- কৃষ্ণকুমারী
হুট করেই ঈদের আগেরদিন একটা পার্সেল আসলো কৃষ্ণকুমারী নামে। তাও যদি শুধু এ নাম থাকতো একটা কথা ছিলো, কিন্তু যেখানে বিপদের শুরু হয় সেখানে শেষ হওয়ার তো নামই নেবে না। কৃষ্ণকুমারী নাম এর নিচে ছোট করে লেখা - মিস নায়রা।
আজ আর রক্ষা নাই ভেবে মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো নায়রা । কারণ পার্সেলটা এখন তার ছোটবোন শাওমির হাতে।
---আপু তোর ফেইসবুক আইডির নাম কৃষ্ণকুমারী না? পার্সেলটা কে পাঠালো বলতো?
--- আমি কি জানি? হয়তো পরিচিত কোন দ্বীনি বোন।
--- এক্ষুণি তা প্রমাণ হয়ে যাবে। শাওমি পার্সেল টা জলদি খোল। জেলখানার জল্লাদের মতো আম্মু কোমরে দুইহাত দিয়ে দাঁড়ালেন।
এইরেহ্ আজ আমি গেছি! আল্লাহ্ জীবনে কোনদিন আর ফেইসবুক চালাবো না, আমাকে রক্ষা করো! নায়রা মনে মনে আল্লাহকে বলছে।
শাওমি পার্সেল খুলার পর বেরিয়ে আসলো একটা শাড়ি, একটা মেহেদি আর কিছু নায়রার পছন্দের বই।
বই দেখে অন্যসময় হলে নায়রা আনন্দে লাফ দিতো। কিন্তু এখন তার তেরো চৌদ্দটার সাথে বত্রিশটাও বাজছে এই অদ্ভুত, অজানা উপহার দেখে।
--- একটা চিঠিও পেয়েছি আম্মু। নায়রা দৌড় দিয়ে এসে চিঠিটা নিতে চাইলে তার মা তাকে সেখানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন।
--- শাওমি চিঠিটা জোরে জোরে পড়।
"কৃষ্ণকুমারী,
শুরুতেই সালাম। রমজান মাস নিশ্চয়ই আল্লাহর ইবাদাতে ভালোই কাটছে। তোমার তো কোন খবরই নেওয়ার সুযোগ নেই তাই আমিও আল্লাহর কাছে দোয়া করে করে কাটিয়ে দিচ্ছি সময়। আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহারগুলো গ্রহণ করিও। ঈদের পরে আল্লাহর রহমতে আমরা এক হবো ইনশাআল্লাহ।
'অচেনা একজন'
আজ আর রক্ষা নাই ভেবে মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো নায়রা । কারণ পার্সেলটা এখন তার ছোটবোন শাওমির হাতে।
---আপু তোর ফেইসবুক আইডির নাম কৃষ্ণকুমারী না? পার্সেলটা কে পাঠালো বলতো?
--- আমি কি জানি? হয়তো পরিচিত কোন দ্বীনি বোন।
--- এক্ষুণি তা প্রমাণ হয়ে যাবে। শাওমি পার্সেল টা জলদি খোল। জেলখানার জল্লাদের মতো আম্মু কোমরে দুইহাত দিয়ে দাঁড়ালেন।
এইরেহ্ আজ আমি গেছি! আল্লাহ্ জীবনে কোনদিন আর ফেইসবুক চালাবো না, আমাকে রক্ষা করো! নায়রা মনে মনে আল্লাহকে বলছে।
শাওমি পার্সেল খুলার পর বেরিয়ে আসলো একটা শাড়ি, একটা মেহেদি আর কিছু নায়রার পছন্দের বই।
বই দেখে অন্যসময় হলে নায়রা আনন্দে লাফ দিতো। কিন্তু এখন তার তেরো চৌদ্দটার সাথে বত্রিশটাও বাজছে এই অদ্ভুত, অজানা উপহার দেখে।
--- একটা চিঠিও পেয়েছি আম্মু। নায়রা দৌড় দিয়ে এসে চিঠিটা নিতে চাইলে তার মা তাকে সেখানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন।
--- শাওমি চিঠিটা জোরে জোরে পড়।
"কৃষ্ণকুমারী,
শুরুতেই সালাম। রমজান মাস নিশ্চয়ই আল্লাহর ইবাদাতে ভালোই কাটছে। তোমার তো কোন খবরই নেওয়ার সুযোগ নেই তাই আমিও আল্লাহর কাছে দোয়া করে করে কাটিয়ে দিচ্ছি সময়। আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহারগুলো গ্রহণ করিও। ঈদের পরে আল্লাহর রহমতে আমরা এক হবো ইনশাআল্লাহ।
'অচেনা একজন'
---বিশ্বাস করো আম্মু আমি একে চিনিনা। আমি ফেইসবুকে কাউকে ঠিকানা দেইনি, এমনকি আমি কোন ছেলের সাথে কথাও বলিনা।
--- ছিঃ ছিঃ আপু, এত ভালোমানুষি দেখিয়ে আমাকে ফেইসবুক চালাতে দাওনা আর আজ তুমি ফেইসবুকে এসব করে বেড়াও?
নায়রা বুঝলো শাওমি এতদিন ওকে শাসন করার প্রতিশোধ নিচ্ছে।
আম্মু গুরুগম্ভীর গলায় বললেন, এজন্য তো একটা বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হোসনি, হবে কিভাবে হারাম সম্পর্কে যে জড়িয়ে পড়েছিস। আজ তোর আব্বু আসুক বাড়িতে, তারপর তোকে দুইদিনের ভিতর বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ফেইসবুকে ইটিসপিটিস করিস লজ্জা করেনা?
--- ছিঃ ছিঃ আপু, এত ভালোমানুষি দেখিয়ে আমাকে ফেইসবুক চালাতে দাওনা আর আজ তুমি ফেইসবুকে এসব করে বেড়াও?
