একটি খুন
- মেহজাবিন মুন
"আমি তোমাকে খুন করবো, যেখানে পাই যেভাবে পাই খুন করবো। নৃশংসভাবে খুন করে মনের জ্বালা মিটাবো, মানুষের সামনে এমন ভাবে তোমাকে প্রকাশ করবো যে তারা তোমায় দেখে শিউরে উঠবে।
আমি তোমার দিল খুলে দেখবো সেখানে আমার প্রতি তোমার কোন ধরনের টান আছে। অপেক্ষা করো, অপেক্ষা করো সেইদিনের, আমি আসছি।"
ইতি
তোমার রক্ত
মৌরি এক নিঃশ্বাসে চিঠি টা শেষ করলো। তারপর কাঁপতে কাঁপতে চেয়ারে বসে পড়লো।
কে লিখতে পারে এটা? কেনো লিখেছে? আমি কার ক্ষতি করলাম?
মৌরি দেখলো দূসর কালো রঙ্গের খামে চিঠিটা একটা ছেলের হাতে দিয়ে পাঠিয়েছে কেউ। ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করায় নাম বলতে পারলো না।
--- মৌরি, মৌরি কোথায় তুমি? মাহিম ঘুম থেকে উঠছে, ও কাঁদছে তো।
--- জি আসছি আমি।
মৌরি তাড়াতাড়ি চিঠিটা লুকিয়ে ডায়রিতে রেখে দিলো। তারপর মাহিমের পাশে আসলো, জাহিদ তখন একমনে তার কাজ করছে।
মৌরি মাহিমকে কোলে নিয়ে পাশের রুমে গিয়ে দেখলো মুনা ঘুমিয়ে পড়েছে। একহাত দিয়ে ওর গায়ে চাদরটা দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে, লাইট অফ করে রুমে চলে আসলো।
মনে তার চিন্তার ঝড় বইছে।
--- কি গো, কি এতো ভাবছো?
--- তুমি বুঝলে কি করে আমি ভাবছি?
--- আজ পনেরো বছর থেকে তোমাকে দেখছি, তোমার দিলের প্রতিটা স্পন্দন আমি বুঝতে পারি ডার্লিং।
--- হয়েছে তুমি উঠে পড়, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
--- বলবে না কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো? জাহিদ ওর হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো।
--- কিচ্ছু না, চিন্তা করলে দুজন একসাথেই করবো। এখন ছাড়ো, ইশ্ রাত কয়টা বাজে দেখেছো?
পরপর দুইদিন আরও দুইটা চিঠি আসলো।
কে লিখছে এসব? কেনো লিখছে? আমি কার এমন ক্ষতি করলাম? দেশে আসলামই তো এক সপ্তাহ হলো, কে জানলো আমি দেশে এসেছি?
বিকালবেলা মৌরি মাহিমের পাশে শুয়ে ভাবছে।
মৌরি তার স্বামী জাহিদের সাথে পনেরো বছর পর দেশে ফিরেছে। তাও আসতো না, কিন্তু মুনা মেয়েটা এতো পাগল, তার নাকি মামনি, বাপি, ভাইয়া সবাইকে লাগবে। এই মেয়েটার কোন আবদার সে ফেলতে পারেনা। কারন ওর বয়সী তারও যে একটা মেয়ে ছিলো, আর একটা ছেলে। ছেলেটা হয়তো আজ ২০ বছরের হয়ে গেছে। কেমন হয়েছে আমার আয়ান, এখন হয়তো সে আরও সুন্দর হয়েছে, আমার কথা কি মনে পড়ে তার? মেয়েটা কি আমার কথা জানে? ওরা হয়তো জানে খুব খারাপ একটা মা ছিলো সে। হ্যা খারাপ, খুবই খারাপ ছিলো সে, সারাদিন হইহুল্লোড়, সাজগোজ আর ছেলেদের সাথে আড্ডা দিয়ে তার সময় কাটতো। একসময় খারাপ একটা ছেলের ফাঁদে পড়ে সে। তার হাত থেকে সিয়াম তাকে বাঁচিয়েছিল, বিয়েও করেছিল, দিয়েছিলো স্ত্রীর মর্যাদা। এমন কিছু নেই যে সে চাওয়ার আগে পেতোনা। বিনিময়ে সিয়াম শুধু চেয়েছিলো সে যেন ঘরের বউ হয়ে থাকে, এসব ছেলেদের সাথে মেলামেশা না করে। কিন্তু মৌরি মনে করেছিলো সিয়াম তার স্বাধীনতা হরন করছে। সে আরও দ্বিগুণ তালে এসব শুরু করেছিলো। সিয়াম তখন তার ব্যবসার কাজে ব্যাস্ত, এমন সময় এতো বড় একটা জগন্য কাজ সে করেছিলো যার কোন মাফ নেই, ইসলামে তার শাস্তি বেত্রাঘাত করে বা মাটিতে গেড়ে পাথর ছুড়ে মৃত্যু। কিন্তু মহৎপ্রাণ সিয়াম তাকে আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর মৌরি প্রেগন্যান্ট থাকায় মাফ করে দিয়েছিলো। তাও মৌরির বুঝেনি, আন্নির জন্মের বিশ দিন পর সেই ছেলেটার সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তখনও বুঝেনি সে যে ছেলেটা তাকে নয় তার সাথে আনা টাকা আর গহনার লোভে নিয়ে এসেছে। কিছুদিন পর যখন অসহায়ের মতো মৃত্যু ছাড়া তার আর কিছু করার ছিলো না, গন্তব্যহীন রাস্তায় সুইসাইড করার জন্য গাড়ির নিচে পড়েছিল তখনই জাহিদ তাকে আশ্রয় দিয়েছিল, বলেছিল..
