এখন আমার মেয়ের কি হবে? কে বিয়ে করবে আমার মেয়েকে? কেউ শুনলে কি হবে আমার মেয়েটার? আমি এর উচিত বিচার না পেলে এক পা ও নরছিনা এখান থেকে। (নিশির মা)
এরপর সবার সিদ্ধান্ত নিলেন নিশীর সাথে আমার বিয়ে দিবে আজকে এই মুহুর্তেই। আমি যেই বললাম না আমি মানিনা ওমনি বাবা এসে আরেকটা চড় দিয়ে বললেন আরেকটা কথা বলেছিস তো আমার মরা মুখ দেখবি।
কোনো বাবা যদি এমন বলে, তাহলে কোনো সন্তানি পারবেনা আর না করতে।
নিশী ফেসে গেলো, সে চেয়েছিলো কি আর হয়ে গেলো কি?
এরপর কাজি এনে ততক্ষনাৎ বিয়ে হয়ে গেলো। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আমাদের বাসর ঘড়ে পাঠানো হয়।
আমি রুমে গিয়ে সোফায় বসি ঠিক তার কিছুক্ষন পর আমি অনুভব করি আমার শরির ব্যাথা করছে জ্বলছে।
বাবার মাইর গুলার ব্যাথা এখন টের পাচ্ছি। ব্যাথা এমন পরিমাণ বেড়ে যায় যে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই সোফা থেকে।
আমি যখন বাসর ঘরে যাই দেখতে পাই সে আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
এরপর সকালে আমি অনুভব করি কে যেনো পা দিয়ে আমাকে ধাক্কাচ্ছে। কিন্তু তার দিকে ফিরেও তাকানোর আমার শক্তি নেই। আমি বুঝতে পারি নিশী পা দিয়ে আমাকে লাথি দিয়েছে। আমি হাল্কা হাল্কা শুনতে পাই নিশী বলছে,,,
তোর সাথে তো বিয়ে হলোই কি আর করার, যাক ভালো হইসে এখন থেকে তোকে ইচ্ছামত কষ্ট দিতেছি পারবো। আমার প্রতিশোধের আগুন এখনো নিভেনি।
আমি যে ওকে কিছু বলবো সেই কথা বলার শক্তি ও নেই আমার। আমি শীতের দিনেও ঘামছি, আমি টের পাচ্ছি আমার শরীর দিয়ে গরম ভাপ বের হচ্ছে। পিঠ আর মাথা দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বের হচ্ছে।
দরজায় টোকা পড়লো,,
- বৌমা দরজা খোলো?(আম্মু)
- জ্বী দাড়ান খুলছি (নিশী)
- একি আমার ছেলে মেঝেতে কেনো? কি হয়েছে ওর?
ওর গা তো জ্বরে পুরে যাচ্ছে, তানভীরের বাবা তাড়াতাড়ি এদিকে আসুন।
কি হয়েছে ডাকছো কেনো.? (বাবা)
আমার ছেলেতো মরে যাচ্ছে তারাতারি কিছু একটা করেন। (কেদে কেদে)
বাবা আমার গায়ে হাত দিয়ে তিনিও চমকে উঠলেন। এরপর এম্বুলেন্স আনা হলো নেওয়া হলো হসপিটালে।
আজ,,
টানা ১৩ দিন পর আজ আমাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে। এই ১৩ দিন মা আমার পাশে ছিলো। আসলে মায়ের মতো এমন দরদি আর কেউই হবেনা। আপনাদের বলছি কখনো মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। ভালোবাসুন মাকে ঠকবেন না।
একটু সুস্থ হতেই শুরু হলো নিশীর অত্যাচার,,
সকালে শুয়ে ছিলাম এমন সময় নিশী এসে পানি ঢেলে দিয়েছে গায়ে। মেজাজ টা চরম খারাপ হলেও দমে গেলাম আমি। আমি দেখতে পেলাম খুব হাসছে ও।
আমি শুধু বললাম খুশিতো? সে বলল আগে আগে দেখো হোতাহে কেয়া! এই বলে চলে গেলো।
সেদিন ভার্সিটিতে দেখতে পেলাম,, নিশীকে একটা ছেলে ফুল দিচ্ছে ও নিবেনা ছেলেটা জোর করছে। আমি এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে,,,
- এই যে ভাই উনাকে ডিস্টার্ব করছেন কেনো?
- এই সালা তাতে তোর কি হাহ, ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড হয় বুঝলি। যা ফোট এখান থেকে,,
- আমি নিশীর হাত ধরে টান দিয়ে বললাম চলো নিশী বাসায় যাই,,
ঠাসসসসসসস,,, ওমনি নিশী আমাকে চড় দিলো। এতোটা জোরে দিয়েছে যে আমার নরম গালে পুরো পাচ আঙুলের দাগ পড়েছে।
থাপ্পড়ের শব্দে ক্যাম্পাসের মানুষ গুলা আমাদের দিকে তাকালো।
- নিশী বলল, তোর সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরার? ফালতু ছেলে কোথাকার। মেয়ে দেখলেই হাত ধরতে ইচ্ছা করে হাহ, তোর বাসায় মা বোন নেই? মেয়েদের সম্মান করতে শিখ। যা এখান থেকে,,,
আমার খুব হাসি পাচ্ছে, সেদিন ওকে দিলাম ভালো উপদেশ আর ও সেটার প্রতিদান আমাকে এভাবে দিলো। ও বুঝবে একদিন সময় হোক তখন ও কাদবে।
রাতে দেখলাম নিশী অনেক খুশী মুখে হাসি হাসি ভাব। হুম হবেইতো কারন আজ তো চরম প্রতিশোধ নিয়েছে সে।
নিশী বলল,,
- যাহ তোকে মাফ করে দিলাম। আমার শখ মিটে গেছে।হাহাহাহা
- আমি বললাম শুকরিয়া। এই বলে মুচকি একটা হাসি দিলাম। এরপর বললাম এশার আজান দিচ্ছে নামাজ টা পড়ে নিন।
- ওই তোর পড়া তুই পড়৷ জ্ঞান দিতে আসবিনা একদম।
ঘুম ভাংলো সকালের পাখির কিচিরমিচির শব্দে। চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম নিশী মাত্র গোসল করে এসেছে। ভেজা চুলের মিষ্টি গন্ধে ঘরটা মৌ মৌ করছে।
এমন একটা মুহুর্তে কোনো পুরুষের পক্ষেই খুব কষ্টকর হবে নিজেকে ঠিক রাখা। আমিও পারছিলাম না এরপর হুট করেই নিজের হাতে জোরে চিমটি কাটলাম। এতো জোরের যে রক্ত বের হয়ে গেলো।
কারন কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করা সাজে না এটা অন্যায়। তাই আমিও আমার
ইচ্ছাটাকে দমন করলাম।
দুজনে এক ঘরে থাকি অথচ কারো সাথে কথা হয় না। পরিবারের সবাই জানে কিন্তু তাদের ধারণা আস্তে আস্তে সব মানিয়ে যাবে।
এভাবে চলতে চলতে একটা বছর পার হয়ে গেলো। নিশীকে বাবা মা একদম মেয়ের মতো দেখে অনেক আদর করে তাকে।
আমি শুধু ভাবি যখন তারা সত্যটা জানবে কি করবে তারা? ধ্যাত এতো ভেবে লাভ নেই তারা তখন জানবেন তাদের ভুল বুঝতে পারবেন এটাই।
ইদানিং দেখছি নিশী আমার সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু এখন লজ্জা পায়। নিশী এখন আমার আশেপাশে দিয়ে ঘুরঘুর করছে,,
- কিছু বলবেন?( আমি বললাম)
- তোমার পাশে ওই সুন্দরী মেয়েটা কে ছিলো?