নায়রা বুঝলো শাওমি এতদিন ওকে শাসন করার প্রতিশোধ নিচ্ছে।
আম্মু গুরুগম্ভীর গলায় বললেন, এজন্য তো একটা বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হোসনি, হবে কিভাবে হারাম সম্পর্কে যে জড়িয়ে পড়েছিস। আজ তোর আব্বু আসুক বাড়িতে, তারপর তোকে দুইদিনের ভিতর বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ফেইসবুকে ইটিসপিটিস করিস লজ্জা করেনা?
এবার নায়রা কেঁদে ফেললো, -আম্মু আমি সত্যিই জানিনা কে পাঠিয়েছে। আমার ঠিকানা কোথায় পেলো, নিশ্চয়ই আমাদের পরিচিত কেউ আমাকে অপমান করার জন্য এমন করছে। এবার আম্মু একটু নরম হয়ে বললেন, রুমে গিয়ে চিন্তা করে বের কর সে কে। প্রয়োজনে তার কাছেই বিয়ে দেবো।
--- আম্মু, ওই বেটা বাঁদরের সাথে আমার বিয়ে মেনে নেবোনা। কোত্থেকে এসে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়েছে।
বলে নায়রা শাড়ি মেহেদি বাহিরে ছুঁড়ে ফেলে ঘটঘট শব্দ করে রুমে চলে গেলো।
নায়রা এ বছর স্নাতকোত্তর করে ঘরে বসে আছে। সে আসলেই দেখতে কালো, বলতে গেলে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ। তাই কোন ফর্সা ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়না। এই পর্যন্ত কত যে প্রস্তাব আসছে সবগুলা ভেঙে গেছে, হয় নায়রার রং এর জন্য নয়তো নায়রার পছন্দ হয়নি। তাকে নিয়ে আসলেই তার বাবা মা চিন্তিত। এদিকে শাওমি প্রতিদিন বলে, "আপু বিয়ে করে ফেলনা, আমারও বিয়ে যে তোর জন্য আঁটকে আছে।
--- লজ্জা করেনা এমন বলতে? আর কেউ কারও জন্য আঁটকে থাকেনা। সময় হলেই হবে নাহয় আমি আম্মুকে বলবো আগে যেন তোর বিয়ে দেন।
--- বললেই তো হয়না আপি। তুই বড় তোর আগে বিয়ে দিতে হবে। তারপর আমি! একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কথাটা বললো।
--- এত আগ্রহ?
---থাকবে না? বিয়ে প্রতিটা মেয়ের যে স্বপ্ন । তারা প্রতিনিয়ত সেটা লালন করে শুধু তুই ছাড়া।
---আচ্ছা আমি আম্মুকে তোর কথা বলবো।
একটু অবাক আর বিরক্ত হয়ে কথাটি বলেছিলো নায়রা। সেদিনই ও মনের দুঃখে আইডির নাম বদলে রেখে দেয় কৃষ্ণকুমারী।
ফেইসবুকে একটা মেয়ের সাথে তার চ্যাট হতো পরে দেখা গেলো মেয়েটি ছেলে। তাই রাগে নায়রা তাকে ব্লক করে দিলো। তারপর শুরু হলো নতুন সমস্যা। নতুন নতুন আইডি থেকে মেসেজ আসে প্রতিদিন।
-কেমন আছেন? কি করেন? ব্লক দিলেন কেন? ঠিকমতো নামাজ আদায় করছেন? আর কোন ছেলের সাথে চ্যাট করছেন না তো? দোয়া করি নিজেকে আল্লাহর জন্য, অচেনা কেউ একজনের জন্য হেফাজত রাখবেন এই ভার্চুয়াল জগত থেকে।
'আরে বেটা হেফাজত তোরটা রাখিস না কেন? মেয়েদের আইডি দেখলেই মেসেজ দিতে ইচ্ছে করে? তোর সাথে কথা বললে হেফাজত থাকলাম কিভাবে?'
রাগের চোটে নায়রা একটার পর একটা আইডি ব্লক করতেই আছে আর নতুন আইডি থেকে মেসেজ আসতেই আছে।
সে ভালো করে চেক করে দেখলো সবগুলা আইডি একজনেরই, একই নিয়মে, একই ঠিকানায় আইডি বানানো, শুধু নামগুলো আলাদা থাকে। অবশ্য ছেলেটা ভালো মেসেজ করে, ইসলামিক বিভিন্ন শিক্ষনীয় বিষয়, হাদিস, তাফসির দেয় যেগুলো নায়রার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়। তবুও তো ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে ব্লক ছাড়া উপায় নাই।
--- আপু দেখ না শাড়িটা কত্ত সুন্দর, আমাকে কেউ দিলে এক্ষুণি পরে ফেলতাম। আর হাতটা মেহেদিরাঙা করে রাখিস বলা যায়না কখন সে রাজকুমার চলে আসে।
এইবার সুযোগ পেয়ে নায়রা লাফ দিয়ে উঠে শাওমির চুলের মুষ্টি ধরলো।
--- আমি যে খারাপ সেটা কল্পনাও করিসনি না? দেখেছিস কখনও কারও সাথে ইটিসপিটিস করতে? আম্মুর সামনে এসব বললি কেন?
---আহ! ছাড়োনা লাগছে তো। আমি তো ইটিসপিটিস বলিনি। আর আমার আপু কেমন জানি বলেই তো এসব বলছি। যাতে আম্মু রেগে গিয়ে জোর করে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
--- তোর এত বিয়ের তাড়া যখন তখন আজই আব্বুকে বলে তোরই বিয়ের ব্যবস্থা করছি দাঁড়া। কি লজ্জাহীন মেয়েরে বাবাহ!
--- আপু একটা কথা বলবে? তুমি কি লাসবি...!?
--- তবে রে বাঁদরনী আজ তোর একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে। বলে নায়রা টেবিল থেকে স্কেল নিতে গেলে শাওমি হাসতে হাসতে 'আম্মু' বলে দৌড় দিলো।
নায়রা সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পাগলী বলে শাড়িটা হাতে নিলো।
অনেক সুন্দর শাড়ী, সাথে ম্যাচ করা ফুলহাতা ব্লাউজ, ছায়া। কে দিলো এমন? পুরোপুরি তার পছন্দের সাথে মিলে যায়? বইগুলোও নাড়াচাড়া করে চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো। একবার নয় তিন চার বার পড়ার পর মন খারাপ করে বসে থাকলো। আসলে কি কেউ একজন আমাকে পছন্দ করে এসব দিয়েছে? কেউ কি এই কালো আমাকে সত্যি ভালোবাসবে? আমার মনের মতো কি কেউ আসবে কখনও?