--- আমাকে বিয়ে করবেন?
--- আমার মতো খারাপ মেয়ের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই, কেন বাঁচালেন আমায়।
--- মরে গেলে তো আরও দ্বিগুণ শাস্তি পেতে হবে, তার চাইতে বরং দুনিয়াতেই প্রায়শ্চিত্ত করুন।
মৌরি আবার ও রাজি হয়ে গিয়েছিলো ততদিনে সিয়াম তাকে তালাক দিয়েছে।
বিয়ের রাতে জাহিদ তাকে বলেছিল,
--- আমার দুইমাসের একটা মেয়ে আছে, তাকে নিজের মেয়ের মতো বড় করতে পারবেন না?
--- আপনার আরেকজন স্ত্রী আছেন?
--- নাহ, মেয়ের জন্মের সময় মারা গিয়েছেন। এখন মেয়েকে বড় করার জন্য একজন মা প্রয়োজন, আপনি হবেন সেই মা?
তারপর কোলে তুলে দিয়েছিলো মুনা কে। পরম মমতায় তখন মুনাকে কোলে নিয়ে সেদিন অনেক কেঁদেছিল মৌরি।
ভালো একজন মা হয়েছিল সে, আর তার কিছুদিন পর তারা সৌদিআরবে স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে জানেনা তার বুকের মানিকেরা কেমন আছে, কি করছে, কত বড় হয়েছে।
আর এদিকে সিয়াম..
বিয়ে করেছিলো একজন কে কিন্তু মৌরির জায়গা দিতে পারেনি সে মেয়ে কে, আর মেয়েটাও আপন করে নেয়নি আয়ান আর আন্নি কে।
কিন্তু সিয়াম তার বাচ্চাদের যথেষ্ট আদর স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ব্যবসার জন্য যখন একেবারেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো সে তখন আয়ান এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
সে সময় একদিন শুনলো আয়ান হাসপাতালে ভর্তি, তাড়াতাড়ি গেলো হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তার জানালেন,
---- আপনার ছেলে আর কতদিন বাঁঁচবে আমরা জানিনা সিয়াম সাহেব।
---- কেনো ডাক্তার?
--- কারন আয়ান ড্রাগ এডিক্টেড, আর এতো কম বয়সে এতো ড্রাগস নিয়েছে যে বডি সেটা এক্সেপ্ট করতে পারেনি।
--- নায়ায়া ডাক্তার, আমার ছেলে কে বাঁচান, আমার ছেলের এমন হতে পারেনা। যত টাকা লাগে ওকে সুস্থ করে তুলুন।
--- বললেই তো হয়না মি. সিয়াম। টাকা দিয়ে সব পাওয়া যায়, কারও জীবন আর ভালোবাসা নয়। ছেলেটা অনেকদিন থেকে ড্রাগস নিচ্ছে আপনি বা ওর মা কি সে খুঁজ নিয়েছিলেন?
--- ওর মা নেই ডাক্তার, আমার ভুল হয়েছে, ওকে আমি সময় দেইনি, ভালোবাসা ও দেইনি। আমার বাচ্চারা যে ভালোবাসার বড় কাঙ্গাল।
সিয়াম সেদিন হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল। ও জীবনে কখনও কাঁদেনি, কিন্তু সেদিন সবকিছু হারানোর বেদনায় এক বাবার মন কেঁদে উঠেছিল।
--- কোন উপায় কি নেই ডাক্তার?
--- আছে, একটাই উপায় এখন ওকে নিয়মিত ড্রাগস দিতে হবে। নাহলে ওকে বাঁচানো যাবে না, এই ড্রাগ ই ওকে যতদিন বাঁচিয়ে রাখে।
সেদিন একজন বাবা তার ছেলেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে নিয়ে গিয়েছিল, ছেলেকে আরও কিছু দিন পাশে দেখার আকাঙ্খায় হাতে তুলে দিয়েছিল জীবন হরনকারী ড্রাগ৷ চোখের সামনে বিলীন হতে দেখেছিল হাসিখুশি প্রাণচঞ্চল একটা জীবনকে, যার জীবন শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো। হাসপাতালে ধীরে ধীরে ছেলের পাশে এসে বসলো সিয়াম।
--- এটা তুই কেনো করলি আব্বু? তোর কষ্ট বা কোনকিছু চাওয়ার থাকলে আমাকে বলতি।
--- আমার মা খুব খারাপ ছিল তাইনা আব্বু? একবারও আমাদের দেখতে আসেনি, বাহিরের ছেলেদের সাথে সম্পর্ক ছিলো।
--- এসব কেন বলছিস আব্বু? যে চলে গেছে তাকে নিয়ে কথা বাড়িয়ে কি লাভ?
