ভারত বন্ধু না শত্রু? ভারতীয় বন্ধুতের কিছু নমুনা খুব ছোট করে লেখার চেষ্টা করিছি, আসলে প্রত্যেকটা ব্যাপারই এত ব্যাপক যে নিয়ে বিস্তর লিখা যাবে। আমরা যখনই কোন ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে এগিয়ে যাই বা সমপর্যায়ে চলে যাই তখনই তারা আমাদের ঐ ক্ষেত্র ধ্বংসে উঠে পরে লাগে, যার উদাহরন পাট, গার্মেন্টস, ক্রিকেট। দয়াকরে এড়িয়ে যাবেন না আমাদের প্রত্যেকের ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মত থাকতে পারে কিন্তু দেশ সবার আগে। দলের চেয়ে দেশ বড় এটা ভুলে গেলে চলবে না। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সকলকে কথা বলতে হবে অথবা প্রতিবাদ করতে হবে। তা না হলে জাতি, সাংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ক্রিকেটের ধ্বংস সময়ের ব্যাপার মাত্র। “শেয়ার করুন ও প্রতিবাদ করুন”
ছবিঃ ইত্তেফাক |
দয়া করে এই পেস্টটিকে রাজনৈতিক ভাবে দেখবেন না, দেশকে ভালোবাসি বলেই
লিখা, যদি আমার পোষ্টটি পড়ে একজন লোকও সচেতন হয় তাতেই আমার সার্থকতা।
প্রথমতঃ
সাংস্কৃতি আগ্রাশন (যুদ্ধের চাইতেও ভয়াভহ কারন এর মাধ্যমে কোন দেশ বা
জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়া যায়) যার ফলস্বরূপ আমাদের সমাজে স্ত্রীরা
স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে পরপুরুষের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে, বিবাহ বিচ্ছেদ
হচ্ছে সিরিয়ালে দেখানো ভারতীয় জামার জন্য, মা ছেলেকে হত্যা করছে, তাদের
টিভি চ্যানেলের আগ্রাশনে আমাদের দেশীয় চ্যানেলে সহ চলচিত্র শিল্প ধ্বংসের
মুখে, দেশীয় পোশাক ধ্বংসের মুখে কারন ১৬ বছর এর তরূনী থেকে শুরু করে ৪৫
বছরের আন্টি কেউ দেশীয় পোশাক পরেনা, কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেশীয় গান
বাজানো হয় না, । এই পরিস্থিতি বিরাজ করলে একসময় আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে
ফেলবো।
দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশে যে ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী ভারত
থেকে প্রবেশ করেছে তার প্রায় কয়েক ডজন নদী থেকে ভারত পানি প্রত্যাহার করে
চলেছে। আমার জানামতে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত ২২টি নদী ও উপনদীর ওপর গ্রয়েন ও
বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। ধারণা করতে
অসুবিধা নেই, ১৯৮৭ সালের পর থেকে গত ২৫ বছরে আগের ২২টির অতিরিক্ত আরও
অসংখ্য আন্তর্জাতিক জলপ্রবাহ থেকে ভারত বাংলাদেশকে অবহিত না করেই একতরফা
পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে
একমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়েই ভারত চুক্তি করেছে। সেটাও সম্ভব
হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অগাধ দেশপ্রেমের কারণে। সর্বশেষ ভারতের
সুপ্রিমকোর্ট ৫৪টি অভিন্ন নদী সংযুক্ত করে উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহারের
পক্ষে যে রায় ঘোষণা করেছেন তা রীতিমত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার
শামিল। এই নদীরগুলোর পানি প্রত্যাহার করে ভারত যে আমাদের কৃষি, জীব
বৈচিত্র্য, পরিবেশ সহ কত লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি করেছে তা বিস্তর গবেষণার
ব্যাপার। দেশের সুশীল সমাজ পানি সমস্যা জাতিসংঘে উপস্থাপনের কথা বললেও
সরকার নির্বিকার, সরকার বলে টিপাইমুখে বাঁধ দিলে আমাদের কি লাভ হবে...
সত্যিই সেলুকাস...