কেন যেন তার মনে হয় তার বাবার সুনাম, সম্পত্তি আর তার যোগ্যতা দেখে সবাই বিয়ে করতে চায়। কেউ তার গায়ের রঙকে ভালোবেসে রাজি হয়না। তারপর মনের মতো কেউ এখনও আসলোই না। তবুও আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে সে বসে আছে। আর মাঝরাতে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যায়। দীর্ঘ মুনাজাতে বলে উঠে, "ইয়া আল্লাহ! তুমি তো দেখছো আমি আমার নিজেকে সব ধরণের পঙ্কিলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। কোন এক প্রান্তে যদি আমার জন্য তেমন কেউ থেকে থাকে তাকেও এমন করে হেফাজত করিও। তার সাথে অতি তাড়াতাড়ি আমায় মিলিয়ে দিও মাবুদ।"
রাতের বেলা দরজা আঁটকে দিয়ে সে শাড়ি টা পরলো মনের মতো করে সাজলো।
"নাহ্ তেমন একটা খারাপ তো লাগছে না!" কিন্তু আমি এই শাড়ি কেন পরছি? আমি তো জানিনা এটা কে দিয়েছে? চিন্তার বিষয় আমার ঠিকানা জানলো কি করে?
সে তাড়াতাড়ি ফেইসবুকে ঢুকে তার এবাউট চেক করে দেখলো আইডিটা প্রথম যখন তার বান্ধবী খুলে দিয়েছিলো তখন তার মূল ঠিকানা দিয়ে রেখেছে। নাম বদলালেও পরবর্তীতে তা আর বদলানো হয়নি।
"খাইছে! এই জন্যই তো এমন বিপদে পড়তে হয়েছে।' সে একটু আধটু লেখালেখি করে কিন্তু তার আইডিতে সব মেয়েরা আছে। তবে কি ফেইক আইডি দিয়ে কেউ তার সাথে কথা বলে?
এমন সময় বাজখাঁই গলায় আব্বু ডাক ছাড়লেন, 'নায়রা এদিকে আসো।'
-- জ্বি আব্বু আসছি। তাড়াতাড়ি কাপড় বদলে বাবার সামনে গেলো। দেখলো সবাই তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
--- কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেন তোমরা?
--- তোকে তো সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছেরে নায়রা।
হুট করে মনে পড়লো সে সাজগোজ অবস্থায় বাহিরে চলে এসেছে। সবাই অবাক হয়েছে কারণ এর আগে কখনও নায়রা সাজেনি। মনে মনে নিজেকে একশো একটা লাথি মারলো, "ইশ্ এখন আরও সন্দেহ করবে, আর পুঁচকে ইঁদুরটা তে ছাড়বেইনা। " আড়চোখে শাওমির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মিটিমিটি হাসছে।
--- তুমি কি সত্যি জানোনা কে এই পার্সেল পাঠিয়েছে?
--- না আব্বু আমি জানিনা।
--- ফেইসবুকে কৃষ্ণকুমারী নাম দিয়েছো কেন? আমরা কখনও কি তোমাকে কালো বলেছি? ইনফ্যাক্ট শাওমির চাইতে আমরা তোমাকেই বেশি ভালোবাসি, গুরুত্ব দেই।
--- ইয়ে মানে..
--- ফেইসবুকে গিয়ে কেন জানানো দরকার তুমি কালো?
--- আ-আমি এসব কিছু বলিনি আব্বু। আর ফেইসবুকে ততবেশি থাকিও না।
--- কেন শাওমি বললো তুই দিনরাত ফেইসবুকে পড়ে থাকিস। তাইতো বলি পানি এতদূর গড়ালেও আগে কেন টের পাইনি। এই জন্য বুঝি বিয়েতে রাজি হতি না।
আম্মু রেগেমেগে কথাগুলো বললেন।
নায়রা শাওমির দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো, সব মিথ্যা বলেছে এই ইঁদুরটা, ও বিয়ের জন্য পাগল হয়ে আছে। প্রতিদিন আমার কাছে ঘ্যানঘ্যান করে, ওকে বিয়ে দিয়ে দাও।
--- ওকে ইঁদুর ডাকছো কেন? ঘ্যানঘ্যান করবেই তো, ও নিজের ভবিষ্যৎ বুঝে। মেঘে মেঘে বেলা তো আর কম হলো না। আমাদেরও চিন্তা হয় তোমাদের নিয়ে। শুনো যেটা বলার জন্য ডেকেছি, ঈদের পরে প্রথম যে প্রস্তাব আসবে সেটাতেই আমরা চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে যাবো মনে থাকে যেন।
--- আব্বু ছেলেটা যদি খারাপ হয়? নামাজ পড়েনা, দাড়ি থাকেনা, নেশা করে? তাহলেও কি বিয়ে দিয়ে দিবে?
--- এরকম প্রস্তাব কি এখনও তোমার জন্য এনেছি? না সাপোর্ট দিয়েছি? বুঝেশুনেই প্রস্তাব রাখবো। এখন রুমে যাও।
নায়রা রুমে এসে যেন হাঁফ ছাড়লো, " যাক আপাতত বাঁচলাম!"