---- নাআআ, আমি দেখেছি সে খারাপ ছিলো, সে যে কাজ করতো আমি তা সহ্য করতে পারতাম না। বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদতাম, সে আমাকে আদর করেনি, সে আমার কান্নার আওয়াজ পায়নি। তাকে আমি পেলে খুন করবো, সে মা নয়, মা নামের কলঙ্ক।
আয়ান এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হাঁপাতে লাগলো। সিয়াম আশুভরা চোখ নিয়ে আয়ানের মাথায় হাত রাখলো।
---- তার কথা ভুলে যা বাবা। সে এখন আমাদের মাঝে নেই।
--- আমি ভুলতে পারিনা আব্বু, শত চেষ্টা করেও ভুলতে পারিনা। আমার ভাবনায়, আমার স্বপ্নে সে আসে, খুবই খারাপ ভাবে আসে, আমাকে ঘরের কেউ ভুলতে দেয়না আব্বু। আমার বোনের দিকে তাকালে ওকে দেখতে পাই।
--- আমি তো ভুলে ওকে গেছি, এমন করলে হয়? আন্নি এসব শুনলে কি ভাববে?
--- আচ্ছা আব্বু আন্নির মুখটা প্লাস্টিক সার্জারী করালে কেমন হয়?
--- কেন? চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো সিয়াম।
--- আন্নি ওই বদ মহিলার মতো হয়ে গেছে। ওর দিকে তাকালে মহিলার কথা আরও বেশি মনে পড়ে, মনে হয় আন্নি কেই খুন করে ফেলি।
সিয়াম হতবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
--- মৌরি কই তুমি? দেখো কে তোমাকে পার্সেল পাঠিয়েছে।
--- দেখিতো কে পাঠালো। মৌরি পার্সেল বক্স দেখেই কেঁপে উঠলো লাল কাপড়ে মোড়া একটা বক্স, বক্সের মধ্যে কোথাও কোন নাম ঠিকানা নেই দেখে মৌরির বুকটা ধ্বক করে উঠলো।
বক্স খোলে দেখলো এক টুকরো লাল কাপড় আর একটা চিরকুট। তাতে লেখা,
" অপেক্ষায় ছিলাম তুমি কবে দেশে আসবে। এসেছো তুমি, আমার মৃত্যুর আগে আমার আশা পূরণ হবে। তোমায় আমি প্রাণভরে দেখবো, শেষ দেখা। আর...
তারপর তোমাকে খুন করবো, মনের স্বাদ মিটাবো।"
মৌরি তাড়াতাড়ি চিরকুট টা লুকিয়ে ফেললো।
--- কি হয়েছে মৌরি? কে পাঠিয়েছে এটা?
--- জানিনা, হয়তো কারও রসিকতা এসব। কেউ ফান করছে আমার সাথে।
--- এই ফান করাটা কেমন অদ্ভুত না? কে করবে এমন অদ্ভুত ফান?
মৌরি কোন কথা না বলে উঠে গেলো। তারপর মুনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আদর দিয়ে মাহিমকে সাথে নিয়ে জাহিদের সাথে গল্প করতে বসলো।
এসব কোনকিছুতেই মন বসাতে পারলো না। শেষে জায়নামাজে দাঁড়ালো মনের শান্তির জন্য, জাহিদের সংস্পর্শে আসার পর ও সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তারপর থেকে এমন কোন দিন নেই সে জায়নামাজে বসে কাঁদে না, বাচ্চাদের ভালোর জন্য দোয়া করেনা।
পরদিন ঘুম ভাঙ্গার পর মৌরি নিজেকে আবিস্কার করলো একটা অন্ধকার ঘরে।
সে এখানে আসলো কেমন করে?
উঠে বসতে গিয়ে দেখলো তার হাত পা বাঁধা।
--- মুনা, মুনা তুই কই? মুনার বাপি? আমি কোথায়?
---উঠে গেছেন মহারানী? আমি তো মনে করেছি আরও পরে ঘুম ভাঙবে। তা কেমন আছেন?
--- কে তুমি? আমার বাড়িতে কি করছো? আর এতো অন্ধকার কেন? মনে পড়লো কলিংবেলের শব্দে সে রাতে দরজা খুলেছিল আর তারপর সবকিছু অন্ধকার।
--- ওহহো, লাইট জ্বালানো নেই বুঝি? আমার পরিচয় তো দেওয়া হয়নি। আগে দেখুন তো এমনি চিনতে পারেন কিনা?
