Shaadi Mein Zaroor Aana ২০১৭ সালের বলিউড সিনেমা। যার মূল চরিত্রে Rajkumar Rao এবং Kriti Kharbanda অভিনয় করেন। সিনেমাটির IMDB রেটিং ৭.৮ ফেসবুক ইউজারদের রেটিং ৫ এর মধ্যে ৪.৯। গুগল ইউজারদের মধ্যে ৯৬% দর্শক এটা পছন্দ করেছে।
সমস্যাটা এখানেই। সিনেমা কোনটা ভালো লাগবে আর কোনটা ভালো লাগবে না, এটা দর্শককে শিখিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি আমি নই। দর্শকের ভালোলাগার এবং মন্দ লাগার অধিকার আছে। কিন্তু সিনেমা যেহেতু সংস্কৃতির আয়না হিসেবে কাজ করে তাই এটা নিয়ে ভাবনার দরকার আছে। যেহেতু বলিউডের সিনেমা আমাদের দেশের দর্শকরাও পছন্দ করে এবং বড় একটা দর্শক শ্রেণি আছে তাই এটা নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে।
এই সিনেমায় আমাদের রুচি এবং চিন্তার স্তরটা বোঝা যায়। "কেন?" সেটা কাউকে দোষ না দিয়েই লিখতে চাই।
স্পয়লার এলার্ট।
রাজকুমার রাওয়ের অভিনয়ের ভক্ত হিসেবেই সিনেমাটা দেখা। সিনেমার কাহিনী শুরু হচ্ছে রাজকুমার রাও (সাততু) এবং কৃতী খারবান্দা (আরতি) পরিবারের চাপে দুজন বিয়ের জন্য প্রাথমিক কথাবার্তা বলতে যায়। প্রথম আলাপেই তারা দুজনকে পছন্দ করে ফেলে এবং বিয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় পরিবারকে। প্রথাগত এরেঞ্জ মেরেজ যেভাবে হয় সেভাবেই চলতে থাকে সব। সাততু এক্সাইজ অফিসের ক্লার্ক( ৩য় শ্রেনীর সরকারি চাকরী) এবং তাঁর বাবা একজন রিটায়ার্ড প্রফেসর। তাই বিয়ের মার্কেটে সাততু হট কেক। সাততুর পরিবার আরতির বাবাকে জানিয়ে দেয় ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দিতে হবে। যদিও আরতি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্টক্লাস পেয়ে পাস করে কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। আরতির বাবা কষ্ট হলেও মেনে নেয় যৌতুকের ব্যাপারে। সাততু এবং আরতির প্রেম এগিয়ে যায়, বিয়ের দিনও চলে আসে দ্রুত। বিয়ের সন্ধ্যায়ই আরতির কাছে খবর আসে সে PCS পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে অর্থাৎ সে আনঅফিসিয়ালি প্রথম শ্রেনির কর্মকর্তা। PCS হলো Provincial Civil Service। বিশাল ব্যাপার। ঠিক সেই সময়েই আরতির বোন জানতে পারে সাততুর মা অর্থাৎ আরতির শাশুড়ি আরতিকে চাকরী করতে দেবে না। যদিও সাততুর কোনো সমস্যা ছিলো না কিন্তু তাঁর মা এটা কোনো ভাবেই মেনে নেবে না। বোনের পরামর্শে আরতি পালিয়ে যায়, বরপক্ষ আসার আগেই। আরতিও সাততুকে ভালোবাসে প্রচন্ড। সে প্রথম শ্রেনির চাকরী পায় আর সাততু ৩য় শ্রেনি এটা নিয়ে তাঁর কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু যেহেতু চাকরী করতে দেবে না, তাঁর শাশুড়ি। এটা আরতি মেনে নিতে পারে নি। বিয়েতে ২৫ লাখ যে যৌতুক চাওয়া হয় তার মধ্যে ১৮ লক্ষ টাকা নগদ পরিশোধ করে আরতির পরিবার। যেহেতু আরতি পালিয়ে গেছে, আরতির মামা বুদ্ধি করে বলে যৌতুক নেয়ার ব্যাপারটা আরতি জেনে গেছে বিধায় সে পালিয়ে গেছে, এখন আমাদের টাকা ফেরত দেন। সাততুর বাবা এবং মামাকে আটকে রেখে টাকা উদ্ধার করে আরতির পরিবার। যেহেতু কিছু টাকা খরচ করে ফেলে সাততুর বাপ, তাই ঐ রাতেই মায়ের গয়না বিক্রি করে পুরো টাকা পরিশোধ করে সাততু। সাততুর মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। সামাজিক ভাবে অপমানিত হয় সাততুর পরিবার। প্রথমার্ধ এভাবেই শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে আরতির চাকরী জীবনের ঘটনা দিয়ে শুরু হয়। পাঁচ বছরে আরতি আরো বড় পজিশনে চলে যায়। কিন্তু তাকে নিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। কোনো রকম অনিয়ম না করেও তাঁকে তিন কোটি টাকা ঘুষের মামলায় জড়ানো হয়। বিভাগীয় তদন্তের জন্য সেন্ট্রাল থেকে একজন I.A.S. অফিসার অর্থাৎ ইন্ডিয়ান এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। দেখা