- বান্ধবী
- তুমি এতো লুচ্চা হলে কবে হাহ? ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলো। কই আগেতো কোনো মেয়ের দিকে তাকাতেও না কথা বলাতো দূরে থাক।
- হাহাহা, কে বলল আমি ভালো? আমিতো চরিত্রহীন একটা ছেলে তোমার ইজ্জত নিতে চেয়েছিলাম তাইনা!
- নিশী মাথা নিচু করে চলে গেলো।
আমার আগে খুব মন খারাপ হতো নিশীর কাজ গুলার জন্য। কারন ও আমার জীবনটা তেজপাতার মতো করে দিয়েছে। আমার মনে হতো ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো কিন্তু পারিনি মা বাবার জন্য। তারা ভাব্বেন আমি সত্যিই খারাপ তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলিনি।
আস্তে আস্তে সময় যতই বাড়তে লাগলো রাগ আর অভিমান গুলাও কমতে লাগলো। যতই কমুক না কেনো সেই আঘাতের দাগ সহজে মন থেকে মুছে না সেটা থেকেই যায়।
একটা মানুষের সাথে অনেকদিন থাকলে তার ওপর একটা মায়া জন্মায় সেটার আমার ক্ষেত্রেও হলো।
হবেই তো কারন সে হচ্ছে আমার বা পাজোরের হাড়। সে যদি সেটা নাই হতো তাহলে সে নয়তো আমি কবেই আলাদা হয়ে যেতাম। আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম কারন হয়তো বিধাতা এটাই চেয়েছিলেন।
নিশী আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে কিন্তু আমি কখনো করিনি।কারন, আমাদের ইসলাম ধর্মে বর্ণিত আছে পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়।
আমিও চাই ও ওর ভুল বুঝুক অনুতপ্ত হোক। এরপর না হয় নতুন করে ওর হাত ধরে আবার পথ চলা শুরু করবো।
এসব ভাবছিলাম এরি মধ্যে ফোনটা বেজে উঠলো,,
- তানভীর আহমেদ বলছেন?
- জ্বী
- কংগ্রাচুলেশনস, আপনাকে আমার কোম্পানীর এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে সিলেক্ট করা হয়েছে। আগামী মাসের এক তারিখ হতে আপনি অফিয়ে জয়েন করতে পারবেন।
আজ আমি এতোটাই খুশী যে বলার বাইরে। ভার্সিটি থেকে অনার্স কমপ্লিট হয়েছে ২ মাস আগে। এরপরে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে এপ্লাই করি। ভাইভাতে টিকে ও যাই। আর আজ আমাকে সিলেক্ট করা হলো।
বাবা মা কেউই যানেনা তাই ভাবছি আজ তাদের সারপ্রাইজ দিবো। আমি বাজারে গিয়ে মিষ্টি কিনে আনলাম।
এরপর বাসায় এসে দেখি সবাই ডিনারে বসেছে মাত্র। আমি সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালাম এরপর সবাই বলল কিসের মিষ্টি?
মা বলল, কিরে দাদী হচ্ছি নাকি আমি। আমি বললাম সেটা হবার নয়, দেখলাম নিশীর মুখ কালো হয়ে গেলো।
কিরে নিশীকে মিষ্টি দিলিনা কেনো? মা বলল
আমি বললাম, ওখানে আছে যার দরকার নিয়ে খেতে পারে। ও হ্যা আমার জব হয়েছে রাজশাহীর একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে।
আর ৩ দিন পরেই আমার জয়েন।
বাবা বলল,কিরে কখন কি করলি আমাদের তো বললি না? আমি বললাম বাবা তোমাদের ছেলেতো মিথ্যাবাদী চরিত্রহীন যদি বিশ্বাস না করো তাই বলিনি।
আর হ্যা আমি কাল ই চলে যাবো। আমার থাকার জন্য অফিস থেকেই ফ্লাট দিচ্ছে।
-মা বললেন বৌমাকে নিবি না?
- (নিশী আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে)
আমি আজ বললাম কে নিশী আমি চিনিনা ওকে বলে দিয়ো ওর বাবার বাসায় চলে যেতে। অকে অনেক সহ্য করেছি আর না, আমাকে ঠকিয়েছে ও। ওকে আমি কখনো ক্ষমা করবোনা কঠিন গলায় বললাম।
কারন সময় হয়েছে ওকে কাছে টেনে নেওয়ার। এভাবে জীবন চলেনা ওর শিক্ষা পাওয়া উচিত।
দেখলাম নিশি মাথা নিচু করে আছে। মুখ ভয়ের ছাপ চোখে পানি ভর্তি।
বাবা হা হয়ে দেখছেন আমাকে, আমার এমন কঠিন রুপ তিনি এই প্রথম দেখলেন। মা বলেন কে কাকে কিভাবে ঠকালো বল?