তারপর লাইট জ্বালিয়ে যখন সামনে আসলো তখন মৌরি যেনো শক খেলো। ঠিক চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু এতো অল্প বয়সী একটা ছেলে আমাকে ধরে এনেছে কেনো?
--- এই ছেলে কি চাও তুমি? আমাকে বেঁধে রেখেছো কেন? পরিচয় দাও তোমার।
--- সিয়াম চৌধুরীর ছেলে আয়ান চৌধুরী আমি। চিনেছেন এখন? আর এই ছবিতে হচ্ছে আমার বোন আন্নি, ভাবছি ওর মুখটা প্লাস্টিক সার্জারী করে ফেলবো, কারন ওর চেহারা একজন ডাইনীর মতো।
--- বাবা আয়ান, তুই এতো বড় হয়ে গেছিস? কোথায় আমার আন্নি? আয় না বাবা আমার বুকে আয়, এতোদিন পর আমার বুকের কষ্ট, এই বুকে যে আগুন জ্বলছে তা মিটাই।
--- না, আমার বুকে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে, তোকে খুন করার আগুন। তোকে খুন করে আমি পৃথিবীর মানুষকে দেখাবো, সমস্ত নারীজাতিকে বুঝাবো পরকীয়া করে বাচ্চাদের ফেলে যেনো না যায়৷ তাহলে কোন সন্তান আর কু-পথে পা ফেলবে না, মৃত্যুর দোয়ারে পৌছাবে না। তিল তিল করে প্রতিনিয়ত অবহেলা আর অনাদরে মরবে না। তুই একবারও আমার বোনের কথা চিন্তা করিসনি ডাইনী। আমার বোনকে অত্যাচার করার দৃশ্য, কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ার দৃশ্য আমি দেখেছি। একটু ভালোবাসার জন্য হাহাকার করেছি।
--- আমি ভুল করেছিলাম বাবা, আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি, একবার তুই আমার কাছে আয় আমার বুকে আয়।
--- আচ্ছা তোকে কেমন করে মারা যায় বলতো? হাত পা কেটে টুকরো টুকরো করবো? নাকি মুখটা আগে ছিন্নভিন্ন করবো? এই সুন্দর মুখ দেখিয়ে তুই ছেলেদের পাগল করতি তাইনা? এই সুন্দরের অহংকারের জন্য তুই ছোট ছোট দুইটা বাচ্চাকে ছেড়ে আসতে দ্বিধা বোধ করিসনি।
--- আয়ান! এসব তুই কি বলছিস? আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আমাকে ছেড়ে দে, আমার মাহিম কাঁদছে হয়তো। ওরা আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা।
---আর আমরা থাকতে পারবো সেটা ভেবেই তুই গিয়েছিলি তাইনা? এখন ওরাও থাকতে পারবে হা হা হা।
জানিস তুই আমি এখন ড্রাগস নেই। ডাক্তার বলেছে আমি কয়েকদিন পর মারা যাবো। তাই আমার তো কোন শাস্তি ও হবে না। আমি নিজেই চার পাঁচ বছর থেকে পরিকল্পনা করে এসব করেছি জানিস? আর অপেক্ষা করেছি তুই কবে আসবি। হা হা হা...
--- আয়ান প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে, আমি ভুল করেছিলাম, আমি তোদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দে, আমি তোর মা আয়ান।
--- মাতাল হয়ে গেলে এসব আর মনে থাকবে না। আমি আজ লিমিট ক্রস করে ড্রাগস নেবো। তখন তুই আমার মা থাকবি না।
আয়ান সেখানে বসেই অনেক্ষণ কাঁদলো, তারপর মৌরির মাথায় লাটি দিয়ে জোরে বাড়ি মেরে অজ্ঞান করলো। মায়ের সমস্ত শরীরে আদরভরে হাত বুলালো, মাকে জড়িয়ে ধরে আকাশপাতাল কাঁপিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
চব্বিশঘণ্টা পর যখন জাহিদের দেওয়া ইনফরমেশন এ আয়ান আর মৌরিকে উদ্ধার করা হলো। সিয়াম আয়ান কে দেখে সেখানেই জ্ঞান হারালো।
কারন মৌরি বেঁচে আছে, হাত পা বাঁধা অবস্থায় আর আয়ানের সম্পূর্ণ শরীর ছিন্নভিন্ন লাশ হয়ে আছে। হয়তো রক্তের টান সেজন্য মাকে খুন না করে সে নিজেকে খুন করলো। আর মৌরি!! এতোবড় একটা শকড ও সহ্য করতে না পেরে বাকশক্তি এবং বোধশক্তি দুটোই হারিয়ে ফেললো। মুনা আর মাহিম ও তাদের মা, মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলো।
কিছু বাস্তবতা আর কিছু সিদ্ধান্ত এমনই হয়, ধ্বংস করে দেয় কিছু মানুষের আর সংসার। খুন করে কিছু নিষ্পাপ প্রাণ।
- মেহজাবিন মুন
"আমি তোমাকে খুন করবো, যেখানে পাই যেভাবে পাই খুন করবো। নৃশংসভাবে খুন করে মনের জ্বালা মিটাবো, মানুষের সামনে এমন ভাবে তোমাকে প্রকাশ করবো যে তারা তোমায় দেখে শিউরে উঠবে।
আমি তোমার দিল খুলে দেখবো সেখানে আমার প্রতি তোমার কোন ধরনের টান আছে। অপেক্ষা করো, অপেক্ষা করো সেইদিনের, আমি আসছি।"
ইতি
তোমার রক্ত
মৌরি এক নিঃশ্বাসে চিঠি টা শেষ করলো। তারপর কাঁপতে কাঁপতে চেয়ারে বসে পড়লো।
কে লিখতে পারে এটা? কেনো লিখেছে? আমি কার ক্ষতি করলাম?