কিন্তু সেই ছেলেটা যদি ঈদের পরে না আসে? তাহলে তো জানা হবেনা কে সে। "ইশ্ বেটার কিছু টাকা গচ্চা গেলো, মাঝখানে আমিও ঋনী হয়ে গেলাম। আচ্ছা আমি তার কথা ভাবছি কেন? সে সবকিছু বাদ দিয়ে তিলাওয়াতে মনোযোগ দিলো।
--- আম্মু, ওই বেটা বাঁদরের সাথে আমার বিয়ে মেনে নেবোনা। কোত্থেকে এসে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়েছে।
বলে নায়রা শাড়ি মেহেদি বাহিরে ছুঁড়ে ফেলে ঘটঘট শব্দ করে রুমে চলে গেলো।
নায়রা এ বছর স্নাতকোত্তর করে ঘরে বসে আছে। সে আসলেই দেখতে কালো, বলতে গেলে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ। তাই কোন ফর্সা ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়না। এই পর্যন্ত কত যে প্রস্তাব আসছে সবগুলা ভেঙে গেছে, হয় নায়রার রং এর জন্য নয়তো নায়রার পছন্দ হয়নি। তাকে নিয়ে আসলেই তার বাবা মা চিন্তিত। এদিকে শাওমি প্রতিদিন বলে, "আপু বিয়ে করে ফেলনা, আমারও বিয়ে যে তোর জন্য আঁটকে আছে।
--- লজ্জা করেনা এমন বলতে? আর কেউ কারও জন্য আঁটকে থাকেনা। সময় হলেই হবে নাহয় আমি আম্মুকে বলবো আগে যেন তোর বিয়ে দেন।
--- বললেই তো হয়না আপি। তুই বড় তোর আগে বিয়ে দিতে হবে। তারপর আমি! একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কথাটা বললো।
--- এত আগ্রহ?
---থাকবে না? বিয়ে প্রতিটা মেয়ের যে স্বপ্ন । তারা প্রতিনিয়ত সেটা লালন করে শুধু তুই ছাড়া।
---আচ্ছা আমি আম্মুকে তোর কথা বলবো।
একটু অবাক আর বিরক্ত হয়ে কথাটি বলেছিলো নায়রা। সেদিনই ও মনের দুঃখে আইডির নাম বদলে রেখে দেয় কৃষ্ণকুমারী।
ফেইসবুকে একটা মেয়ের সাথে তার চ্যাট হতো পরে দেখা গেলো মেয়েটি ছেলে। তাই রাগে নায়রা তাকে ব্লক করে দিলো। তারপর শুরু হলো নতুন সমস্যা। নতুন নতুন আইডি থেকে মেসেজ আসে প্রতিদিন।
-কেমন আছেন? কি করেন? ব্লক দিলেন কেন? ঠিকমতো নামাজ আদায় করছেন? আর কোন ছেলের সাথে চ্যাট করছেন না তো? দোয়া করি নিজেকে আল্লাহর জন্য, অচেনা কেউ একজনের জন্য হেফাজত রাখবেন এই ভার্চুয়াল জগত থেকে।
'আরে বেটা হেফাজত তোরটা রাখিস না কেন? মেয়েদের আইডি দেখলেই মেসেজ দিতে ইচ্ছে করে? তোর সাথে কথা বললে হেফাজত থাকলাম কিভাবে?'
রাগের চোটে নায়রা একটার পর একটা আইডি ব্লক করতেই আছে আর নতুন আইডি থেকে মেসেজ আসতেই আছে।
সে ভালো করে চেক করে দেখলো সবগুলা আইডি একজনেরই, একই নিয়মে, একই ঠিকানায় আইডি বানানো, শুধু নামগুলো আলাদা থাকে। অবশ্য ছেলেটা ভালো মেসেজ করে, ইসলামিক বিভিন্ন শিক্ষনীয় বিষয়, হাদিস, তাফসির দেয় যেগুলো নায়রার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়। তবুও তো ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে ব্লক ছাড়া উপায় নাই।
--- আপু দেখ না শাড়িটা কত্ত সুন্দর, আমাকে কেউ দিলে এক্ষুণি পরে ফেলতাম। আর হাতটা মেহেদিরাঙা করে রাখিস বলা যায়না কখন সে রাজকুমার চলে আসে।
এইবার সুযোগ পেয়ে নায়রা লাফ দিয়ে উঠে শাওমির চুলের মুষ্টি ধরলো।
--- আমি যে খারাপ সেটা কল্পনাও করিসনি না? দেখেছিস কখনও কারও সাথে ইটিসপিটিস করতে? আম্মুর সামনে এসব বললি কেন?
---আহ! ছাড়োনা লাগছে তো। আমি তো ইটিসপিটিস বলিনি। আর আমার আপু কেমন জানি বলেই তো এসব বলছি। যাতে আম্মু রেগে গিয়ে জোর করে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
--- তোর এত বিয়ের তাড়া যখন তখন আজই আব্বুকে বলে তোরই বিয়ের ব্যবস্থা করছি দাঁড়া। কি লজ্জাহীন মেয়েরে বাবাহ!
--- আপু একটা কথা বলবে? তুমি কি লাসবি...!?
--- তবে রে বাঁদরনী আজ তোর একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে। বলে নায়রা টেবিল থেকে স্কেল নিতে গেলে শাওমি হাসতে হাসতে 'আম্মু' বলে দৌড় দিলো।
নায়রা সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পাগলী বলে শাড়িটা হাতে নিলো।
অনেক সুন্দর শাড়ী, সাথে ম্যাচ করা ফুলহাতা ব্লাউজ, ছায়া। কে দিলো এমন? পুরোপুরি তার পছন্দের সাথে মিলে যায়? বইগুলোও নাড়াচাড়া করে চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো। একবার নয় তিন চার বার পড়ার পর মন খারাপ করে বসে থাকলো। আসলে কি কেউ একজন আমাকে পছন্দ করে এসব দিয়েছে? কেউ কি এই কালো আমাকে সত্যি ভালোবাসবে? আমার মনের মতো কি কেউ আসবে কখনও?
কেন যেন তার মনে হয় তার বাবার সুনাম, সম্পত্তি আর তার যোগ্যতা দেখে সবাই বিয়ে করতে চায়। কেউ তার গায়ের রঙকে ভালোবেসে রাজি হয়না। তারপর মনের মতো কেউ এখনও আসলোই না। তবুও আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে সে বসে আছে। আর মাঝরাতে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যায়। দীর্ঘ মুনাজাতে বলে উঠে, "ইয়া আল্লাহ! তুমি তো দেখছো আমি আমার নিজেকে সব ধরণের পঙ্কিলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। কোন এক প্রান্তে যদি আমার জন্য তেমন কেউ থেকে থাকে তাকেও এমন করে হেফাজত করিও। তার সাথে অতি তাড়াতাড়ি আমায় মিলিয়ে দিও মাবুদ।"
রাতের বেলা দরজা আঁটকে দিয়ে সে শাড়ি টা পরলো মনের মতো করে সাজলো।
"নাহ্ তেমন একটা খারাপ তো লাগছে না!" কিন্তু আমি এই শাড়ি কেন পরছি? আমি তো জানিনা এটা কে দিয়েছে? চিন্তার বিষয় আমার ঠিকানা জানলো কি করে?