আমি নিশীর দিকে তাকিয়ে বললাম যার আমাকে দরকার নিজেই সত্যিটা বলে দিবে।
আজ চলে যাবো তাই ব্যাগ পত্র গোছাচ্ছিলাম । এমন সময় নিশী এসে বলল, আমিও যাবো।
- সরি আপনাকে নিবো কেনো? কে আপনি?
- আমি তোমার স্ত্রী
- হাহাহা, মনে পড়ে? সেই ক্যাম্পাসের কথা? ও হ্যা আপনার সেই বয়ফ্রেন্ডের খবর কি? কবে বিয়ে করছেন?
- শোধ নিচ্ছো?
- আপনি ও তো নিয়েছেন। যাই হোক সমস্যা নেই ওই ছেলেকে বিয়ে করে নিন আমি আপনার ডিভোর্স পেপার রেডী করছি ভয় নেই। আর আমি জানি আপনি এটাই চান?
- নিশী কান্না করে দিয়ে বলল, মেয়েদের একবারি বিয়ে হয় দুবার নয়।
- আমি ওকে বললাম, সম্মান মানুষের ধামা ভরা থাকেনা। ওটা একবার গেলে আর ফিরে আসেনা। যেটা আপনি আমার থেকে কেড়ে নিয়েছেন।
ভালো থাকবেন আসি হ্যা, যখন আসবো দেখা হবে। এই বলে নিচে চলে এলাম এরপর বাবা মাকে বলে তাদের বিদায় দিয়ে রওনা দিলাম রাজশাহীর উদ্দেশে।
নিশী মন খারাপ করে দু'পায়ের ভাজে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। তার ভেতরটা আজ কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগছে। তার মনে হচ্ছে কি জেনো একটা নেই ঘরটাও ফাকা ফাকা লাগছে।
নিশী ভাবছে ছেলেটার সাথে সে অনেক খারাপ কিছু করেছে।বাবার ভালোবাসা সে কেড়ে নিয়েছে, ছোট করেছে সে পরিবারের কাছে।
সে ভাবছে, ছেলেটাকে এতো কিছু করার পরেও কখনো প্রতিবাদ করেনি সে। এক ঘরে থেকেছে কিন্তু কখনো তার দিকে খারাপ নজরে তাকায়নি এ পর্যন্ত। কখনো তার ওপর কোনো অধিকার দেখায়নি যেখানে সে আমার স্বামী তার সম্পুর্ণ অধিকার ছিলো।
আচ্ছা আমার কেনো মাথায় আজ এগুলা আসছে নিশী নিজের মনকে জিজ্ঞাস করছে। তার মন বলছে, ছেলেটা সোনার টুকরা তুই সেটাকে পায়ে ফেলে সেটার অমর্যাদা করেছিস, তোর কর্ম ফলের জন্য তুই প্রস্তুত হ।
আজ অফিসে জয়েন করলাম। বস সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এভাবে চলতে লাগলো অফিসের সময়।
অফিসের কলিগদের সাথে একটা ভালো সখ্যতা গড়ে উঠলো আমার। আমার কাজের আগ্রহ আর কাজের ধরন দেখে বস ও খুশি।
রাতে শুয়ে ছিলাম এমন সময় অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলো। আমি ধরলাম না, আমি ভেবেছি কে না কে রং নম্বরে কল দিয়েছে তার আর ধরার প্রয়োজন বোধ করিনি।
এরপর আবার দিলো, এবার ধরলাম।
- (নিশ্চুপ কোনো শব্দ নেই)
- হেলো কে বলছেন?
- (নিরবতা)
- এই যে হেলো কে আপনি কথা বলেন নয়তো রেখে দিলাম যত্তসব।
- এই এই প্লিজ কেটো না
- কে আপনি আবার আমাকে তুমি করে বলছেন? ( আমি চিনেছি তবুও না চেনার ভান করছি কারন ওকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার)
- নিজের স্ত্রীকে চিনতে পারছোনা? আমি নিশী
- সরি আমি অবিবাহিত, আর এ নামে কাউকে চিনিনা।
- তানভীর আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?
- আমি ক্ষমা করার কে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। তো ফোন করেছেন কেনো?
- আমি এখানে থাকতে পারছি না আমি তোমার কাছে আসবো (আবদারের সুরে)
- ও হ্যা হ্যা বুঝতে পেরেছি আরে ভয় নেই, ১ মাসের মধ্যে ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবেন।
- ছি কি বলো প্লিজ এগুলা বলোনা ( কান্নার সুরে) আমি তোমাকে ছাড়া এখন এক মুহুর্তের জন্যেও নিজেকে ভাবতে পারছিনা। জানো আমার কপাল ভালো তোমার মতো একটা ছেলেকে লাইফে পেয়েছি।
দেখো আমি এখন রাতে ঘুমাতে পারিনা ভয় করে। রুমে থাকতে ভালোলাগেনা ফাকা ফাকা লাগে। খেতে গেলে শুতে গেলে সব সময় তোমায় মনে পরছে।
আমি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে প্লিজ তানভীর আমাকে নিয়ে যাও আমি এখানে থাকবোনা।
- ( মেয়েটা যেভাবে বলছে আমি আর কিছুক্ষণ কথা বললে নিশ্চিত মেয়েটাকে মেনে নিবো কিন্তু না সেটা পরে) আমি বললাম দেখুন অনেক কষ্ট দিসেন আবারো দেওয়ার নতুন প্লান তাইনা। আমার এখানে এসে এখন আমার অফিসের মানুষদের সামনে অপমান করবেন তাইনা। বুঝেছি আমি, দেখুন ভালো হয়ে যান সময় আছে আর হ্যা আমাকে আর ফোন দিবেন না। এই বলে কেটে দিয়েছি ফোন।
-হেলো হেলো ( ফোন কেটে গেছে)
নশী কাদছে এখন, সে ভাবছে সত্যিই তো ছেলেটাকে এত্ত অপমান করেছি সেতো এটা ভাব্যেই। সে সারারাত কাদলো সকালে চোখ মুখ ফোলা নিয়ে নিজে গেলো।
ওমনি মা ওকে জিজ্ঞাস করলো, নিশী এদিকে আসোতো মা। তোমার চোখ মুখ ফোলা কেনো?