মৌরি দেখলো দূসর কালো রঙ্গের খামে চিঠিটা একটা ছেলের হাতে দিয়ে পাঠিয়েছে কেউ। ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করায় নাম বলতে পারলো না।
--- মৌরি, মৌরি কোথায় তুমি? মাহিম ঘুম থেকে উঠছে, ও কাঁদছে তো।
--- জি আসছি আমি।
মৌরি তাড়াতাড়ি চিঠিটা লুকিয়ে ডায়রিতে রেখে দিলো। তারপর মাহিমের পাশে আসলো, জাহিদ তখন একমনে তার কাজ করছে।
মৌরি মাহিমকে কোলে নিয়ে পাশের রুমে গিয়ে দেখলো মুনা ঘুমিয়ে পড়েছে। একহাত দিয়ে ওর গায়ে চাদরটা দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে, লাইট অফ করে রুমে চলে আসলো।
মনে তার চিন্তার ঝড় বইছে।
--- কি গো, কি এতো ভাবছো?
--- তুমি বুঝলে কি করে আমি ভাবছি?
--- আজ পনেরো বছর থেকে তোমাকে দেখছি, তোমার দিলের প্রতিটা স্পন্দন আমি বুঝতে পারি ডার্লিং।
--- হয়েছে তুমি উঠে পড়, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
--- বলবে না কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো? জাহিদ ওর হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো।
--- কিচ্ছু না, চিন্তা করলে দুজন একসাথেই করবো। এখন ছাড়ো, ইশ্ রাত কয়টা বাজে দেখেছো?
পরপর দুইদিন আরও দুইটা চিঠি আসলো।
কে লিখছে এসব? কেনো লিখছে? আমি কার এমন ক্ষতি করলাম? দেশে আসলামই তো এক সপ্তাহ হলো, কে জানলো আমি দেশে এসেছি?
বিকালবেলা মৌরি মাহিমের পাশে শুয়ে ভাবছে।
মৌরি তার স্বামী জাহিদের সাথে পনেরো বছর পর দেশে ফিরেছে। তাও আসতো না, কিন্তু মুনা মেয়েটা এতো পাগল, তার নাকি মামনি, বাপি, ভাইয়া সবাইকে লাগবে। এই মেয়েটার কোন আবদার সে ফেলতে পারেনা। কারন ওর বয়সী তারও যে একটা মেয়ে ছিলো, আর একটা ছেলে। ছেলেটা হয়তো আজ ২০ বছরের হয়ে গেছে। কেমন হয়েছে আমার আয়ান, এখন হয়তো সে আরও সুন্দর হয়েছে, আমার কথা কি মনে পড়ে তার? মেয়েটা কি আমার কথা জানে? ওরা হয়তো জানে খুব খারাপ একটা মা ছিলো সে। হ্যা খারাপ, খুবই খারাপ ছিলো সে, সারাদিন হইহুল্লোড়, সাজগোজ আর ছেলেদের সাথে আড্ডা দিয়ে তার সময় কাটতো। একসময় খারাপ একটা ছেলের ফাঁদে পড়ে সে। তার হাত থেকে সিয়াম তাকে বাঁচিয়েছিল, বিয়েও করেছিল, দিয়েছিলো স্ত্রীর মর্যাদা। এমন কিছু নেই যে সে চাওয়ার আগে পেতোনা। বিনিময়ে সিয়াম শুধু চেয়েছিলো সে যেন ঘরের বউ হয়ে থাকে, এসব ছেলেদের সাথে মেলামেশা না করে। কিন্তু মৌরি মনে করেছিলো সিয়াম তার স্বাধীনতা হরন করছে। সে আরও দ্বিগুণ তালে এসব শুরু করেছিলো। সিয়াম তখন তার ব্যবসার কাজে ব্যাস্ত, এমন সময় এতো বড় একটা জগন্য কাজ সে করেছিলো যার কোন মাফ নেই, ইসলামে তার শাস্তি বেত্রাঘাত করে বা মাটিতে গেড়ে পাথর ছুড়ে মৃত্যু। কিন্তু মহৎপ্রাণ সিয়াম তাকে আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর মৌরি প্রেগন্যান্ট থাকায় মাফ করে দিয়েছিলো। তাও মৌরির বুঝেনি, আন্নির জন্মের বিশ দিন পর সেই ছেলেটার সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তখনও বুঝেনি সে যে ছেলেটা তাকে নয় তার সাথে আনা টাকা আর গহনার লোভে নিয়ে এসেছে। কিছুদিন পর যখন অসহায়ের মতো মৃত্যু ছাড়া তার আর কিছু করার ছিলো না, গন্তব্যহীন রাস্তায় সুইসাইড করার জন্য গাড়ির নিচে পড়েছিল তখনই জাহিদ তাকে আশ্রয় দিয়েছিল, বলেছিল..