সে তাড়াতাড়ি ফেইসবুকে ঢুকে তার এবাউট চেক করে দেখলো আইডিটা প্রথম যখন তার বান্ধবী খুলে দিয়েছিলো তখন তার মূল ঠিকানা দিয়ে রেখেছে। নাম বদলালেও পরবর্তীতে তা আর বদলানো হয়নি।
"খাইছে! এই জন্যই তো এমন বিপদে পড়তে হয়েছে।' সে একটু আধটু লেখালেখি করে কিন্তু তার আইডিতে সব মেয়েরা আছে। তবে কি ফেইক আইডি দিয়ে কেউ তার সাথে কথা বলে?
এমন সময় বাজখাঁই গলায় আব্বু ডাক ছাড়লেন, 'নায়রা এদিকে আসো।'
-- জ্বি আব্বু আসছি। তাড়াতাড়ি কাপড় বদলে বাবার সামনে গেলো। দেখলো সবাই তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
--- কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেন তোমরা?
--- তোকে তো সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছেরে নায়রা।
হুট করে মনে পড়লো সে সাজগোজ অবস্থায় বাহিরে চলে এসেছে। সবাই অবাক হয়েছে কারণ এর আগে কখনও নায়রা সাজেনি। মনে মনে নিজেকে একশো একটা লাথি মারলো, "ইশ্ এখন আরও সন্দেহ করবে, আর পুঁচকে ইঁদুরটা তে ছাড়বেইনা। " আড়চোখে শাওমির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মিটিমিটি হাসছে।
--- তুমি কি সত্যি জানোনা কে এই পার্সেল পাঠিয়েছে?
--- না আব্বু আমি জানিনা।
--- ফেইসবুকে কৃষ্ণকুমারী নাম দিয়েছো কেন? আমরা কখনও কি তোমাকে কালো বলেছি? ইনফ্যাক্ট শাওমির চাইতে আমরা তোমাকেই বেশি ভালোবাসি, গুরুত্ব দেই।
--- ইয়ে মানে..
--- ফেইসবুকে গিয়ে কেন জানানো দরকার তুমি কালো?
--- আ-আমি এসব কিছু বলিনি আব্বু। আর ফেইসবুকে ততবেশি থাকিও না।
--- কেন শাওমি বললো তুই দিনরাত ফেইসবুকে পড়ে থাকিস। তাইতো বলি পানি এতদূর গড়ালেও আগে কেন টের পাইনি। এই জন্য বুঝি বিয়েতে রাজি হতি না।
আম্মু রেগেমেগে কথাগুলো বললেন।
নায়রা শাওমির দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো, সব মিথ্যা বলেছে এই ইঁদুরটা, ও বিয়ের জন্য পাগল হয়ে আছে। প্রতিদিন আমার কাছে ঘ্যানঘ্যান করে, ওকে বিয়ে দিয়ে দাও।
--- ওকে ইঁদুর ডাকছো কেন? ঘ্যানঘ্যান করবেই তো, ও নিজের ভবিষ্যৎ বুঝে। মেঘে মেঘে বেলা তো আর কম হলো না। আমাদেরও চিন্তা হয় তোমাদের নিয়ে। শুনো যেটা বলার জন্য ডেকেছি, ঈদের পরে প্রথম যে প্রস্তাব আসবে সেটাতেই আমরা চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে যাবো মনে থাকে যেন।
--- আব্বু ছেলেটা যদি খারাপ হয়? নামাজ পড়েনা, দাড়ি থাকেনা, নেশা করে? তাহলেও কি বিয়ে দিয়ে দিবে?
--- এরকম প্রস্তাব কি এখনও তোমার জন্য এনেছি? না সাপোর্ট দিয়েছি? বুঝেশুনেই প্রস্তাব রাখবো। এখন রুমে যাও।
নায়রা রুমে এসে যেন হাঁফ ছাড়লো, " যাক আপাতত বাঁচলাম!"
কিন্তু সেই ছেলেটা যদি ঈদের পরে না আসে? তাহলে তো জানা হবেনা কে সে। "ইশ্ বেটার কিছু টাকা গচ্চা গেলো, মাঝখানে আমিও ঋনী হয়ে গেলাম। আচ্ছা আমি তার কথা ভাবছি কেন? সে সবকিছু বাদ দিয়ে তিলাওয়াতে মনোযোগ দিলো।
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ঈদ পার হয়ে গেলো। নায়রা শাড়ীও পরেনি, মেহেদি ও না। ওর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন বিয়েতেই প্রথম হাত মেহেদিরাঙা করবে। কিন্তু শাওমি ইচ্ছামতো হাতে মেহেদি রাঙালো।
ঈদের দুইদিন পর..
--- আপু তোর মতো কালো একটা বর এসেছে, খুব ভালো ধার্মিক। আব্বু ওদের আচরণে খুব খুশি, কথা পাকাপোক্ত হচ্ছে।
আজ নায়রাকে একপক্ষ দেখতে আসবে জেনে নায়রা সকালবেলা টিফিনভর্তি খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকেছে যাতে আজ আর বের হতে নাহয়। শাওমির কথায়
মন খারাপ হলেও তার আব্বু তার কথা রেখেছেন তাই আর কিছু বললো না।
--- কি হলো আপু? তাড়াতাড়ি দরজা খোল।
---কেন আবার কি হলো?
--- আরে খোল না তারপর বলছি।
নায়রা দরজা খুলে দিলে শাওমি বললো,
--- আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে বর সেই ছেলেটা না তো?
--- আমি কি করে জানবো কোন ছেলে?