নিশী মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো আর বলল মা আমি আর পারছিনা। প্লিজ আপনার ছেলেকে এনে দিন।
মা বললেন, পাগলী মেয়ে দু'দিনেই চোখে হারাচ্ছো আমার ছেলেকে। আচ্ছা তানভীর কে বলে ওর কাছে পাঠিয়ে দিবো খুশি তো?
হ্যা মা আমি খুব খুশি, সত্যি বলবেন তো? হ্যা সত্যি।
অফিজে কাজ করছিলাম এরি মধ্যে আবার নিশির ফোন। ভাবলাম ফ্রি আছি যখন একটু মজা করি ওর সাথে।
আমি মিথিলা কে আমার কেবিনে ডেকে পাঠালাম। ( কলিগ)
কারন ও জানে আমার জীবনের কাহিনী। ওই বুদ্ধি দেয় নিশীকে শায়েস্তা করার। এরপর মিথিলাকে ফোন দিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই বলল তুমি চুপ করো দেখো কি বলি আমি। ফোন রিসিভ করতেই,,
- কি হলো এতো সময় লাগছে কেনো ফোন উঠাতে?
- কাকে চাই?( মিথিলা)
- নিশী চমকে উঠলো মেয়ের কন্ঠ শুনে। সে নাম্বার চেক করে দেখলো ঠিক আছে কিনা, নাহ ঠিকি আছে তাহলে ওই মেয়েটাকে? এই আপনি কে?
- আমি যে হই আপনি কে হাহ,দেখুন এখন খুব ব্যস্ত আছি আমরা পরে ফোন দিন। এই তানভীর এদিকে আসোতো দূরে কেনো। এই বলে ফোন কেটে দিলো। এরপর হাসতে লাগলো,,
আমি বললাম কি হলো হাসছো কেনো? আর কি বললা এগুলা হাহ আমি ভাবলাম আচ্ছা করে বকে দিবা আর এগুলা কি বললা। ধুর আমার কথা কি ভাব্বে এখন মেয়েটা।
মিথিলা বলল, আরে বোকা নিশীর মনে জেলাস ঢুকিয়ে দিয়েছি এখন বুঝবে ঠেলা কারে কয় আর হ্যা ফোন কেটে দিবা যতবার কল দিবে এরপর অফ করে দিবা। আর রাতে ফোন অন করে নিশীকে কল দিবে। হাসতে হাসতে চলে গেলো।
আমি নিশীর কথাটা বুঝলাম, কারন কোনো বাঙালী মেয়ে নিজের মানুষটির পাশে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্যই করতে পারেনা। যাক ভালোই হয়েছে, এখন বুঝা যাবে মেয়েটা আমাকে কতোটা ভালোবাসতে পেরেছে।
ঠিক রাতে আমি ফোনটা অন করাম অন করতেই ১৫০০ টা মিসড কল পেলাম। আমি অবাক হয়ে গেলাম এতোবার কল দিয়েছে সেটা আবার নিশী।
৪০ সেকেন্ড এর মধ্যেই নিশীর কল। কল ধরতেই..
- এই এই কোথায় তুমি? তুমি ঠিক আছোতো? তোমার মোবাইল অফ ছিলো কেনো? আর ওই মেয়েটা কে যে ফোন ধরেছিলো বলো বলো?
- উফফ এতো প্রশ্নের উত্তর একসাথে কিভাবে দিবো আর কেনই বা আপনাকে দিবো হাহ? কে আপনি? আপনি আমার হন কি?
- আমি কি তোমার কিছুই হই না ( কান্না জরিত কন্ঠে)
- নাহ কিছুই না। আর হ্যা তখন ওই মেয়েটা ছিলো একজন। জানেন মেয়েটা আমার অনেক কেয়ার করে। আমার জন্য প্রতিদিন দুপুরে রেধে নিয়ে আসে৷ কি যে সুন্দর বিরিয়ানি রান্না করে উফফ। ভাবছি মেয়েটাকে বিয়ে করে এখানেই সেটেল হয়ে যাবো। আর হ্যা আপনাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে দিবো আপনি আপনার ওইইইই ছেলেকে বিয়ে করে নিবেন হ্যা রাখি।
- কুত্তা ছেড়া তোর বিয়ে করা বের করছি দাড়া ( কেদে কেদে) আমাকে রেখে আরেক জনকে আনার ধান্দা৷ আবার ডিভোর্স বের করছি আমি। এই বলে নিশী ফোন কেটে দিলো,,,
আর জোরে জোরে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো মা মা মা মা এদিকে আসুন তাড়াতাড়ি।
- কি হয়েছে বৌমা? (আম্মু)
- মা মা আপনার ছেলে, আপনার ছেলে হু হু হু (কান্নার জন্য ঠিকমতো বলতে ও পারছেনা)
- আহা কান্না থামাও, বলবেতো কি হয়েছে?
- আপনার ছেলে আরেকটা মেয়ের সাথে ওখানে হু হু হু আমাকে বলেছে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। আপনি কিছু করেন মা আমি ওখানে যাবো হু হু হু.
- বৌমা আজ সত্য একটা কথা বলবে?
- জ্বী মা বলুন!
- সেদিন আসলে কি হয়েছিলো বলো?