--- আমাকে বিয়ে করবেন?
--- আমার মতো খারাপ মেয়ের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই, কেন বাঁচালেন আমায়।
--- মরে গেলে তো আরও দ্বিগুণ শাস্তি পেতে হবে, তার চাইতে বরং দুনিয়াতেই প্রায়শ্চিত্ত করুন।
মৌরি আবার ও রাজি হয়ে গিয়েছিলো ততদিনে সিয়াম তাকে তালাক দিয়েছে।
বিয়ের রাতে জাহিদ তাকে বলেছিল,
--- আমার দুইমাসের একটা মেয়ে আছে, তাকে নিজের মেয়ের মতো বড় করতে পারবেন না?
--- আপনার আরেকজন স্ত্রী আছেন?
--- নাহ, মেয়ের জন্মের সময় মারা গিয়েছেন। এখন মেয়েকে বড় করার জন্য একজন মা প্রয়োজন, আপনি হবেন সেই মা?
তারপর কোলে তুলে দিয়েছিলো মুনা কে। পরম মমতায় তখন মুনাকে কোলে নিয়ে সেদিন অনেক কেঁদেছিল মৌরি।
ভালো একজন মা হয়েছিল সে, আর তার কিছুদিন পর তারা সৌদিআরবে স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে জানেনা তার বুকের মানিকেরা কেমন আছে, কি করছে, কত বড় হয়েছে।
আর এদিকে সিয়াম..
বিয়ে করেছিলো একজন কে কিন্তু মৌরির জায়গা দিতে পারেনি সে মেয়ে কে, আর মেয়েটাও আপন করে নেয়নি আয়ান আর আন্নি কে।
কিন্তু সিয়াম তার বাচ্চাদের যথেষ্ট আদর স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ব্যবসার জন্য যখন একেবারেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো সে তখন আয়ান এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
সে সময় একদিন শুনলো আয়ান হাসপাতালে ভর্তি, তাড়াতাড়ি গেলো হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তার জানালেন,
---- আপনার ছেলে আর কতদিন বাঁঁচবে আমরা জানিনা সিয়াম সাহেব।
---- কেনো ডাক্তার?
--- কারন আয়ান ড্রাগ এডিক্টেড, আর এতো কম বয়সে এতো ড্রাগস নিয়েছে যে বডি সেটা এক্সেপ্ট করতে পারেনি।
--- নায়ায়া ডাক্তার, আমার ছেলে কে বাঁচান, আমার ছেলের এমন হতে পারেনা। যত টাকা লাগে ওকে সুস্থ করে তুলুন।
--- বললেই তো হয়না মি. সিয়াম। টাকা দিয়ে সব পাওয়া যায়, কারও জীবন আর ভালোবাসা নয়। ছেলেটা অনেকদিন থেকে ড্রাগস নিচ্ছে আপনি বা ওর মা কি সে খুঁজ নিয়েছিলেন?
--- ওর মা নেই ডাক্তার, আমার ভুল হয়েছে, ওকে আমি সময় দেইনি, ভালোবাসা ও দেইনি। আমার বাচ্চারা যে ভালোবাসার বড় কাঙ্গাল।
সিয়াম সেদিন হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল। ও জীবনে কখনও কাঁদেনি, কিন্তু সেদিন সবকিছু হারানোর বেদনায় এক বাবার মন কেঁদে উঠেছিল।
--- কোন উপায় কি নেই ডাক্তার?
--- আছে, একটাই উপায় এখন ওকে নিয়মিত ড্রাগস দিতে হবে। নাহলে ওকে বাঁচানো যাবে না, এই ড্রাগ ই ওকে যতদিন বাঁচিয়ে রাখে।
সেদিন একজন বাবা তার ছেলেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে নিয়ে গিয়েছিল, ছেলেকে আরও কিছু দিন পাশে দেখার আকাঙ্খায় হাতে তুলে দিয়েছিল জীবন হরনকারী ড্রাগ৷ চোখের সামনে বিলীন হতে দেখেছিল হাসিখুশি প্রাণচঞ্চল একটা জীবনকে, যার জীবন শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো। হাসপাতালে ধীরে ধীরে ছেলের পাশে এসে বসলো সিয়াম।
--- এটা তুই কেনো করলি আব্বু? তোর কষ্ট বা কোনকিছু চাওয়ার থাকলে আমাকে বলতি।
--- আমার মা খুব খারাপ ছিল তাইনা আব্বু? একবারও আমাদের দেখতে আসেনি, বাহিরের ছেলেদের সাথে সম্পর্ক ছিলো।
--- এসব কেন বলছিস আব্বু? যে চলে গেছে তাকে নিয়ে কথা বাড়িয়ে কি লাভ?