তৃতীয়তঃ যারা গার্মেন্টস শিল্পে আছেন তারা
জানেন ভারতীয়রা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পও ধ্বংসের জন্য উঠে পরে
লেগেছে। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তারা
বিভিন্ন এজেন্টদের ব্যবহার করছে।
চতুর্থতঃ পাঁট ছিলো আমাদের সোনালী আশ, পাঁটশিল্পে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম তারা আমাদের পাঁটশিল্প ধ্বংস করেছে তাও অনেক আগের কথা।
পঞ্চমতঃ বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতকে দেয়া ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করার ফলে ভারতের পরিবহন ব্যয় কমে যাবে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি, ১০০ টাকার খরচ দাঁড়াবে ৩০ টাকারও কম। এছাড়া সময় লাগবে আগের তুলনায় মাত্র ২৫ শতাংশ বা চার ভাগের এক ভাগ। এ সময় ও অর্থ সাশ্রয় বহুগুণে তাদের অর্থনেতিক সম্পদ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে কাজে লাগবে। ভারতের এতো লাভ যেখানে, সেখানে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? আমাদের সার্ভিস ও অবকাঠামোর সক্ষমতা কতোটুকু এবং আমাদের সার্ভিস ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় কতো? কী কী লাভ, আর কী কী ক্ষতি বা সমস্যা? কোনটার চেয়ে কোনটা বেশি - এসব কি বিবেচনা করছে সরকারি মহল? মোটেই করছে না। বরং দেশের স্বার্থ করুণভাবে উপেক্ষা করছে। বিনা মাশুলেই ট্রানজিটের পণ্য পরিবহন করা হয়েছে; হচ্ছে। এখন যে মাশুল নির্ধারণ করা হচ্ছে তাও খুব সামান্যই।
ষষ্টতঃ সীমান্তে নিরিহ বাংলাদেশীদের হত্যা, গুম ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুন্ঠন করে যাচ্ছে। পাখি গুলি করে মারলেও আইন আছে কিন্তু বাংলাদেশীদের গুলি করে মারলে কোন আইন নাই, কোন প্রতিকার নাই। গুলি বন্ধের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা বেড়েই চলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী ২০০০-২০১১ এক দশকে বিএসএফ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫ নারী, অপহরণের শিকার হয়েছে ৯৩৩ , নিখোঁজ হয়েছে ১৮৬ জন, হতে হত্যা হয়েছে ৯১৬ জন। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুসারে কোনো দেশ অন্য দেশের নাগরিককে হত্যা করতে পারে না। কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে তাকে গ্রেফতার করে সে দেশের আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। তারা কোন আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। এ কেমন বন্ধু?
সপ্তমতঃ সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য ও সম্পদ। অজ¯্র প্রাকৃতিক-বনজ সম্পদ, অতুলনীয় জীববৈচিত্র্য, বিস্তৃতি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের দিক বিচার করলে সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট আমাজন জঙ্গলের পরই বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের স্থান। বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের বৃহত্তর অংশটি (৬২%) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত এবং বাকী অংশ ভারতে অবস্থিত। ভারত সুন্দরবন ধ্বংস করতে চায় কারন সুন্দরবনের যে বিদেশী পর্যটক আসে তারা ভারতে না গিয়ে বাংলাদেশে আসে, পর্যটন ছাড়াও সুন্দরবনের বহুমুখী গুরুত্ত রয়েছে(যা বলে শেষ করা যাবে না)। সুন্দরবন ধ্বংস হলে এই ক্ষতি আমরা কোনদিনও পুরুন করতে পারবো না। বনবাসী মানুষ ও পশুপাখি তাড়িয়ে অঞ্চল দখল নিচ্ছে ভারতীয় এনটিপিসি, বাংলাদেশের ওরিয়নসহ অনেক ব্যবসায়িক সংস্থা। ভারতের স্বার্থে সুন্দরবন ধ্বংসের নিশ্চিত আয়োজন করছে সরকার। সুন্দরবনের ৯ কিঃ মিঃ দূরত্বে (সরকারি হিসাব মতে ১৪ কিঃ মিঃ) ভারতের অংশীদারিত্বে নির্মাণের আয়োজন চলছে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। আইন ভেঙ্গে, সংবিধান ভেঙ্গে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে তৈরী হচ্ছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে ভারত মালিকানা পাবে ৫০ ভাগ। আর ধ্বংস হবে এদেশের সুন্দরবন। এদেশের অর্থনীতি। এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার দায়িত্ব আমার আপনার সকলের।
অষ্টমতঃ আমরা যখনই ক্রিকেটে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠিছি, আমাদের ক্রিকেটাররা সারা যখন বিশ্বে মাথা উচু করে খেলতে শুরু করেছে ঠিক তখনই তারা আমাদের ক্রিকেটকে নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, আমাদের ক্রিকেটকে ধ্বংস করার জন্য।
ভারত কখনও তার ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে তোয়াক্কা করে না। ভারত কখনই চায় না বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক (বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের করনে) তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, দেশেকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া। এই কি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? এই কি স্বাধীনতা?
তথ্যসুত্রঃ উকিপিডিয়া, জাতীয় পত্রিকা ও ব্লগ
লেখাঃ নূর ই আলম রবিন