Your Name (2016)-এনিমে ফিল্ম
আচ্ছা কেমন হতো, যদি আপনি একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখতেন আপনি অন্য কারো শরীরে বসবাস করছেন? ধরুন একদিন নিজের বিছানায় ঘুমালেন এবং পরদিন ঘুম ভাঙল অচেনা অজানা এক ঘরে, অচেনা একজনের শরীরে। কেমন হবে ব্যাপারটা?
“Kimi No Na Wa” বা ইংরেজিতে “Your Name” এমনই কাহিনী নিয়ে নির্মিত একটা অদ্ভুত সুন্দর জাপানিজ এনিমে ফিল্ম। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগানো এবং বক্স অফিসে সর্বোচ্চ কামাই করা এনিমে মুভি এটা। রটেন টমেটো তে ৯৮% ফ্রেশ রেটিং ও আইএমডিবি’র টপ ১০০ মুভির লিস্টে থাকায় এটা যে গড়পড়তা মুভি থেকে বেশ উপরে, সেটা আর বলার অপেক্ষা থাকেনা।
গল্প শুরু হয় ‘তাকি’ আর ‘মিতসুহা’ এর অদলবদল দিয়ে। হঠাৎই একদিন ঘুম থেকে উঠে তাকি বুঝতে পারে সে নিজের বাসস্থান টোকিও থেকে অনেক দূরে অচেনা এক গ্রামের এক মেয়ের শরিরে চলে এসেছে। একইভাবে টোকিও শহরে থাকা তাকি’র শরিরের ভেতরে নিজের সত্ত্বাকে আবিষ্কার করে মিতসুহা। দুইজন মানুষের ব্রেন বদল করে দিলে যেমনটা হয়, ব্যাপারটা অনেকটা তেমন। গ্রামে থাকা মিতসুহার স্বপ্ন থাকে রাজধানী টোকিও দেখার, অপর দিকে স্কুল, চাকরি এসবের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায় তাকি নিজেও। এই অদলবদল যেন তাদের সামনে সেই সুযোগকেই খানিকটা অদ্ভুতভাবে এনে দেয়। কিন্তু এরা না একে অপরকে চেনে, না একে অপরের বসবাস – জীবনযাপন বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ব্যাপারে কিছুই জানে। প্রথম প্রথম দুইজনেরই এভাবে একে অপরের জীবনকে যাপন করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়, কিন্তু একটা সময়ে এসে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তারা। একদিন – দুদিন পর পর এমন হতো তাদের মাঝে, এই অদলবদল। তো যখন একজন অন্যজনের শরিরে চলে যেতো, তারা সারাদিনের কাজকর্মের ব্যাপারে নোট করে রাখতো যাতে পরেরবার তাদের নিজ নিজ শরিরে থাকা অবস্থায় অপরজনের করে যাওয়া কর্মকাণ্ড বুঝে নিতে সুবিধা হয়। ((মুভি দেখলে আরো ক্লিয়ার লাগবে ব্যাপারটা))
তো বেশ ভালোই চলছিলো তাদের এমন জীবনযাত্রা। কিন্তু একদিন হঠাতই সব বন্ধ হয়ে যায়। দিন-সপ্তাহ পার হয়ে যায়, তাকি অপেক্ষা করে আবার মিতসুহার সাথে এমন অদলবদলের, কিন্তু তা আর হয়ই না। যে ফোন নাম্বার তার ফোনে মিতসুহা সেভ করে রেখে যায়, সেটা আনরীচেবল দেখায়। মিতসুহার সাথে নিজের এমন বিচ্ছিন্নতা মেনে নিতে না পেরে তাকি বের হয়ে পড়ে তাকে খুঁজতে। মিতসুহার গ্রামের নামও মনে থাকেনা তাকির, তার সমগ্র খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা স্মৃতি থেকে আঁকা ওই গ্রামের কিছু স্কেচ এর উপরেই নির্ভর করে থাকে। সে আদৌ মিতসুহাকে খুঁজে পায় কিনা, এটা মুভি দেখলে জানতে বেশি সুবিধা হবে।
আপনার এটুকু পড়ে মনে হতে পারে “সবই তো বলে দিলো এই ছেলে, মুভিতে দেখবো কি?” কিন্তু আমি হলপ করে বলতে পারি, আপনি যদি এই মুভি প্রথমবার দেখতে বসেন, তাহলে আপনি যা আশা করবেন তার ধারেকাছে ঘেঁষেও এই মুভি যাবেনা। এত বড় রকমের ধাক্কা আপনাকে দেবে যে আপনার মনে হবে ছোটোখাটো স্ট্রোক করে বসছেন, আপনার হার্টবিট স্কিপ করে যাবে এর কাহিনীর গতিময়তায়।
মুভির পরিচালক ‘মাকোতো শিনকাই” মুভিটাকে এত বেশি অসাধারণ বহমানতা দিয়েছেন, যা আপনাকে একটা সেকেন্ড; একটা সিঙ্গেল সেকেন্ডও বিরক্ত হতে দেবেনা। আমার জীবনে দেখা সেরাতম একটা এনিমেটেড ভিজুয়ালাইজেশন দেখতে পেয়েছি এখানে। এত ক্লিন এনিমে আমি আগে দেখেছি বলে মনে পড়েনা। পুরো মুভির সাউন্ড(আবহ + গানগুলো) আরো অসাধারণ। হলিউডেও এমনটা এনিমেশনের ক্ষেত্রে দেখা যায়না, বিশেষত আবহ সঙ্গীত।
এটা পুরা ওয়ার্ল্ডওয়াইড বিশাল সাড়া ফেলছে, আইএমডিবি-রটেন টমেটোর টপলিস্টে চলে গেছে, almost from out of nowhere. এবং আপনি এটা দেখার পরে নিঃশ্বাস বন্ধ করা একটা অনুভূতি নিয়ে বুঝতে পারবেন যে এটা কেন ওই অবস্থানে থাকার যোগ্য। এনিমেশনকে আলাদা সেকশন বিবেচনায় এটাকে আমি পিউর মাস্টারপিস বলবো এবং জীবনে দেখা অন্যতম অনন্য একটা মুভি বলবো।
আপনার জাপানিজ এনিমে দেখার অভ্যাস যদি না ও থাকে, তাও এটা দেখুন। টিনেজ ড্রামা, রোমান্স, মিস্টেরি, থ্রিলার- ইত্যাদি ভালোলাগলে, এটা দেখুন। ওগুলা ভালো লাগেনা? তাও এটা দেখুন। মোটকথা মুভিটা অন্তত একবার হলেও দেখুন। নাহলে “দেখার মতো” অনেক বেশিই ভালো কিছু একটা বাদ থেকে যাবে ❤
লেখাঃ Masud Rana