নিশী পা জড়িয়ে ধরলো হুট করেই মার। এরপর বলল মা সেদিন সব কিছু আমি করেছিলাম ইচ্ছা করেই। আসলে মা আমার অনেক রাগ ছিলো ওর ওপর। ও আমাকে একদিন সবার সামনে চড় দিয়েছিলো দোষ অবশ্য আমারি ছিলো কিন্তু মা আমি বুঝতে পারিনি।
আমি তানভীর কে এরপর একদিন কলেজেও সবার সামনে অপমান করেছি মা। এবাড়িতেও অনেক কষ্ট দিয়েছি ওকে। বাসর রাতে ওকে নিচে আমি শুতে দিয়েছিলাম মা হু হু হু ( কেদে কেদে)।
মা এরপর আমি আমার ভুল বুঝতে পারি কিন্তু মা সে চলে গেলো ঠিক দূরেই।
ছিহহহ তুই আমাদের মেয়ে হয়ে এমন একটা জঘন্য কাজ করেছিস ছেলেটার সাথে। ( নিশীর বাবা মা) দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে এতক্ষন শুনছিলেন সব কিছু।ভাগ্যিস আজ তোকে দেখতে এসেছিলাম যার কারনে সব জানতে পারলাম।
বাবা ও সব শুনে তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। যে মানুষটা কখনো কাদেনি আজ তার চোখের জল বাধ মানছেনা। তিনি বললেন এই হাত দিয়ে পিটিয়েছি ওকে ওর কোনো কথাই শুনিনি ছি। কতটা খারাপ বাবা আমি কতো খারাপ ভেবেছি আমার নিষ্পাপ ছেলেটাকে ছিঃ। নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছে এই মুখ নিয়ে ছেলেটার সামনে দাড়াবো কিভাবে আমি।
- আমি আগেই বলেছিলাম আমার ছেলেটা এমন করতে পারেনা। ( আম্মু কেদে কেদে)
- (নিশি মাথা চুপ করে আছে)
এরপর সবাই একসাথে বসলেন বিষয়টির একটা সমাধান করার জন্য৷ তারা বিষয়টি বুঝে বললেন এটা নিশীর ছেলে মানুষী হয়ে গেছে। সে জেদের বসে অনেক খারাপ করে ফেলেছে৷
আর তানভীরের মনে জমে আছে অভিমান। নিশী শুনো অপরাধ তুমিই করেছো এর মাসুল তোমাকেই দিতে হবে। এখন ওর কাছে ক্ষমা চাও ছেলেটা অনেক ভালো তোমার ফিরাবে না। ( সবাই সহমত দিলেন বাবার কথায়)
অফিস শেষ খুব ক্লান্ত গা টা সবে মাত্র এলিয়েছি বিছানায় এমন সময় মায়ের ফোন..
- আসসালামু আলাইকুম আম্মু, কেমন আছেন আপনি?
- হ্যা বাবা ভালো, তুমি কেমন আছো?
- জ্বী আম্মু ভালো।
- রাতে কি খেয়েছো?
- এইতো আম্মু পাশের হোটেল থেকে বিরিয়ানী খেয়েছি।
- কিহহহ তুই বাইরে থেকে খেয়েছিস। তুই না রান্না পারিস,? তাহলে বাইরে কেনো
- হ্যা মা রান্না পারি কিন্তু অফিস শেষে আর ইচ্ছা করেনা।
- কালি নিশীকে পাঠিয়ে দিচ্ছি দাড়া (কড়া ভাবে বললেন)
- না আম্মু ওক দরকার নেই, আমি রান্না করে নিবো।
- আমার মুখের ওপর কথা বলিস চুপ, কাল ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি এটাই আমার শেষ কথা মনে থাকে জেনো। বলেই কেটে দিলো মা....
আমি তো হাসছি কারন, আমিতো এটাই চেয়েছিলাম। এটা আমার প্লান ছিলো আমি জানতাম নিশীকে এমন বললে ঠিক সে এমন কিছু করবে যাতে করে তাকে এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
দুপুরে নিশী ফোন দিলো..
- আমি বাস স্টান্ডে নেমেছি তুমি আসো তাড়াতাড়ি
- জ্বী ওখানেই দাড়ান আমি আসছি
বাস স্টান্ডে গিয়ে দেখি নিশী লাগেস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে লাগেস নিলাম কিন্তু কথা বললাম না।
এরপর রিক্সা ডাকলাম ওকে উঠিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম শাহজাহান ভিলায় নামিয়ে দিবেন। আর নিশী আপনি যান আমি অন্য রিকশায় আসছি..
- তুমি ওঠোনা প্লিজ, আমি তোমার সাথে বসবো
- (রাস্তার মধ্যে তাই সিন ক্রিয়েট করলাম না) উঠে বসলাম নিশীর পাশে।
- আমি যতই সরে বসছি নিশী ততই গেষে বসছে আবার আমার এক হাত ধরে রেখেছে।
আসলে আমি সরে আসছি এজন্য যে, আমার খুব সুড়সুড়ি লাগছিলো :/
বাসায় চলে এলাম৷ এরপর দেখি নিশী ঘরের আনাচে কানাচে কি জেনো খুজছে! আমি বললাম..
- কি খুজেন ওখানে?
- মেয়েটা কোথায়?
- মেয়েটা মানে?.
-যে কথা বলেছিলো?
- ওহ ওইটা আমার কলিগ মজা করেছিলো তখন। আর আপনি আমাকে কি চরিত্রহীন ভাবেন?
- নাহ কিন্তু ভয় লাগে
- কিসের ভয়?
- তোমাকে হারানোর
- হাহাহাহা
- হাসছো কেনো?
- এমনিই
- আর তুমি আমাকে আপনি আপনি বলো কেনো?
- তুমি বলার অধিকার যখন হবে তখন না হয় বলবো।
এমন সময় সিম কাস্টমার কেয়ার থেকে কল আসলো আমি কল কেটে দিয়ে কানে ধরে বললাম, হেলো কে মিথিলা?