--- না মানে যে শাড়ি পাঠিয়েছিল সে। অনেকদূর থেকে ওরা আসছে তো। আমার মনে হয় আজই বিয়ে করিয়ে নিতে চায়, ওরা একসাথে পনেরো জন মানুষ আসছে।
--- তো? মানুষ বেশি আসলে সেদিনই বিয়ে হবে এমন কথা আছে নাকি?
--- নাহ্ তবে আব্বু বড়চাচ্চু, ফুপি, মামা সবাইকে আসার খবর পাঠিয়েছেন।
আজ নায়রাকে একপক্ষ দেখতে আসবে জেনে নায়রা সকালবেলা টিফিনভর্তি খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকেছে যাতে আজ আর বের হতে নাহয়। শাওমির কথায়
মন খারাপ হলেও তার আব্বু তার কথা রেখেছেন তাই আর কিছু বললো না।
--- কি হলো আপু? তাড়াতাড়ি দরজা খোল।
---কেন আবার কি হলো?
--- আরে খোল না তারপর বলছি।
নায়রা দরজা খুলে দিলে শাওমি বললো,
--- আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে বর সেই ছেলেটা না তো?
--- আমি কি করে জানবো কোন ছেলে?
--- না মানে যে শাড়ি পাঠিয়েছিল সে। অনেকদূর থেকে ওরা আসছে তো। আমার মনে হয় আজই বিয়ে করিয়ে নিতে চায়, ওরা একসাথে পনেরো জন মানুষ আসছে।
--- তো? মানুষ বেশি আসলে সেদিনই বিয়ে হবে এমন কথা আছে নাকি?
--- নাহ্ তবে আব্বু বড়চাচ্চু, ফুপি, মামা সবাইকে আসার খবর পাঠিয়েছেন।
---এখনও রেডি করিসনি ওকে? সময় তো বেশি নেই। এইনে ওদের শাড়ি গহনা পরিয়ে সাজিয়ে দে।
আম্মুর হাত থেকে শাড়ি নিয়ে শাওমি নায়রা দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
--- কি হলো ভুত দেখেছিস নাকি? তোর পছন্দ মতো বরই আমরা দেখেছি। তোকে আর দেখতে হবেনা।
--- আম্মু তুমি যাও তো। আমি দশমিনিটে আপুকে রেডি করছি।
নায়রা শাওমিকে বললো,
মনে আছে শাওমি? এরকম একটা বিয়ের শাড়ী আমি ফেইসবুকে শেয়ার করেছিলাম।
---বুঝতে তো পারছিনা আপু এসব কি হচ্ছে।
নায়রা শাড়িটা পরে হালকা সাজলো। কালোর মধ্যে আবার সাজার কি দরকার? সাজ কি চোখে পড়বে? অনিচ্ছা সত্বেও সব মহিলাদের সামনে গিয়ে বসলো। আর অপরিচিত একজন মহিলা পরম আদরে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললেন, "মাশাআল্লাহ! কালোও যে এত সুন্দর হয় আজ প্রথম দেখলাম!"
নায়রা মনে মনে ভাবলো, হয় মহিলা পাগল হয়ে গেছেন নয়তো তাকে খুশি করার জন্য এসব বলছেন। পুরুষেরা হলরুমে বসে কথা বলছে, ইতোমধ্যে কাজী সাহেবও এসে পড়েছেন। বিকালের আগেই বিয়েটা হয়ে গেলো। কিভাবে কি হলো নায়রা যেন বুঝতেই পারলো না, এতদ্রুত সব হয়ে গেলো। এখন সে গাড়িতে বরের সাথে বসে আছে। একবারও বরের দিকে তাকায়নি। কালো মানুষকে আর কি দেখবে!
--- এত কাঁদলে সর্দি হয়ে যাবে। আর আমারও খারাপ লাগছে। কান্না বন্ধ করো নাহয় আমিও কেঁদে ফেলবো। বর নায়রার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে কথাগুলো বললো।
"বলে কি লোকটা আমি সব ছেড়ে চলে যাচ্ছি অচেনা একজনের সাথে, সেখানে আব্বু, আম্মু, শাওমি কেউ থাকবে না। দুঃখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আর আমি নাকি কাঁদবো না। আর কাঁদলে সর্দি হবে বেটার এটা নিয়ে সমস্যা।" রাগে ও আরও জোরে কান্না শুরু করলো এতে বর শান্তনার জন্য ওর হাত ধরতে চাইলে জোরে একটা চিমটি বসিয়ে দিলো।
--- আঁউ..! বাব্বাহ্! বউ নাকি চিমটি রানী?
--- বেশি কথা বললে আরেকটা দেবো। আমাকে তুমি করে কথা বলছেন কেন? অভদ্র কোথাকার!