---- নাআআ, আমি দেখেছি সে খারাপ ছিলো, সে যে কাজ করতো আমি তা সহ্য করতে পারতাম না। বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদতাম, সে আমাকে আদর করেনি, সে আমার কান্নার আওয়াজ পায়নি। তাকে আমি পেলে খুন করবো, সে মা নয়, মা নামের কলঙ্ক।
আয়ান এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হাঁপাতে লাগলো। সিয়াম আশুভরা চোখ নিয়ে আয়ানের মাথায় হাত রাখলো।
---- তার কথা ভুলে যা বাবা। সে এখন আমাদের মাঝে নেই।
--- আমি ভুলতে পারিনা আব্বু, শত চেষ্টা করেও ভুলতে পারিনা। আমার ভাবনায়, আমার স্বপ্নে সে আসে, খুবই খারাপ ভাবে আসে, আমাকে ঘরের কেউ ভুলতে দেয়না আব্বু। আমার বোনের দিকে তাকালে ওকে দেখতে পাই।
--- আমি তো ভুলে ওকে গেছি, এমন করলে হয়? আন্নি এসব শুনলে কি ভাববে?
--- আচ্ছা আব্বু আন্নির মুখটা প্লাস্টিক সার্জারী করালে কেমন হয়?
--- কেন? চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো সিয়াম।
--- আন্নি ওই বদ মহিলার মতো হয়ে গেছে। ওর দিকে তাকালে মহিলার কথা আরও বেশি মনে পড়ে, মনে হয় আন্নি কেই খুন করে ফেলি।
সিয়াম হতবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
--- মৌরি কই তুমি? দেখো কে তোমাকে পার্সেল পাঠিয়েছে।
--- দেখিতো কে পাঠালো। মৌরি পার্সেল বক্স দেখেই কেঁপে উঠলো লাল কাপড়ে মোড়া একটা বক্স, বক্সের মধ্যে কোথাও কোন নাম ঠিকানা নেই দেখে মৌরির বুকটা ধ্বক করে উঠলো।
বক্স খোলে দেখলো এক টুকরো লাল কাপড় আর একটা চিরকুট। তাতে লেখা,
" অপেক্ষায় ছিলাম তুমি কবে দেশে আসবে। এসেছো তুমি, আমার মৃত্যুর আগে আমার আশা পূরণ হবে। তোমায় আমি প্রাণভরে দেখবো, শেষ দেখা। আর...
তারপর তোমাকে খুন করবো, মনের স্বাদ মিটাবো।"
মৌরি তাড়াতাড়ি চিরকুট টা লুকিয়ে ফেললো।
--- কি হয়েছে মৌরি? কে পাঠিয়েছে এটা?
--- জানিনা, হয়তো কারও রসিকতা এসব। কেউ ফান করছে আমার সাথে।
--- এই ফান করাটা কেমন অদ্ভুত না? কে করবে এমন অদ্ভুত ফান?
মৌরি কোন কথা না বলে উঠে গেলো। তারপর মুনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আদর দিয়ে মাহিমকে সাথে নিয়ে জাহিদের সাথে গল্প করতে বসলো।
এসব কোনকিছুতেই মন বসাতে পারলো না। শেষে জায়নামাজে দাঁড়ালো মনের শান্তির জন্য, জাহিদের সংস্পর্শে আসার পর ও সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তারপর থেকে এমন কোন দিন নেই সে জায়নামাজে বসে কাঁদে না, বাচ্চাদের ভালোর জন্য দোয়া করেনা।
পরদিন ঘুম ভাঙ্গার পর মৌরি নিজেকে আবিস্কার করলো একটা অন্ধকার ঘরে।
সে এখানে আসলো কেমন করে?
উঠে বসতে গিয়ে দেখলো তার হাত পা বাঁধা।
--- মুনা, মুনা তুই কই? মুনার বাপি? আমি কোথায়?
---উঠে গেছেন মহারানী? আমি তো মনে করেছি আরও পরে ঘুম ভাঙবে। তা কেমন আছেন?
--- কে তুমি? আমার বাড়িতে কি করছো? আর এতো অন্ধকার কেন? মনে পড়লো কলিংবেলের শব্দে সে রাতে দরজা খুলেছিল আর তারপর সবকিছু অন্ধকার।
--- ওহহো, লাইট জ্বালানো নেই বুঝি? আমার পরিচয় তো দেওয়া হয়নি। আগে দেখুন তো এমনি চিনতে পারেন কিনা?
তারপর লাইট জ্বালিয়ে যখন সামনে আসলো তখন মৌরি যেনো শক খেলো। ঠিক চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু এতো অল্প বয়সী একটা ছেলে আমাকে ধরে এনেছে কেনো?