বাবু কি করো? আরে রাগো কেনো? আরে আমার পাশে ওইটা একটা মেয়ে ছিলো লিফট চেয়েছিলো এজন্য দিয়েছিলাম সত্যি।
আচ্ছা ঠিকাসে তুমি রাত ৮ টায় রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা কইরো আমি আসবো।
(নিশীকে দেখিয়ে দেখিয়ে হুদাই এক্টিং করছিলাম) ফোন কাটার ভাব করে ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম। মেয়েটার দু'চোখ বন্যার পানি ভর করেছে৷
হুট করে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়েছে৷ আর কে ওই পেত্নী হ্যা তুমি যাবেনা একদম হু হু হু (কেদে কেদে)
আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো আমি হাসি গুলা গিলে ফেললাম, এরপর বললাম ছাড়ুন ছাড়ুন আমাকে। যান গিয়ে ফ্রেশ হন, খেয়েছেন কিছু? বাসায় কিছু নেই আপনি অপেক্ষা করুন আমি রান্না করছি এই বলে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াতেই নিশী বলল,,
- দাড়াও ওখানে, আমি আসছি কি জন্য হ্যা? যাও ফ্রেস হয়ে বসো আমি নাস্তা করে আনি।
- আমি বললাম আচ্ছা
আমি রান্না ঘরে উকি দিতেই দেখলাম নিশী খাবারে কি যেনো একটা দিলো।
আমি বুঝতে পেরেছি কিছু একটা দিয়েছে ও যাতে করে আমি যেতে না পারি।
আমিতো ওকে জ্বালানোর জন্য জাস্ট মজা করেছি, উহু একদম ওগুলো খাওয়া যাবেনা বাবা। হুদাই বিপদে পরবো আমি এক কাজ করি খাবার গুলা সরিয়ে রাখি। সরিয়ে কোথায় রাখবো? এক্সচেঞ্জ করে দেই হাহাহাহা। এতে হলো কি আমার গুলা ও খাবে ওর গুলা আমি।
নিশীর ডাক,,
এই যে এদিকে আসো নাস্তা করে যাও।
- হ্যা খুব একটা নয় তবে ভালো হয়েছে। তো আপনি বসে আছেন কেনো? খান
- নাহ আমার খিদে নেই তুমিই খাও
- ( মেয়েটা চালাক ও বটে বাহ মনে মনে বলছি) আমি বললাম না খেলে নাই। মুখে হাই তুলে বললাম আমার ঘুম পাচ্ছে আয়ায়ায়া,,,, ( হুদাই এক্টিং)
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি দেখেছি নিশীও পিছু পিছু এসেছে। আমি শুয়ে পরতেই নিশী বলছে,,,
ইসসসস শখ কতো হু! আমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে দেখা করতে যাবে। দিয়েছি খাবারের সাথে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে হাহ,এখন ঘুমাও বাছাধন ।
নিশীর এমন কথা শুনে আমার যে কি হাসি পাচ্ছিলো হাহাহাহা বলার বাহিরে। আমি চুপচাপ শুয়ে আছি, দেখি নিশী কি করে!
একটু পর নিশী আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষন পর নিশী আমার বুকে এসে মাথা রাখলো। চুল থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে আসছে। আচ্ছা মেয়েদের চুলে এতো মিষ্টি গন্ধ কেনো? ছেলেদের কাবু করার জন্য মেয়েদের চুলের মিষ্টি গন্ধই যথেষ্ট। এমন উলটাপাল্টা ভাবছিলাম আমি আমার মনে হচ্ছিলো ডুবে থাকি এই চুলের মিষ্টি গন্ধের মাঝে।
আমার মাথায় তখন আবার দুষ্টুমি বুদ্ধি এসে ভর করলো। আমি দু'হাত দিয়ে নিশীকে জড়িয়ে ধরলাম দেখি নিশী কেপে উঠলো। সে ভাবছে হয়তো আমি ঘুমের মাঝে ধরেছি, আমি হাল্কা চোখ খুলে দেখি সে লজ্জায় কালা হয়ে গেছে 😷 আসলে তখন লাইটস অফ ছিলোতো এজন্য। 😂
আমি নিশীর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু একে দিয়ে বলতে শুরু করলাম। মিথি তোমার কপালটা এতো চিকন ক্যান হ্যা? যাই হোক সমস্যা নাই তুমি আসছো সোনা এটাই অনেক। এই তুমি এতো চিকন চিকন ক্যান হ্যা ইয়োগো করো নাকি? বাহ ভালো হলো কেউ আর বলবেনা তানভীরের বউ মুটকি।
এই মিথি এসো তোমায় একটু আদর করি,,, মি,,, এরি মধ্যে নিশী মুখ চেপে ধরেছে। আর পাশে গ্লাসে রাখা পানি আমার মুখে মেরে দিলো।
- এই এই এটা কি হলো?
- ভালো হইসে 😠 অন্য মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে? হাহ বেড় করছি দাড়াও
- আজিব তো? আর আপনি আমার বেডে কেনো নামুন নামুন। আর আমি এখানে কেনো? আমার তো মিথিলার সাথে দেখা করার কথা। ওহ শিট এখন ১১ টা বাজে,,,
- কিহহহ আবার ওই মেয়েটাকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে ( কলার্ট ধরে)
- এই ছাড়ুন ছাড়ুন কি করছেন হ্যা। মরে যাবোতো
- কলার্ট ধরলে কেউ মরে নাকি?
- হ্যা আমি মরি ভয়ে
- হিহিহিহি
- নামুন নামুন এখান থেকে। সোফায় গিয়ে ঘুমান অনেক হইসে
মুহুর্তেই নিশীর মুখ কালো হয়ে গেলো, চোখ গুলায় পানি ভর্তি হয়ে গেলো। দেখলাম মেয়েটা সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো।
ঠিক এক ঘন্টা পর নিশীকে বেডে শুইয়ে দিলাম আর আমি চলে গেলাম সোফায়।
ভোরে উঠে নামাজ পরেই চলে গেলাম অফিসে।
নিশী ঘুম থেকে উঠে দেখে সে বিছানায় সে খুব অবাক হয়। আবার পরক্ষণেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে ভাবে তানভীর হয়তো তাকে মাফ করে দিয়েছে।
দুপুরের দিকে নিশীর কল,,
- জ্বী বলুন? (আমি)
- লান্স করেছো.?
- জ্বী এইতো করবো মিথিলার সাথে, মেয়েটা বিরিয়ানি রান্না করে এনেছে । উফফফ কি যে রান্না করে, মেয়েটাকে খুব শিঘ্রই ঘরে তুলতে হবে
- ( কান্নার শব্দ)
- হেলো
- ( কান্নার শব্দ একটু বেড়ে গেলো)
- আমি যত্তসব বলে ফোন টা কেটে দিলাম।
নিশী দুপুরে না খেয়ে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়লো। সে স্বপ্নে দেখতে পেলো,, তানভীর আবার বিয়ে করেছে। এমন দেখেই সে ঘুম থেকে জেগে উঠলো।
সে নিজে নিজে বলছে যা করার তারাতারি করতে হবে নইলে আমা স্বামীকে কেউ নিয়ে যাবে নাহ আমি এটা হতে দিবো না। আমি আজি ক্ষমা চাবো,,
রাতে বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি নিশী আমার চারপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করছের। আমি বললাম কিছু বলবেন?