যায় এই কর্মকর্তা হলেন সাততু। আরতির পালিয়ে যাবার পর জেদের বশে পড়াশুনা করে আইএএস অফিসার হয় সাত্তু। তাই এখন সে আরতির চেয়ে বড় অফিসার। সাত্তু প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকে আবার ভালোওবাসে আরতিকে। এই সুযোগে আরতিকে বাগে পেয়ে যাচ্ছেতাই অপমান করে। মায়ের অসুস্থ হয়ে যাওয়া, পরিবারের অসম্মান এসবের জন্য যতভাবে অপমান করা লাগে তা আরতিকে করে। শারিরীক লাঞ্ছনাও করার ভয় দেখায় আরতিকে এবং মামলা থেকে বাঁচতে চাইলে তিন কোটি টাকা ঘুষ দাবী করে। আরতির পরিবার হাতেপায়ে ধরে মাফ চায় সাত্তুর কাছে। সাত্তু মাফ করে দেয়, আরতিকে খালাস করে দেয় ফাইনাল রিপোর্টে। এটা একটা টুইস্ট হিসেবে দেখানো হয়। পরবর্তীতে বোঝানো হয়, সাততুর রাগ ক্ষোভ থাকলেও সে আসলে আরতিকে ফাঁসিয়ে দিতো না, তাই অপমানের বদলা অপমান করেছে। যেহেতু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আরতিকে না ফাঁসিয়ে সত্য রিপোর্টই জুরি বোর্ডের কাছে দিয়েছে, তাই আরতি এবার আর সাততুকে ছাড়তে চায় না। বেহায়ার মতো লেগে থাকে। অবশেষে একটা সস্তা ড্রামা করে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। সিনেমা শেষ। ভালো না লেগে উপায় আছে?
এবার রুচি কিংবা আমাদের মনস্ততত্ত্ব নিয়ে যদি বলি, পুরো সময়টাতে আরতি সাততুকে আগের ভালোবাসার দাবী নিয়ে গেছে অফিসিয়াল তদন্তে ফেভার পাওয়ার জন্য। নিজের ইন্টেলিজেন্সি, নিজের সততার সাহস নিয়ে ফেস করতে দেখা যায় নি একবারের জন্যও। যে মেয়েটি বিয়ের রাতে পালিয়ে যায়, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের টপার, পিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয় তাঁকে দেখা যায় পার্টিতে যেয়ে তাঁর বস সাততুকে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখের পানি দেখিয়ে ফেভার পেতে। কি অদ্ভুত!
সেটার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো এইযে আঠেরো লক্ষ টাকা যৌতুক নিলো, পচিশ লাখ দাবী ছিলো। এই ব্যাপারে সাততুকে কিংবা তাঁর পরিবারকেও একটা কটু কথা শুনতে হলো না! এতটাই স্বাভাবিক এই ঘটনা! সমাজ ছিঃছিঃ করেছে বিয়ে করতে না পারার জন্য। সাততুর রাগ মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায়, গয়না বেঁচে টাকা পরিশোধে বাধ্য হওয়ায়। কোনো অনুশোচনা নেই এটা জেনে যে তাঁর পরিবার যৌতুকখোর।
দর্শক বাহ বাহ দিয়েছে যখন সাততু একের পর এক প্রতিশোধের চাল চেলেছে । যখন আরতির মজা করা ডায়লগ গুলোকে বিশ্রী ভাবে ফিরিয়ে দিয়ে টিজ করেছে, যখন আরতির ঘর অনুসন্ধানের নামে ভাঙচুর করেছে, যখন আরতিকে এক রাতের জন্য জেলে পুড়েছে, যখন আরতিকে কাঁদতে বাধ্য করেছে।
প্রথমেই বলেছি সিনেমা ভালো লাগতেই পারে কিন্তু এই কাহিনীতে যখন উষ্মাপ্রকাশ করা হয়না, এই কাহিনী যখন দর্শকের মনে দাগ না লাগে তখন আমাদের রুচি আমাদের চিন্তার স্তর নিয়ে ভাবতে হয়। যেখানে যৌতুক কোনো ব্যাপার না, একটা মেয়ের ইন্টেলিজেন্সি, অনেস্টির কোনো ছিটেফোটাও নেই উপরন্তু মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হয় চোখের পানি, প্রেমিকার দাবী!
আমি কয়েকজনের সাথে সরাসরি কথা বলেছি এই সিনেমা নিয়ে। আশ্চর্যজনক ভাবে কেউই এই পয়েন্ট খেয়ালই করে নি। তিনজন একমত হয়েছে খেয়াল করা উচিত ছিলো এবং সোশ্যাল ড্রামা জনরায় এরকম প্লটহোল থাকা উচিত নয়। কিন্তু একজন জানিয়েছে, সে সিনেমাটিকে খারাপ বললে কি লাভ? সিনেমাটা কি চেঞ্জ হবে? সমাজ চেঞ্জ হবে?
-না সিনেমা চেঞ্জ হবে না, কিন্তু এটা নিয়ে কথা বললে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন হবে এবং একটা সময় সিনেমার কাহিনীতেও পরিবর্তন আসবে।
সুখের কথা রোটেন টমেটোসে এই সিনেমার রেটিং ২২%। প্রফ্রশনাল ক্রিটিকরা এটা নিয়ে কনসার্ন। কিন্তু ম্যাস পিপলের মধ্যে এই সচেতনতা না আসলে এত কথা বলে কি লাভ ?
লেখা ঃ