--- এই ছেলে কি চাও তুমি? আমাকে বেঁধে রেখেছো কেন? পরিচয় দাও তোমার।
--- সিয়াম চৌধুরীর ছেলে আয়ান চৌধুরী আমি। চিনেছেন এখন? আর এই ছবিতে হচ্ছে আমার বোন আন্নি, ভাবছি ওর মুখটা প্লাস্টিক সার্জারী করে ফেলবো, কারন ওর চেহারা একজন ডাইনীর মতো।
--- বাবা আয়ান, তুই এতো বড় হয়ে গেছিস? কোথায় আমার আন্নি? আয় না বাবা আমার বুকে আয়, এতোদিন পর আমার বুকের কষ্ট, এই বুকে যে আগুন জ্বলছে তা মিটাই।
--- না, আমার বুকে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে, তোকে খুন করার আগুন। তোকে খুন করে আমি পৃথিবীর মানুষকে দেখাবো, সমস্ত নারীজাতিকে বুঝাবো পরকীয়া করে বাচ্চাদের ফেলে যেনো না যায়৷ তাহলে কোন সন্তান আর কু-পথে পা ফেলবে না, মৃত্যুর দোয়ারে পৌছাবে না। তিল তিল করে প্রতিনিয়ত অবহেলা আর অনাদরে মরবে না। তুই একবারও আমার বোনের কথা চিন্তা করিসনি ডাইনী। আমার বোনকে অত্যাচার করার দৃশ্য, কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ার দৃশ্য আমি দেখেছি। একটু ভালোবাসার জন্য হাহাকার করেছি।
--- আমি ভুল করেছিলাম বাবা, আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি, একবার তুই আমার কাছে আয় আমার বুকে আয়।
--- আচ্ছা তোকে কেমন করে মারা যায় বলতো? হাত পা কেটে টুকরো টুকরো করবো? নাকি মুখটা আগে ছিন্নভিন্ন করবো? এই সুন্দর মুখ দেখিয়ে তুই ছেলেদের পাগল করতি তাইনা? এই সুন্দরের অহংকারের জন্য তুই ছোট ছোট দুইটা বাচ্চাকে ছেড়ে আসতে দ্বিধা বোধ করিসনি।
--- আয়ান! এসব তুই কি বলছিস? আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আমাকে ছেড়ে দে, আমার মাহিম কাঁদছে হয়তো। ওরা আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা।
---আর আমরা থাকতে পারবো সেটা ভেবেই তুই গিয়েছিলি তাইনা? এখন ওরাও থাকতে পারবে হা হা হা।
জানিস তুই আমি এখন ড্রাগস নেই। ডাক্তার বলেছে আমি কয়েকদিন পর মারা যাবো। তাই আমার তো কোন শাস্তি ও হবে না। আমি নিজেই চার পাঁচ বছর থেকে পরিকল্পনা করে এসব করেছি জানিস? আর অপেক্ষা করেছি তুই কবে আসবি। হা হা হা...
--- আয়ান প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে, আমি ভুল করেছিলাম, আমি তোদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দে, আমি তোর মা আয়ান।
--- মাতাল হয়ে গেলে এসব আর মনে থাকবে না। আমি আজ লিমিট ক্রস করে ড্রাগস নেবো। তখন তুই আমার মা থাকবি না।
আয়ান সেখানে বসেই অনেক্ষণ কাঁদলো, তারপর মৌরির মাথায় লাটি দিয়ে জোরে বাড়ি মেরে অজ্ঞান করলো। মায়ের সমস্ত শরীরে আদরভরে হাত বুলালো, মাকে জড়িয়ে ধরে আকাশপাতাল কাঁপিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
চব্বিশঘণ্টা পর যখন জাহিদের দেওয়া ইনফরমেশন এ আয়ান আর মৌরিকে উদ্ধার করা হলো। সিয়াম আয়ান কে দেখে সেখানেই জ্ঞান হারালো।
কারন মৌরি বেঁচে আছে, হাত পা বাঁধা অবস্থায় আর আয়ানের সম্পূর্ণ শরীর ছিন্নভিন্ন লাশ হয়ে আছে। হয়তো রক্তের টান সেজন্য মাকে খুন না করে সে নিজেকে খুন করলো। আর মৌরি!! এতোবড় একটা শকড ও সহ্য করতে না পেরে বাকশক্তি এবং বোধশক্তি দুটোই হারিয়ে ফেললো। মুনা আর মাহিম ও তাদের মা, মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলো।
কিছু বাস্তবতা আর কিছু সিদ্ধান্ত এমনই হয়, ধ্বংস করে দেয় কিছু মানুষের আর সংসার। খুন করে কিছু নিষ্পাপ প্রাণ।
Tags:
Bengali Stories
Hate Story
Love Story
Mehzbin Mun
Romantic Story
Valobasar Golpo
ভালোবাসার গল্প