- নাহ কিছুনা। মানে বলছিলাম কি ডিনার করবে চলো আমি নিজে হাতে রান্না করেছি।
- সরি আসলে ডিনার ও মিথিলার সাথে করে নিয়েছি।
- ওহ ( মাথা নিচু করে ফেলল)
আমি দেখলাম নিশী পাশের রুমে চলে গেলো। আমি উকি দিয়ে দেখললাম মেয়েটা বালিশে মুখ গুজে কাদছে।
ওর কষ্ট দেখে যে আমার কষ্ট হয় কারন আমিতো ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু এতো সহজে তো ওকে মেনে নেওয়া যাবেনা এর শাস্তি ও পেতেই হবে।
ইদানীং আমি নিশীর সাথে প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলিনা৷ ও কিছু বলতে গেলেও এড়িয়ে চলে যাই৷ অফিস টাইমে ফোন দিলেও ধরিনা। মেয়েটা আমার জন্য রান্না করে কিন্তু আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসি।
ওর সামনে হুদাই ফোন নিয়ে কথা বলি ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে। আর ও তখন মাথা নিচু করে শুধু কাদে।
এই ৭ দিন যাবত নিশীকে বড্ড অবহেলা করছি। মেয়েটা এই কদিনে বড্ড শুকিয়ে গেছে খেয়াল করলাম। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে, ঠোট গুলা শুকিয়ে গেছে। আবার চোখ গুলা ফোলা ফোলা আর লাল হয়ে আছে।
রাতে শুয়ে ছিলাম আনুমানিক তখন মাঝরাত ৩টা বাজে। আমি গুনগুন কান্নার আওয়াজ পাই। আমি নিচে তাকিয়ে দেখি নিশী মোনাজাত ধরে কাদছে আর বলছে,,,
হে আল্লাহ আমি না বুঝেই এই মানুষটার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তাকে অনেক অপমান আর অবহেলা করেছি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ এই মানুষটাকে আমি হাসরের ময়দানে ও চাই।
হে আল্লাহ আমি অনেক পাপ করেছি আমাকে কি ক্ষমা করবেন ওই মানুষটা। তাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি তাকে ছাড়া এক মুহুর্ত ও ভাবতে পারছিনা আমি। স্বামীর পায়ের নিচে যে আমার বেহেস্ত। আমি আমার স্বামীর অধিকার চাই।
নিশীর এমন মোনাজাত শুনে আমার চোখ দিয়ে অজান্তেই দু'ফোটা পানি ঝরে পড়লো।
আমি গিয়ে আবার শুয়ে পরলাম। আর ভাবছি মেয়েটা যেহেতু তার ভুল বুঝতে পেরেছে আর কি চাই। সময় এসেছে আপন করে নেওয়ার।
কিছুক্ষন পর অনুভব করলাম কেউ আমার পা ধরেছে। আমার পা গুলা দেখলাম ভিজে যাচ্ছে। মেয়েটা কাদছে তবুও আমাকে জাগাচ্ছেনা নিরবে পা ধরে কাদছে।
আমি আর পারলাম না আমি হুরমুড়িয়ে উঠে পড়লাম৷
- সরি সরি আমি আসলে চাইনি তোমাকে জাগাতে। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ.. (নিশী)
- আমি চুপ করে আছি ( ততক্ষনে আমার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু গুলা ঝরে পরছে)
- একি তুমি কাদছো কেনো? কি হয়েছে তোমার? এই তুমি ঠিক আছোতো?
-আমি দু'হাত প্রসারিত করে বললাম আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?
বলতে দেরী মেয়েটা এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো আরেকটু হলে পড়েই যেতাম। ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছি, নিশীর কানে কানে বললাম তোমার স্থান আজ থেকে এই বুকে বুঝলা।
- তুমি আবার একটু পর বলবে নাতো যে,সব ছিলো প্রতিশোধ?
- ছি কি বলো? একদম নয় নিশী। তোমাকে তো আমি মেনে নিয়েছি যখনি কবুল পড়ে বিয়ে করেছি তোমাকে।
- তানভীর প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আর এমন করবোনা। কথা দিচ্ছি অনেক অনেক ভালোবাসবো তোমাকে। আমি অনেক খারাপ তাইনা? তোমায় কতো কষ্ট দিয়েছি। তুমি সব মুখ বুজে সহ্য করেছো।
ছি আর আমি তোমার সাথে না জেনে বুঝে কতো খারাপ ব্যবহার করেছি। এখন নিজের প্রতি নিজেরি খারাপ লাগছে ছিহ।
আমি বললাম, ক্ষমা তো তখনি করে দিয়েছি যখন দেখেছি আমাকে অপমান করার পর তোমার মুখের মিষ্টি হাসিটা।
- তুমি এতো ভালো কেনো হ্যা? (নিশী)
- তোমার বর তো এজন্য
- সত্যি আমাকে ক্ষমা করেছোতো?
- হ্যা গো হ্যা সত্যি। কেনো তুমি দেখছোনা আমি তোমাকে তুমি করে বলছি।
নিশী তখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,আর কেদে কেদে আমার টি-শার্ট প্রায় ভিজিয়ে ফেলেছে।
আমি বললাম এতো জোরে জড়িয়ে ধরেছো কেনো বেথা পাচ্ছিতো ছাড়ো।
- ওহহ তা লাগবে কেনো? নতুন কাউকে আনবে তুমি আমি জানি। আমি ছাড়বো না হু
- উহু কে আসবে?
- কেনো আপনার মিথিলা না ফিথিলা!
- হাহাহাহাহাহা,, ওওও ( মনে মনে আবার একটু শয়তানি বুদ্ধি আসলো)
আর বলোনা মেয়েটা এত্তো কিউট উফফ দেখলে আর চোখ সরাতেই ইচ্ছা করেনা । কি তার মায়াবী চোখ মনে হয় ডুবে থাকি সবময়। আর তার গোলাপী ঠোট জোড়া আহা দেখলেই আর বলতে পারলাম না,,,
হুট করেই এক জোড়া ঠোট এসে চার ঠোঁট এক করে দিলো। গায়ের রক্ত গুলার মধ্য দিয়ে মনে হয় বিদ্যুতের মতো শকড চলে গেলো।
সেযে কি এক অনুভুতি সেটা বোঝানো অসম্ভব। কয়েক মিনিটের মধ্যে নিজেকে মনে হয়েছিলো কোনো এক সুখের সাগরে ভেসে আছি আহা।
- বাহ খুব মিষ্টি তো? কি দিয়েছিলা ঠোঁটে?