নায়রাও ফিসফিস করে কথাগুলো বললো।
--- দস্যুরানীর সাথে কথা বলার আমার দরকার নাই। বরও অন্যদিকে মুখ করে বসে থাকলো। দীর্ঘসময়ের রাস্তায় নায়রা গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়লো। আর বর পরম যত্নে তার মাথাটি বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। গাড়ি থামার পরও নায়রার ঘুম ভাঙলো না দেখে ওর বর ওকে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়ে আসলো।
অনেক্ক্ষণ পর কোনকিছুর শব্দে নায়রার ঘুম ভেঙে গেলে দেখলো একটা রুমে বিছানায় শুয়ে আছে সে। এই রুমের সম্পুর্ন ডেকোরেশন তার পছন্দ মতো করা। কিছুক্ষণ বসে নিজেকে আত্মস্থ করে নামতে যাবে তখন দেখলো বাথরুম থেকে খালিগায়ে একজন সুন্দর সুঠাম পুরুষ বের হয়ে আসছে
--- কে কোথায় আছো বাঁচাও, ভুত! ভুত! না না ভুত না ডাকাত ঘরে ঢুকেছে। বলে ও দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে চাইলে মানুষটি তাকে গিয়ে ধরে ফেললো।
--- আরে আরে করো কি? আমি আবরার, তোমার বর।
--- এ হতে পারেনা। আমার বর কালো আপনি কে? আমাকে ধরার সাহস পেলেন কোথায়? নায়রা আরও জোরে চিৎকার শুরু করলো।
--- আরে বাবা কালো মেক-আপ করে গিয়েছিলাম। গায়ে চুলকানো শুরু করেছে তাই গোসল করে আসলাম।
তখন বাহিরেও দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেছে। নায়রা ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দরজা খুলে সেই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
--ঘরে ডাকাত ঢুকেছে। আপনারা আমাকে বাঁচান।
ওর কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।
--- বউমা ডাকাত নয় ও আবরার, তোমার বর। তুমি রাজি হবেনা দেখে এই প্ল্যান করেছিলো সে।
আম্মুর হাত থেকে শাড়ি নিয়ে শাওমি নায়রা দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
--- কি হলো ভুত দেখেছিস নাকি? তোর পছন্দ মতো বরই আমরা দেখেছি। তোকে আর দেখতে হবেনা।
--- আম্মু তুমি যাও তো। আমি দশমিনিটে আপুকে রেডি করছি।
নায়রা শাওমিকে বললো,
মনে আছে শাওমি? এরকম একটা বিয়ের শাড়ী আমি ফেইসবুকে শেয়ার করেছিলাম।
---বুঝতে তো পারছিনা আপু এসব কি হচ্ছে।
নায়রা শাড়িটা পরে হালকা সাজলো। কালোর মধ্যে আবার সাজার কি দরকার? সাজ কি চোখে পড়বে? অনিচ্ছা সত্বেও সব মহিলাদের সামনে গিয়ে বসলো। আর অপরিচিত একজন মহিলা পরম আদরে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললেন, "মাশাআল্লাহ! কালোও যে এত সুন্দর হয় আজ প্রথম দেখলাম!"
নায়রা মনে মনে ভাবলো, হয় মহিলা পাগল হয়ে গেছেন নয়তো তাকে খুশি করার জন্য এসব বলছেন। পুরুষেরা হলরুমে বসে কথা বলছে, ইতোমধ্যে কাজী সাহেবও এসে পড়েছেন। বিকালের আগেই বিয়েটা হয়ে গেলো। কিভাবে কি হলো নায়রা যেন বুঝতেই পারলো না, এতদ্রুত সব হয়ে গেলো। এখন সে গাড়িতে বরের সাথে বসে আছে। একবারও বরের দিকে তাকায়নি। কালো মানুষকে আর কি দেখবে!
--- এত কাঁদলে সর্দি হয়ে যাবে। আর আমারও খারাপ লাগছে। কান্না বন্ধ করো নাহয় আমিও কেঁদে ফেলবো। বর নায়রার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে কথাগুলো বললো।
"বলে কি লোকটা আমি সব ছেড়ে চলে যাচ্ছি অচেনা একজনের সাথে, সেখানে আব্বু, আম্মু, শাওমি কেউ থাকবে না। দুঃখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আর আমি নাকি কাঁদবো না। আর কাঁদলে সর্দি হবে বেটার এটা নিয়ে সমস্যা।" রাগে ও আরও জোরে কান্না শুরু করলো এতে বর শান্তনার জন্য ওর হাত ধরতে চাইলে জোরে একটা চিমটি বসিয়ে দিলো।
--- আঁউ..! বাব্বাহ্! বউ নাকি চিমটি রানী?
--- বেশি কথা বললে আরেকটা দেবো। আমাকে তুমি করে কথা বলছেন কেন? অভদ্র কোথাকার!
নায়রাও ফিসফিস করে কথাগুলো বললো।
--- দস্যুরানীর সাথে কথা বলার আমার দরকার নাই। বরও অন্যদিকে মুখ করে বসে থাকলো। দীর্ঘসময়ের রাস্তায় নায়রা গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়লো। আর বর পরম যত্নে তার মাথাটি বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। গাড়ি থামার পরও নায়রার ঘুম ভাঙলো না দেখে ওর বর ওকে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়ে আসলো।
অনেক্ক্ষণ পর কোনকিছুর শব্দে নায়রার ঘুম ভেঙে গেলে দেখলো একটা রুমে বিছানায় শুয়ে আছে সে। এই রুমের সম্পুর্ন ডেকোরেশন তার পছন্দ মতো করা। কিছুক্ষণ বসে নিজেকে আত্মস্থ করে নামতে যাবে তখন দেখলো বাথরুম থেকে খালিগায়ে একজন সুন্দর সুঠাম পুরুষ বের হয়ে আসছে
--- কে কোথায় আছো বাঁচাও, ভুত! ভুত! না না ভুত না ডাকাত ঘরে ঢুকেছে। বলে ও দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে চাইলে মানুষটি তাকে গিয়ে ধরে ফেললো।
--- আরে আরে করো কি? আমি আবরার, তোমার বর।
--- এ হতে পারেনা। আমার বর কালো আপনি কে? আমাকে ধরার সাহস পেলেন কোথায়? নায়রা আরও জোরে চিৎকার শুরু করলো।
--- আরে বাবা কালো মেক-আপ করে গিয়েছিলাম। গায়ে চুলকানো শুরু করেছে তাই গোসল করে আসলাম।
তখন বাহিরেও দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেছে। নায়রা ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দরজা খুলে সেই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
--ঘরে ডাকাত ঢুকেছে। আপনারা আমাকে বাঁচান।
ওর কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।
--- বউমা ডাকাত নয় ও আবরার, তোমার বর। তুমি রাজি হবেনা দেখে এই প্ল্যান করেছিলো সে।
রাতে..
--- মেহেদি পরলে না কেন? শাড়িটা কি তোমার পছন্দ হয়নি। ঈদের দিন পরলে না যে?
--- আপনি কে বলুন তো? শাড়ী মেহেদি কি আপনি পাঠিয়েছিলেন? আমি শাড়ি পরিনি আপনি জানলেন কিভাবে?