- লিপিস্টক দিয়েছিলাম (লজ্জায় মাথা নিচু করে)
- কিহহহ ছিহহহ এগুলা মাইনষে দেয় ভ্যা ভ্যা ভ্যা, এখন তো মনে হয় আমার পেট খারাপ হবে। ( ওকে রাগানোর জন্য)
- কি বললা তুমি আবার বলোতো?
- এই পচা লিপিস্টিক দিয়েছো তুমি এখন তিতা তিতা লাগছে ভ্যা ভ্যা ( বমির ভাব করতে লাগলাম)
- এহহহ এতোক্ষন পর ঢং দেখানো হচ্ছে? মিথ্যা বলছো আমি জানি হু
- একদম নয়, সত্যি এই দেখো বমি করতে চাচ্ছি কিন্তু হচ্ছেনা :/
- কিহহহ ইচ্ছা করে করতে চাচ্ছো? দাড়াও ওখানে আজ হচ্ছে তোমার....
- একি কোমরে শাড়ি গুজছো কেনো?
- দাড়াও ওখানে দেখাচ্ছি আমি।
আমি ওর কথা বলার আগেই কোলে তুলে নিলাম। এরপর গুটিগুটি পায়ে ছাদে নিয়ে গেলাম। শীতের রাত যেহেতু চাদর ছিলো তাই এখন দুজন এক চাদরের নিচে বসে আছি।
নিশী আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মেয়েটা এক মুহুর্তের জন্যও আমার কাছ থেকে সরছেনা যদি চলে যাই আমি।
-নিশী বলল, এই তুমি সত্যি কি ওই মেয়েকে বিয়ে করবে?
- কোন মেয়ে?
- দেখো ঢং করবানা। ওইযে মিথিলা
- অহহহহ হাহাহাহা, আরে ওইটা আমার কলিগ ও জানে আমার আর তোমার সব কথা। আর ওই আমাকে এগুলা করতে বলে আসলে সব ছিলো আমাদের প্লান।
- কিহহহ,,, ইচ্ছা করে আমাকে ভয় দেখিয়েছো তুমি৷ তুমি আমাকে ইচ্ছা করেই কাদিয়েছো তুমি একটা পচা বর
- এমন না করলে কি তুমি আমার কাছে আসতে বলো?.
- জানিনা হু
- এমন না করলে তুমি কখনো আমাকে ভালোবাসতে এমনকি আমাকে বুঝতেও পারতে না।
- হইসে হইসে হু, আজ থেকে মেয়ে কলিগ থেকে দূরে দূরে থাকবা। আর কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেনা বুঝলা?
- এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমি এগুলা করে বেড়াই? 😱
- একদম নয় কিন্তু তবুও দেখবেনা ঠিকাসে।
- আচ্ছা ম্যাম ঠিকাসে খুশিতো এবার?.
- হুম খুব খুশী
- নিশী একটা জিনিস লক্ষ করেছো আজকের রাতটা জেনো শেষ হচ্ছেনা।
- কেনো তুমি কি চাও ফুরিয়ে যাক?
- একদম নয় এমন মধুময় একটা রাত প্রিয়তামার সাথে তার পাশে কেউই কি চাইবে এটা শেষ হয়ে যাক বলো?
- বাহ কবি গিরি শুরু হয়ে গেছে।
- হুম কেনো ভালো লাগছেনা?
- হুম লাগবে যদি আমাকে এখন একটা শুনাও...।
- আচ্ছা তবে শুনো,,
দিনশেষে আমি তোমারি হবো
থাকিনা যতই দূরে,
সন্ধাকালে গান শুনাবো
সন্ধ্যা পাখির সুরে।
প্রতিটি ভোরের আলোর মিছিলে তোমায় রাঙিয়ে দিতে
হবো তোমার প্রভাত বেলার রবি।
তুমিই আমার প্রথম ওগো
তুমিই আমার শেষ
থাকবো দুজন পাশাপাশি
জীবনে আর চাই কি বিশেষ।
- বাহ মুগ্ধ আমি, আমাকে কিন্তু রোজ এমন করে কবিতা শুনাতে হবে কিন্তু?
- আচ্ছা শুনাবো
- এই সত্যি তোমার ওই মিথিলার সাথে কিছু নেইতো?
- তুমি আমাকে সন্দেহ করছো নিশী আমাকে :/
- হুম তো
- হ্যা আছে তো সম্পর্ক 😌 ও হ্যা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। একটা খাম ওকে দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য। আর হ্যা মিথির সাথে বিয়েটা সেরে নিবো ভাবছি,,
- খামটা নিয়ে খুলে নিশী দেখলো এতো কক্সবাজারের টিকিট দুইটা?
- কেনো তুমি কি ভাবছিলা?
- আমিতো ভেবেছিলাম ডিভোর্স পেপার
- হেহেহে কেমন তোমাকে ভড়কে দিলাম বলো?
নিশী হুট করেই আমার কলার্ট ধরে বলল'আর কখনও কষ্ট দেবে'? এমন করে মজা করবে আর'?
'উঁহু, আর কখনও না'।
'মনে থাকবে তো'?
'থাকবে গো, থাকবে'।
'যদি কখনও কষ্ট দাও না তো সেদিনই তোমাকে ডিভোর্স দেবো হু'।
মিলির কপালে চুমু দিয়ে বললাম,
হানিমুন টা কিভাবে করবো সেটা নিয়ে ভাবো আগামীকাল আমরা জাচ্ছি।
মা সেদিন বলল তার নাকি দাদী হতে ইচ্ছা করছে। এ কথা বলতেই নিশী লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো।
আমি তখন নিশীর কানে কানে বললাম,,
হানিমুনের রাত গুলো যদি শেষ না হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?
নিশী বলল, যাহ তুমিই বলো দুষ্টু।
মান অভিমানের পর্ব শেষ করে এভাবেই একটি ভালোবাসার পূর্নতা পেলো।
লেখাঃ তানভীর আহমেদ
Tags:
Bengali Stories
Hate Story
Love Story
Ramanic Love Story
Romantic Story
Valobasar Golpo
ভালোবাসার গল্প
How sweet
ReplyDeleteদুষ্টু মিষ্ঠি ভালোবাসা💝। অনেক ভালো লাগলো💌
ReplyDelete❤️❤️❤️Nice ❤️❤️❤️❤️.অনেক সুন্দ
ReplyDeleteআমার জীবনে পড়া সেরা গল্প গুলোর একটা।সুন্দর হয়েছে।