--- হ্যা আমি পাঠিয়েছিলাম। মনে হলো যাকে বিয়ে করবো ঈদে তাকে তো কিছু গিফট পাঠাতেই পারি।
--- এতবড় সাহস কোত্থেকে হলো আপনার? জানেন আমি কতবড় বিপদে পড়েছিলাম। এটা নাহলে আরও কিছুদিন বাবার বাড়িতে থাকতে পারতাম।
--- সে সুযোগ হয়তো দিতাম। কিন্তু তুমি যে হারে আমাকে ব্লক করা শুরু করেছিলে। তখন বাধ্য হয়েই তাড়াতাড়ি বিয়েটা করতে হলো।
--- প্রেম করতে চাইছিলেন?
---কি বলো এসব? আমি তোমার সাথে প্রেম করতে চাইনি তোমার সম্পর্কে জানতে নক করেছিলাম। কষ্ট হলেও অন্যভাবে জানতে হলো আরকি। আর ফেইসবুকে ফেইক আইডি দিয়ে তোমার পছন্দ অপছন্দ চেক করতাম যাতে পরবর্তীতে কাজে লাগে।
--মানে আপনি শুরু থেকেই এসব প্ল্যান করে রাখছেন? আমি যে কালো এটা জানতেন?
---প্রথমে জানতাম না। একদিন তোমার সাথে রাস্তায় দেখা হলে তোমার হাত দেখে জেনেছি। তুমি হাতমুজা পরোনা কেন? তারপর ঈদের দিন একবার তোমায় জানালায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।
ভালো করে খেয়াল করে নায়রার মনে পড়লো একদিন এই মানুষটাই তাকে কার বাড়ির কথা জানি জিজ্ঞেস করেছিলো।
---আপনি আমার বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছেন?
--- ভালোবাসার মানুষের জন্য অনেককিছুই করতে হয়। এইযে আজ কালো সাজলাম। একটু আগে ডাকাত ও হয়ে গেলাম।
--- আপনি মিথ্যা বলে আমায় বিয়ে করেছেন, আব্বু মিথ্যা আর ধোঁকাবাজি ঘৃণা করেন তিনি তা মেনে নেবেন না।
---উনারা সব জানেন। এমনকি ফেইসবুক, গিফটের কথাও জানেন।
---সেজন্যই শাওমি আমাকে এমন পঁচান পঁচিয়েছে। রাগে নায়রা ভেঁউভেঁউ করে কেঁদে দিলো।
--- এই কৃষ্ণকুমারীকে আমি আজকের পর থেকে কখনও কাঁদতে দেবো না। কথাগুলো বলে আবরার তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে নায়রা তাকে সমানে কিল ঘুসি মারতে থাকলো। একসময় ক্লান্ত হয়ে আবরারের বুকেই হেলিয়ে পড়লো। আর আবরার হাসতে হাসতে গভীর ভালোবাসায় তাকে ধরে রেখে বললো, "তোমায় অনেক ভালোবাসি, আমার কৃষ্ণকুমারী!
--- মেহেদি পরলে না কেন? শাড়িটা কি তোমার পছন্দ হয়নি। ঈদের দিন পরলে না যে?
--- আপনি কে বলুন তো? শাড়ী মেহেদি কি আপনি পাঠিয়েছিলেন? আমি শাড়ি পরিনি আপনি জানলেন কিভাবে?
--- হ্যা আমি পাঠিয়েছিলাম। মনে হলো যাকে বিয়ে করবো ঈদে তাকে তো কিছু গিফট পাঠাতেই পারি।
--- এতবড় সাহস কোত্থেকে হলো আপনার? জানেন আমি কতবড় বিপদে পড়েছিলাম। এটা নাহলে আরও কিছুদিন বাবার বাড়িতে থাকতে পারতাম।
--- সে সুযোগ হয়তো দিতাম। কিন্তু তুমি যে হারে আমাকে ব্লক করা শুরু করেছিলে। তখন বাধ্য হয়েই তাড়াতাড়ি বিয়েটা করতে হলো।
--- প্রেম করতে চাইছিলেন?
---কি বলো এসব? আমি তোমার সাথে প্রেম করতে চাইনি তোমার সম্পর্কে জানতে নক করেছিলাম। কষ্ট হলেও অন্যভাবে জানতে হলো আরকি। আর ফেইসবুকে ফেইক আইডি দিয়ে তোমার পছন্দ অপছন্দ চেক করতাম যাতে পরবর্তীতে কাজে লাগে।
--মানে আপনি শুরু থেকেই এসব প্ল্যান করে রাখছেন? আমি যে কালো এটা জানতেন?
---প্রথমে জানতাম না। একদিন তোমার সাথে রাস্তায় দেখা হলে তোমার হাত দেখে জেনেছি। তুমি হাতমুজা পরোনা কেন? তারপর ঈদের দিন একবার তোমায় জানালায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।
ভালো করে খেয়াল করে নায়রার মনে পড়লো একদিন এই মানুষটাই তাকে কার বাড়ির কথা জানি জিজ্ঞেস করেছিলো।
---আপনি আমার বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছেন?
--- ভালোবাসার মানুষের জন্য অনেককিছুই করতে হয়। এইযে আজ কালো সাজলাম। একটু আগে ডাকাত ও হয়ে গেলাম।
--- আপনি মিথ্যা বলে আমায় বিয়ে করেছেন, আব্বু মিথ্যা আর ধোঁকাবাজি ঘৃণা করেন তিনি তা মেনে নেবেন না।
---উনারা সব জানেন। এমনকি ফেইসবুক, গিফটের কথাও জানেন।
---সেজন্যই শাওমি আমাকে এমন পঁচান পঁচিয়েছে। রাগে নায়রা ভেঁউভেঁউ করে কেঁদে দিলো।
--- এই কৃষ্ণকুমারীকে আমি আজকের পর থেকে কখনও কাঁদতে দেবো না। কথাগুলো বলে আবরার তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে নায়রা তাকে সমানে কিল ঘুসি মারতে থাকলো। একসময় ক্লান্ত হয়ে আবরারের বুকেই হেলিয়ে পড়লো। আর আবরার হাসতে হাসতে গভীর ভালোবাসায় তাকে ধরে রেখে বললো, "তোমায় অনেক ভালোবাসি, আমার কৃষ্ণকুমারী!
(বি দ্রঃ এখানে কৃষ্ণ কালো অর্থে বুঝানো হয়েছে।)
- মেহজাবিন মুন